গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে বাড়তে পারে শীত

16

তুষার দেব

আগামী কয়েকদিনে রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে। তাতে বাড়তি রসদ জোগাতে পারে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এরইমধ্যে চলতি শীত মৌসুমে প্রথমবারের মত দেশের উত্তরাঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে এসে ঠেকেছে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখনও ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই উঠানামা করছে। আপাতত চট্টগ্রাম অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কোনও আলামত বিদ্যমান নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রাম তুলনামূলকভাবে পাহাড়ি ও উপক‚লীয় এলাকা হওয়ায় এই অঞ্চলে শীতল হাওয়ার প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই চট্টগ্রামে সহসা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কোনও আলামত আপাতত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে আগামী কয়েকদিনে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা আরও হ্রাস পাবে। এতে রাতে শীতের অনুভূতি খানিকটা বাড়তে পারে। পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পুর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কয়েক জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি অথবা হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। নওগাঁ ও মৌলভীবাজার জেলাসহ রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। পরবর্তী দু’দিন বা আটচল্লিশ ঘন্টার আবহাওয়ার অবস্থায় রাতের তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফে। আর সর্বনিম্ন ছয় দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়ায়। চট্টগ্রামের সবকটি জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে।
এর আগে আবহাওয়ার তিনমাস মেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ডিসেম্বরের পর চলতি জানুয়ারি মাসে দেশে দুই বা তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে; যার মধ্যে একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। এছাড়া এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। আর পরের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দেশে একটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দিনের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। এ মাসের শেষার্ধে কোথাও কোথাও এক থেকে দু’দিন শিলাবৃষ্টিসহ বজ্রঝড়ের শঙ্কা রয়েছে।
প্রকৃতিপ্রেমী বা আবহাওয়াদিরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি নিজের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য ও আচরণে বর্ষপঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারে ছাপানো মাসভিত্তিক ঋতু বা কালের হিসাব মেনে চলাকে শিকেয় তুলে রেখেছে সেই কবে। মৌসুমের হিসাবেও সময়ের চেয়ে এখন অসময়ের চর্চাই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরপরও ষড়ঋতুর দেশে হেমন্ত মানেই প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। পালাবদলের এ দোলায় কেবল জীবজগতই নয়, গা ভাসায় বৃক্ষরাজীও। বদলে যায় মানুষের জীবনধারা। ঝরে পড়ে গাছের পত্রপল্লব। শহর কিংবা গ্রামে ধুনকরদের ব্যস্ততা বাড়ে। লেপ-তোষক তৈরি ও মেরামত কিংবা শীত মোকাবেলার প্রস্তুতির উপযুক্ত সময় হেমন্ত। প্রকৃতিতে ধানের ডগা কিংবা দুর্বাঘাসের মাথায় জমতে শুরু করে শিশির বিন্দু। নদী অববাহিকায় আবছায়া হয়ে নামে হালকা কুয়াশার চাদর। কাল বা ঋতুচক্রের হিসাবে পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল হলেও দেশে শীত শুরু হয় কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে। শরতের বিদায়ে হেমন্তের আবির্ভাব। দিনের দৈর্ঘ্য হ্রাস। রাতের তাপমাত্রা কমতে থাকা- এ যেন দুয়ারে শীতেরই কড়া নাড়া।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী ৫০ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত সেটাই দেশের শীত মৌসুমের ইতিহাসে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটাকে ‘মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ’ এবং আট ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে ‘মৃদু শৈত্যপ্রবাহ’ বলেন। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর পেরিয়ে নিচের দিকে নামলে তাকে ‘তীব্র শৈত্যপ্রবাহ’ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।