গৃহকর বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি ক্যাব’র

35

 

গৃহকর বৃদ্ধি ও কর মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে কর আদায়কে জনবান্ধব করার দাবি জানিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি।
গতকাল রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু ও সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান প্রমুখ এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, গৃহকর পুনঃমূল্যায়নের নামে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকায় গৃহকরের পরিমান ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ আশি হাজার টাকায় হওয়া, ভাড়া আদায়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের প্রক্রিয়ার কারণে সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ির মালিকের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতো কর বৃদ্ধি যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি গৃহকর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় সিটি করপোরেশনের একশ্রেণির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এভাবে গৃহকর বৃদ্ধি হলে পুরো দায়ভার গিয়ে পড়বে ভাটাটিয়াদের ওপর। করোনাসহ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে মানুষ এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, নানা করের ভারে জর্জরিত। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের গৃহকর ১০গুনের বেশী বৃদ্ধি মানুষের ভোগান্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। যা নগরবাসীর জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই চলমান গৃহকর আদায় প্রক্রিয়া বন্ধ করে বাড়িভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর মূল্যায় না করে, সম্পত্তির অবস্থান, বর্গফুট, গুণগত মান এবং কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যই হতে হবে গৃহকর নির্ধারণ পদ্ধতি।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, এক লাফে বিপুল পরিমাণ কর আদায় যেভাবে গ্রহনযোগ্য নয়। ইতিপূর্বে ক্যাব চট্টগ্রামের সাবেক মেয়রগণের সাথে বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে মতবিনিময়ের সময় কর সিটি কর্পোরেশনের কর ব্যবস্থাপনায় ত্রæটির কথা উত্থাপন করলেও তার কোন উন্নয়ন হয়নি। হোল্ডিং ট্যাক্স মূল্যায়নের সময় বাড়ির মালিকের উপস্থিতিতে তথ্য যাচাই দরকার ছিল।অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রতিবছর সিটিকর্পোরেশন এর রাজস্ব বিভাগের লোকজন বিভিন্ন বাড়ির মালিককে বিশাল বিশাল অংকের হোল্ডিং ট্যাক্স এর নোটিশ দিয়ে থাকেন এবং কর্পোরেশনে গিয়ে আপিল করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেখানে আপস ফর্মুলায় নোটিশের ১/৩ ভাগ বা যে যেভাবে পারে রাজস্ব বিভাগের সং¯িøষ্ট সকলকে খুসি করতে পারলেই এখান থেকে রেহাই পাওয়া যায়। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে নীতিমালা না মেনে চলার কারনে ১০ গুনের বেশী হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের নোটিশ দেয়া হচ্ছে এবং পরবর্তীতে আপোষরফার মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বাড়িভাড়া নিয়ে ভাড়াটিয়ারা প্রতিনিয়ত হয়রানির সম্মুখিন হচ্ছে। যে সমস্ত সমস্যা গুলি আছে তার মধ্যে প্রতি বছর বছর বিনা কারণে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, চুক্তিপত্র ছাড়া বাড়িভাড়া প্রদান, রশিদ ছাড়া ভাড়া গ্রহণ, গৃহকর, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য চার্জ আদায়, বিল না দিয়ে বিলের অর্থ দাবি, বিনা নোটিশে বাড়ি ছাড়তে বলা, রাতে বেলায় বাসা ঢুকতে দারোয়ান কর্তৃক অসযোগিতার কারণে মহানগরীতে লক্ষ লক্ষ ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালাদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। ভাড়টিয়াদের হয়রানি লাগবে সরকারি কোন কর্তৃপক্ষ নেই, যেখানে এ বিষয়ে অভিযোগ নিস্পত্তি করা যায়।
অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন ও কর বিভাগের একশ্রেণির অসৎ কর্মচারীর দৌরাত্ম, এসেসমেন্ট, হোল্ডিং নম্বর নাই ও মিথ্যা তথ্য প্রদান, হোল্ডিং ট্যাক্স এর জন্য বিশাল অংকের নোটিশ প্রদান, যেটি পরবর্তীতে অংকের ফিগার কমলেও দায়ভার সবকিছুই ভাড়াটিয়াদের ঘাড়েই পড়ে। সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স এর জন্য আপিল আবেদন কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরা বসে বিষয়গুলি নিস্পত্তি করলেও সেখানে ভোক্তাদের কোন প্রতিনিধি থাকে না আর বিষয়টি অনেকটাই দেনদরবারের মতোই। ক্যাব সং¯িøষ্ট সকল পক্ষের উপস্থিতিতে গণশুনানির ব্যবস্থার দাবি করলেও তা কার্যকর হয়নি।
এছাড়া বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ খাতে সরকারের পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন ও ক্রেতা-ভোক্তা হিসাবে প্রতারিত হলে যথাযথ আইনি ক্ষতিপূরণ পাবার জন্য আইনি আশ্রয় লাভের জন্য বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ এর আশু সংশোধণী দরকার। নগরীতে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের ডাটাবেস থাকা না থাকায় হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য ট্যাক্স আদায়ে প্রতিনিয়তই ভোগান্তির মাত্রা বাড়ছে। তাই সিটি কর্পোরেশন গৃহকর আদায়ে নোটিশ প্রদান প্রক্রিয়া, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ, আদায় ইত্যাদি সব প্রক্রিয়া ডিটিজাইজড করা হলে এ খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম অনেক কমে যাবে।