গানের নাম ‘আজম খান’

158

কিংবদন্তি পপসম্রাট আজম খানের অনুসারীর সংখ্যা অগণিত। তাদেরই একজন তরুণ সংগীতশিল্পী সৌর। ‘গুরু’র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি প্রকাশ করেছেন ‘আজম খান’ শিরোনামে তার গাওয়া মিউজিক ভিডিও। ‘আমি আমার মনে মনে গাইছি একটা গান/ আমি জানি এই গানটা শুনছেন আজম খান/ আমার গানে আজম খানের হাত ধরে দাঁড়ান/ জিম মরিসন পিট সিগারের সঙ্গে বব ডিলান’ এমন কথায় ‘আজম খান’ শিরোনামে গান করেছেন তিনি। প্রয়াত আজম খানকে উৎসর্গ করে গানটি লিখেছেন কথাসাহিত্যিক ও প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষ। এতে সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন সৌর। ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাঢোলের ইউটিউব চ্যানেলে উপভোগ করা যাচ্ছে গানটি। একই সঙ্গে গানটি থাকছে জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বাংলাফ্লিক্স, রবিস্ক্রিন, এয়ারটেল স্ক্রিন ও টেলিফ্লিক্সে। ‘আজম খান’ গানটি প্রসঙ্গে সৌর বলেন, ‘আমাদের আদর্শ শিল্পী সর্বজন-শ্রদ্ধেয় আজম খান। তার প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না। দেশ ও গানের জন্য তার ত্যাগ অপরিসীম। গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই গানটি প্রকাশ করেছি।’ আজম খানের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর কলোনির ১০নং সরকারি কোয়ার্টারে। তার পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। বাবা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন।
১৯৭০ সালে টিএন্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আজম খান। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটি সেকশনের ইনচার্জ। তিনি সেকশন কমান্ডার হিসেবে ঢাকা ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তার ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’ দেশব্যাপী সংগীত জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সালে বন্ধু নিলু আর মনসুরকে গিটারে, সাদেককে ড্রামে আর নিজেকে প্রধান ভোকাল করে অনুষ্ঠান শুরু করেন। ওই বছরই তার ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ আর ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি বিটিভিতে প্রচার হয়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। পরবর্তীতে বিটিভিতে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ গান গেয়ে হইচই ফেলে দেন আজম খান। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘আমি যারে চাইরে’, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘একসিডেন্ট’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি। এদিকে ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নামে হিরামনের একটি নাটকে কালা বাউলের চরিত্রে এবং ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ২০০৩ সালে ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম মডেল হন। এরপর পরবর্তীতে বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে দেখা যায় তাকে। সর্বশেষ ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপন করেন। ১৯৮১ সালের ১৪ই জানুয়ারি সাহেদা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় আজম খানের। সহধর্মিণী মারা যাওয়ার পর থেকে একাকী জীবন কাটান এ পপসম্রাট। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে ইমা খান, মেজো ছেলে হৃদয় খান ও ছোট মেয়ে অরণী খান। ২০১১ সালের ৫ জুন দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ রোগভোগ শেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।