গুইমারায় ক্লাস চলাকালে পানিতে ডুবে স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ

10

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

খাগড়াছড়ির গুইমারাতে স্কুল চলাকালে পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করেছে স্থানীয়রা। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেছে অভিভাবকগন। গত ১৪ মে জেলার গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেরিন আক্তার বৈশাখী (৭) খালের পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করে। এ ঘটনায় শিক্ষর্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্কুলের শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ১৪ মে স্কুলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষে স্কুলের পাশের খালে কাপড় পরিস্কার করতে গিয়ে পানিতে ডুবে যায় মেহেরিন আক্তার বৈশাখী। এ সময় তার সাথে থাকা অপর এক শিক্ষার্থী বৈশাখীকে একটি লাঠির সাহায্যে পানি থেকে টেনে তুলতে ব্যর্থ হলে দৌঁড়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বাবুলকে বিষয়টি অবহিত করে। এসময় প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বাবুল বিষয়টি ততটা গুরুত্ব না দিয়ে অন্য ৪-৫ জন শিক্ষার্থীকে ডেকে খালে গিয়ে শিক্ষার্থী বৈশাখীকে খুজে দেখার নির্দেশ দেন। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে বেশ কজন ছাত্র খালের আশপাশে বৈশাখীকে খুজে না পেয়ে পুনরায় প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বাবুলকে বিষয়টি অবহিত করে।
এরপর স্কুলের এক মহিলা শিক্ষিকা বৈশাখীর পিতা জামাল মেম্বারকে মোবাইলে তার মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানান এবং সকল নাটকিয়তা শেষে ঘটনার অনন্ত ২০ মিনিট পর খালের পাশে যান প্রধান শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা জানান, খালের পাশে গিয়ে কাপড় ভিজে যাওয়ার ভয়ে কোন শিক্ষক পানিতে নামেনি বরং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের খালের পানিতে নেমে বৈশাখীকে খুঁজে দেখতে বলেন। একপর্যায়ে তাকে উদ্ধার করে গুইমারা বিজিবি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের স্কুলে দপ্তনি না থাকায় শিক্ষকদের ব্যবহৃত বাথরুম পরিষ্কার, স্কুলের আঙ্গিনার ঝাড়ু দেয়া, গাছের পাতা কুড়ানো, শিক্ষকদের পানি সরবরাহ করা সহ স্কুল ছুটির আগে ও পরে ক্লাসের দরজা জানালা বন্ধকরা সব কিছু ছাত্রদের করতে হয়।
একাধিক শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলে ক্লাস শুরু হয় সকাল ৯টায়, শিক্ষকরা স্কুলে আসেন যথা সময়ে, অথচ দূর দুরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা ভোরে স্কুলে রওয়ানা দিয়ে অনেক সময় ঘন্টা খানেক আগে স্কুলে পৌঁছে যায়। কিন্তু স্কুলের অফিস সহকারী না থাকায় ছাত্র ছাত্রীদের দিয়ে মাঝে মধ্যে দেরীতে শ্রেণিকক্ষ খোলা হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের বাথরুম ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়ে অনেক সময় বাধ্য হয়ে পাশের খালের পাড়ে গিয়ে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয়, আর এতে করেই দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তৈরী হয়। নিহত শিক্ষার্থী মেহেরিন আক্তার বৈশাখীর পিতা মো. জামাল জানান, পড়া লেখা শিখে মানুষের মত মানুষ হওয়ায় জন্য আমার ফুটফুটে মেয়েটাকে স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। কখনো ভাবিনি আমার অবুঝ মেয়েটা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরবে। তিনি এ ঘটনায় শিক্ষকদের অবহেলাকে দায়ী করে এর বিচার দাবি করেন। এ বিষয়ে গুইমারা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কৃষ্ণ লাল জানান, আমি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা শোনার পর স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছি এবং শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পিছনে প্রধান শিক্ষকের অবহেলার বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। অতি দ্রæত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।