গাড়ি চুরি প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

16

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে বৈধ যানবাহনের সাথে পাঁচ হাজারেরও বেশি চোরাই সিএনজি চালিত অটোরিক্স চলাচল করছে। সম্প্রতি নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পৃথক দু’টি অভিযানে ১৪টি চোরাই সিএনজি চালিত ট্যাক্সিসহ সংঘবদ্ধ চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। পত্রিকার প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
সারাদেশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখাযায় বিভিন্ন স্থান হতে চোরচক্র মিনিট্রাক, সিএনজি অটোরিক্সা, মটর চালিত রিক্সা, মোটর সাইকেল ইত্যাদি যানবাহন চুরি করে নাম মাত্র মূলে বিক্রয় করে দেয়। সমগ্র দেশে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সবধরনের চোরাই গাড়ি সস্তায় ক্রয় করে বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে চোরাই পণ্য বিভিন্ন ক্রেতার কাছে চড়ামূল্যে বিক্রি করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন চোরাই চক্রের অপকর্মের কারণে অনেক গাড়ির মালিক সমূহ ক্ষতির সম্মুখিন। দেশে এরকম অপকর্ম দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে দেশের বহু নিরীহ গাড়ির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা সভ্য সমাজের কাম্য নয়। দেশে প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি থামানো যাচ্ছে না। কেননা এর পেছনে কিছু অসাধু লোক, কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মচারি কর্মকর্তা জড়িত থাকার কথা দৈনিক পূর্বদেশের প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করলে গাড়িচুরি কমে আসতে বাধ্য। চোরের চেয়ে চোরাই মাল যারা হজম করে, অসাধু ব্যবসা করে, গাড়ির অবৈধ কাগজপত্র তৈরি করে সেগুলো রাস্তায় চলাচল নির্বিঘœ করে দেয় তারা আরো বেশি অপরাধী। তাছাড়া তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে সংযুক্ত থাকছে কিছু অসাধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। বিভিন্ন স্থান হতে চুরি করে নিয়ে আসা গাড়ি চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু অসাধু গাড়ি ব্যবসায়ী নানা কৌশলে অবৈধ কাগজপত্র সৃষ্টি করে রমরমা ব্যবসা করছে। যে সকল চোরাই চক্রের সদস্য সম্প্রতি নগর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে তাদের পুঁজি করে সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে চোরাই চক্রের রাঘববোয়ালরা অবশ্যই ধরা পড়বে। দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে চোর ও চোরাই মালামাল নিয়ে ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা কোন কঠিন কাজ নয়।
বিগত ১৮ আগস্ট ডিবির উত্তর বিভাগের আওতাধীন ৩৪ নম্বর টিমের সদস্যরা নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালী থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যে সকল চোরাই সিএনজি পরিচালিত টেক্সি উদ্ধার করেছে সেগুলোর সাথে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের মাধ্যমে নগরীর মধ্যে যে সকল অসাধু ও অপরাধীচক্র এহেন অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করা সহজ। এ রকম অপরাধী চক্রের শক্তির উৎস ধ্বংস করে দেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। তদন্তে যদি কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্য ধরা পড়ে তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। দেশের যেকোন অপরাধমূলক কর্মকাÐের বিপরীতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নানা গেঁড়াকলে আবদ্ধ হয়ে কার্যকর হচ্ছেনা বলেই দেশে গাড়িচুরি তথা অপরাধমূলক কাজ বেড়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার জন্য আইন ও শাস্তির দীর্ঘসূত্রতা অনেকাংশে দায়ী। যেকোন অপরাধীকে বাঁচানোর আইনী অপকৌশল চিহ্নিত করে দ্রæত যে কোন অপরাধের বিচার ব্যবস্থাকে আরো সহজতর করা সময়ের দাবি।
দেশের আইনের দীর্ঘসূত্রতা অপরাধ প্রবণতাকে একপ্রকার উস্কে দিচ্ছে। দেশের আদালতগুলোতে কোন ধরনের অপরাধের বিচার কত দিনের মধ্যে শেষ করা হবে তার কোন গাইডলাইন আদালত / বিচার ব্যবস্থায় কার্যকর নেই। আইনের দীর্ঘসূত্রতা এবং অপকৌশলের মারপেঁচে দীর্ঘদিন পর ক্ষতিগ্রস্তরা অসহায় হয়ে পড়ে। এমন বিচার ব্যবস্থা দেশের অপরাধ দমনের সহায়ক হতে পারে না। তাই গাড়ি তথা সিএনজি অটোরিক্সা চুরি এবং হোন্ডাচুরি রোধে এ সকল অপরাধের বিচার দ্রæত শেষ করার বিধান প্রণয়নও জরুরি। তবে শর্ত থাকে যে, দেশের আইনশৃঙ্খলার সাথে জড়িতদের সৎ, নিষ্ঠা ও আন্তরিক করা না গেলে এদেশের কোন অপরাধ দমন সম্ভব নয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সৎ,যোগ্য ও চৌকস করে গড়ে তোলা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য একান্তভাবে জরুরি। আমরা চাই দেশে শুধু গাড়ি চুরি না, যেকোন স্থানে যেকোন চুরির প্রবণতা হতে দেশের মানুষ মুক্ত হউক। শান্তি ফিরে আসুক দেশের সকল সেক্টরে।