গাড়ি আমদানিতে চট্টগ্রামের চেয়ে মোংলা যে কারণে এগিয়ে

33

ফারুক আবদুল্লাহ

তুলনামূলক কম খরচে গাড়ি আমদানি ও গাড়ি রাখার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা থাকার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে মোংলা বন্দর। এসব কারণে আমদানিকারকদের মাঝে মোংলা বন্দর ব্যবহারের আগ্রহও বেড়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে মোট গাড়ি আমদানির ৬০ শতাংশই এসেছে মোংলা বন্দর দিয়ে।
আমদানিকারকরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে সড়কপথে ঢাকার খুব কাছে হয়ে গেছে মোংলা বন্দর। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ২৬৪ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু চালুর ফলে ঢাকা থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব কমেছে ১৭০ কিলোমিটার। দূরত্ব কমায় আমদানি করা গাড়ি মোংলা থেকে ঢাকায় আনতে আমদানিকারকদের জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয় কমে আসবে। সেই সঙ্গে অনেক সময়ও বাঁচবে। এসব কারণে এই বন্দর দিয়ে গাড়ির ব্যবসায় নতুন আশা দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে মোট গাড়ি আমদানি হয়েছে ৩৪ হাজার ৭৮৩টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসেছে ১৩ হাজার ৯৭৫টি। বাকি ২০ হাজার ৮০৮টি গাড়ি মোংলা বন্দর দিয়ে এসেছে। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরে মোট আমদানি করা গাড়ির ৬০ ভাগই মোংলা বন্দর দিয়ে এসেছে।যে কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দর ব্যবহারে আমদানিকারকদের আগ্রহ বেড়েছে : মোংলা বন্দরের চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাড়া বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি আমদানির পর গাড়ি প্রতি দৈনিক ভাড়া ১ হাজার টাকা দিতে হয়। সেই ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরে ৬০০ টাকায় গাড়ি রাখা যায়। মূলত এটিই অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন আমদানিকারকরা। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দরে গাড়ি রাখার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর হলো খুবই ব্যস্ততম বন্দর। এখানে বাণিজ্যিকভাবে নানাধরনের চাপের কারণে বেশিদিন আমদানি করা গাড়ি রাখা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে মোংলা বন্দরে আমদানিকারকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, গাড়ি রাখার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া, স্বল্প সময়ের মধ্যে গাড়ি খালাস, গাড়ি রাখার জন্য পর্যাপ্ত উন্নতমানের শেড ও ইয়ার্ড রয়েছে। এ কারণে মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানিকারকেরা গাড়ি আমদানিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এছাড়া পদ্মা সেতু চালুর ফলে এ বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি আরও বাড়বে। কারণ মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় এখন আমদানি করা গাড়ি মোংলা থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
গাড়ি আমদানিকারক ও হোসাইন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় মোংলা বন্দরে ভাড়া কম। আমদানি করা গাড়ি মোংলা বন্দরে রাখার সুযোগ-সুবিধা বেশি। আর চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দর অনেকটাই ফাঁকা এবং ব্যস্ততাও কম। এ কারণে গাড়ি আমদানিতে মোংলা বন্দরের দিকে আগ্রহ ব্যবসায়ীদের বেশি।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে গাড়ি আমদানি আরও বাড়বে। তবে আমরা চাই চট্টগ্রামকেন্দ্রিক গাড়ি আমদানি করতে। কিন্তু খরচ বেশি হওয়াতে সম্ভব হয় না। মোংলা দিয়ে গাড়ি আনলে ঢাকায় বিক্রি করতে পারলে সুবিধা বেশি। কিন্তু আমাদের চট্টগ্রামের আমদানিকারকদের একটু খরচ হয় বেশি। তারপরও দুই দিকে ব্যালেন্স করে গাড়ি আমদানি করে থাকি।
একইভাবে গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সভাপতি ও হক’স বে অটোমোবাইলসের মালিক আবদুল হক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দরের ভাড়া কম এটাই হলো প্রধান আকর্ষণ। আর চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় মোংলা বন্দরে কার্গোর চাপ কম থাকায় সহজে ও স্বল্প সময়ে গাড়ি আমদানি করা যায়। এছাড়া সরকারও চায় যে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে দেশের অন্য কোনো বন্দরের তুলনায় হয় না। এই বন্দরের সক্ষমতা ভালো, উন্নতমানের যন্ত্রপাতি রয়েছে।
তিনি বলেন, বলতে গেলে মোংলা বন্দর একসময় প্রায় অচল ছিল। ২০০৯ সালে গাড়ি আমদানির মাধ্যমে মোংলা বন্দরে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। তখন নদীর পথে আমদানি করা গাড়ি নিতে খরচ ও সময় বেশি লাগতো। এখন পদ্মা সেতু চালুর ফলে ঢাকার সাথে দূরত্ব কমে যাবে। আগের তুলনায় খরচও কমে আসবে। তাছাড়া দক্ষিণ বঙ্গের অর্থনীতির জন্য মোংলাসহ পায়রা বন্দরকে আরো গতিশীল করার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।