গৃহকর আদায়ে অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা

49

পাঁচ বছর ধরে গৃহকর আদায় বেড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)। এমনকি গত দুই অর্থবছরে বিগত দশকের চেয়ে সর্বোচ্চ গৃহকর আদায় হয়েছে। আদায়ের হার বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হিসেবে অনেক দূরে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার করোনার দুর্যোগের কারণে শেষ কয়েকমাস সবধরনের অর্থ আদায় বন্ধ ছিল। তারমধ্যেও গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪ কোটি টাকা বেশি গৃহকর আদায় হয়েছে।
তবে আদায়কৃত গৃহকর এখনও লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ অতিক্রম হয়নি। ফলে বিগত বছরের তুলনায় বেশি আদায় করেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে চসিকের রাজস্ব বিভাগটির কর্তারা। আইনের গ্যাঁড়াকলে পড়ে অবাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতবছরে অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৪৬ কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আদায় হয়েছে ১৩৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫ হাজার ৩৬৩ টাকা। তবে গত অর্থবছর থেকে আদায় বেড়েছে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ২০২ টাকা। এবার লক্ষ্যমাত্রার ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশ গৃহকর আদায় হয়েছে।
এবার নগরীর আটটি সার্কেলের ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৩৯ হোল্ডিং থেকে এসব কর আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় হয়েছে ৬১ কোটি ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫৩ কোটি ও সরকারি থেকে ৭৬ কোটি ৭ লাখ ৬৮ হাজার ১০ টাকা।
চসিকের রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছর সরকারি-বেসরকারি মিলে ৩৩৬ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৪৪৪ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গৃহকর আদায় হয়েছে ১৩৩ কোটি ৫৪ লাখ ৩৩ হাজার ১৬১ টাকা। আদায়কৃত অর্থ লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট ১১৮ কোটি ৮৬ লাখ ৩ হাজার ৩১৬ টাকা ৬৩ পয়সা হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হয়েছিল। সেবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১১ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ১৯০ টাকা। আদায়কৃত অর্থ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ।
২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ১০৩ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৭ টাকা ৯৯ পয়সা। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৪৭ কোটি ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৩ টাকা। আদায়কৃত অর্থ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন ছিল ৩৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। ওই বছর ৩৩৭ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫২ টাকার বিপরীতে ১১২ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৫ টাকা ৫৭ পয়সা হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হয়।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (্উপসচিব) মুফিদুল আলম জানান, গত অর্থ বছরে শেষের সময়টা করোনা দুর্যোগের কারণে কঠিনভাবে কাটাতে হয়েছে। চসিকের সবকটি আয়ের উৎস বন্ধ ছিল। মূলত বছরের সবচেয়ে বেশি গৃহকর আদায় হয ওই সময়টাই। তারপরও আমাদের চেষ্টায় গতবারের তুলনায় প্রায় ৪ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্র অর্জন করতে না পারার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করতে হয়, তা মূলত আইনে গ্যাঁড়াকলে পড়ে তৈরি হয়। তা বাস্তবিকপক্ষে বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। কেননা অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের একসময় ভালো অবস্থান ছিল, গৃহকরের পরিমাণটাও অনেক বেশি ছিল। সেরকম প্রায় শখানেক প্রতিষ্ঠান এখন গৃহকর দেওয়ার মত পরিস্থিতি নেই। কিন্তু বছরের পর বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে। সেই হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। তাই বাস্তবিক পক্ষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে এবারের ৩৯ শতাংশটা অনেক বেশি হয়ে যেত বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা।