গ্রামীণফোন সালিশ চায়, অনড় বিটিআরসি

43

অমীমাংসিত পাওনা আদায়ের জন্য ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ সীমিত করার পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক ও বেআইনি’ হিসেবে বর্ণনা করে সালিশের মাধ্যমে নিরীক্ষা দাবির ‘গঠনমূলক’ নিষ্পত্তি চেয়েছে দেশের সবচেয়ে বেশি গ্রাহকের মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। তবে টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি তাদের অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানিয়ে বলেছে, আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে সালিশের (আরবিট্রেশন) কোনো সুযোগ নেই। পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ব্যান্ডইউথ সীমিতই থাকবে।
বিটিআরসির দাবি, গ্রামীণ ফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং আরেক মোবাইল ফোন অপারেটর রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের। তাগাদা দেওয়ার পরও ওই টাকা পরিশোধ না করার যুক্তি দেখিয়ে গত ৪ জুলাই গ্রামীণফোনের ব্যান্ডইউথ ক্যাপাসিটি ৩০ শতাংশ এবং রবির ১৫ শতাংশ সীমিত করতে ইন্টারনেট গেইটেওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেয় বিটিআরসি।
গতকাল রবিবার হোটেল সোনারগাঁয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানান গ্রামীণ ফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফোলি। তিনি বলেন, বিটিআরসির নির্দেশনাটি এমনভাবে দেওয়া হয়েছে, যাতে নেটওয়ার্কের অধীনে থাকা গ্রাহকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, গ্রামীণফোনের ওপর ‘চাপ’ তৈরি হয়। এ নির্দেশনার ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং সংশ্লিষ্ট আইআইজি অপারেটরদের ওপর। কারণ নির্দেশনার ফলে রাজস্ব আয় কমার পাশাপাশি ব্যবসায়িক সুযোগ হারাবে প্রতিষ্ঠানগুলো, যদিও পুরো বিষয়টির ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই’। খবর বিডিনিউজের
নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন ভূমিকা ‘অনাকাক্সিক্ষত’ মন্তব্য করে গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, ‘এ নির্দেশনা বাংলাদেশের মানুষ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। আমরা বিটিআরসিকে এ নির্দেশনা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করছি এবং সেইসাথে সালিশ আইন ২০০১-এর অধীনে অমীমাংসিত অডিট দাবির নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করতে অনুরোধ করছি’। অডিট দাবির বিষয়ে নিষ্পত্তির জন্য গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে গত ২৩ জুন বিটিআরসিকে একটি সালিশ নোটিস পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ফোলি বলেন, ‘নোটিসের বিষয়ে এখন পর্যন্ত নীরব ভূমিকা পালন করছে বিটিআরসি’।
ব্যান্ডইউথ সীমিত করার নির্দেশের বিরুদ্ধে গ্রামীণফোন আদালতে যাবে কি না- এই প্রশ্নে মাইকেল ফোলি বলেন, ‘অমীমাংসিত পাওনার বিষয়ে আমরা আদালত যেতে চাই না, আরবিট্রেশনের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করতে চাই’।
অডিট আপত্তি নিয়ে গ্রামীণ ফোন সালিশ চাইলেও ব্যান্ডউইথ সীমিত করার নির্দেশনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে কোম্পানির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। ব্যান্ডইউথ সীমিত করার জন্য গ্রামীণফোনের কি ধরণের আর্থিক ক্ষতি হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারপ্রাপ্ত সিএমও মোহাম্মদ সাজ্জাদ হাসিব বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে, তবে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি’।
গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেন, ‘বিষয়টি আমরা ঝুলিয়ে রাখতে চাই না’। আরবিট্রেশনের মাধ্যমে মীমাংসা হলে কত টাকা গ্রামীণফোনকে দিতে হতে পারে- এ প্রশ্নে হোসেন সাদাত বলেন, ‘তারা যে দাবি করেছে তা হয়তো হবে না, আরবিট্রেশন শুরু হলে সেখান থেকে আর ফিরে আসার সুযোগ নেই’।
তবে বিটিআরসি বলছে, আইন অনুযায়ী এ ধরনের বিষয়ে সালিশ বা আরবিট্রেশনেরই সুযোগ নেই। গ্রামীণফোনের সংবাদ সম্মেলনের পর বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক কমিশনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন। তিনি বলেন, ‘টিআরসির আইন অনুযায়ী আরবিট্রেশনের কোনো উপায় নেই, তবে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। পাওনা টাকা অপারেটরদের দিতেই হবে’।
এখন আইনে না থাকলেও এ ধরনের বিরোধ মীমাংসার জন্য যে আরবিট্রেশনের সুযোগ থাকা উচিৎ সে কথা বিটিআরসি প্রধানও স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আরবিট্রেশনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে আইন সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে’। তবে আইন সংশোধনের ওই প্রক্রিয়া শেষ হতে ‘দীর্ঘ সময়’ লেগে যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গ্রামীণফোন সালিশের মাধ্যমে সুরাহা করার নামে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে চায় জানিয়ে বিটিআরসি প্রধান বলেন, ‘আমাদের সাথে আলোচনার পথ খোলা আছে। তারা যে কোনো সময় আসতে পারে’। টাকা না পেলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ‘বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত, পরবর্তীতে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কি করা যায়’।
ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিটিআরসি কমিশনার রেজাউল কাদের বলেন, ‘এ পদক্ষেপে গ্রাহকদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে, সেজন্য বিটিআরসির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি’।
আইন অনুযায়ী এ ধরনের ক্ষেত্রে অপারেটরের লাইসেন্স বাতিলসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে আইআইজি অপারেটরদের পর এবার রাষ্ট্রায়াত্ত¡ টেলিকম কোম্পানি বিটিসিএলকেও গ্রামীণ ফোন ও রবির ব্যান্ডউইথ কমাতে নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি।
বিটিসিএলকেও গ্রামীণফোনের ব্যান্ডইউথ ক্যাপাসিটির ৩০ শতাংশ এবং রবির ১৫ শতাংশ সীমিত করার নির্দেশ দিয়ে তা অবিলম্বে কার্যকর করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।