গুলাব যাবে ওড়িশা ও অন্ধ্রে

2

এম এ হোসাইন

ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ আজ সোমবার বিকালের মধ্যে ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ-দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টির তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না চট্টগ্রামে। তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে। ঘূর্ণিঝড়টির মাধ্যমে গত তিনদিনের ভাপসা গরমের অবসান হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ ঘণ্টায় ১৮ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে। বাংলাদেশ সময় রবিবার মধ্যরাতে এ ঘূর্ণিঝড় অন্ধ্রপ্রদেশের কালিঙ্গপাটনাম ও দক্ষিণ উড়িশার গোপালপুরের মধ্যবর্তী কোনো স্থান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করার কথা। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে ঘণ্টায় একটানা সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৭৫ থেকে ৮৫ কিলোমিটার, যা ৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।
বলা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে ওঠে আসার পরও প্রায় একই গতি নিয়ে ছয় ঘণ্টার মতো তান্ডব চালাবে। তারপর ধীরে ধীরে আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সোমবার শক্তি হারিয়ে ফেলবে। প্রথমে স্থল নিম্নচাপ ও পরে লঘুচাপে পরিণত হয়ে শান্ত হবে। আর উপকূল অতিক্রমকালে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম, ভিশাকাপাটনাম ও বিজিয়ানাগরম এবং দক্ষিণ উড়িশার গঞ্জম ও গজপতি জেলায় তাণদব চালাবে। এছাড়া আরও সাতটি জেলায় নানা মাত্রার ঝড়ের শক্তি নিয়ে আঘাত হানবে। ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় ভারতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার এরই মধ্যে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ ও পূর্বভাস কর্মকর্তা শেখ হারুন-অর-রশীদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে থেমে যাচ্ছে। থেমে থেমে অগ্রসর হওয়ার কারণে আঘাত হানার সঠিক সময় বলা যাচ্ছে না। আমরা ধারণা করছি, সোমবার বিকালে সেটি আঘাত হানতে পারে। আবার ভারতের পক্ষ থেকে রবিবার মধ্যে রাতে বলা হয়েছে। থেমে থেমে অগ্রসর হওয়ার কারণে এটি সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে চট্টগ্রামে হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে আঘাত হানার পর ভারি বৃষ্টিপাতও হতে পারে। ভাপসা গরম ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর কেটে যাবে।
বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার কোনো শঙ্কা না থাকলেও সাগর উত্তাল রয়েছে। ফলে সমুদ্রবন্দরগুলোতে তোলা হয়েছে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূল এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত ও হালকা দমকা বাতাস বয়ে যেতে পারে। এছাড়া সাগরে নামার ক্ষেত্রে মাছ ধরার নৌকা ও সব ট্রলারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে ঘূর্ণিঝড়টির উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করার কথা জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, রবিবার দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল। সে সময় গুলাবের অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকার এবং গভীর সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে শনিবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেওয়ার পর ‘গুলাব’ নাম পায়। এটি পাকিস্তানের দেওয়া নাম। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক হয়।
এর আগে বঙ্গোপসাগরে সর্বশেষ যে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হয়েছিল, সেটির নাম ইয়াস। গত মে মাসে এটি ভারতের ওডিশায় আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তার আগে যে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হেনেছিল তার নাম ছিল ‘আম্পান’।