গাছ লাগাই-জীবন বাঁচাই

53

 

মহান আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টিই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গাছ-পালা উদ্ভিদ আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হরেক রকম উদ্ভিদের মহান আল্লাহর বহু নিদর্শন লুকিয়ে আছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জমিনের প্রতি লক্ষ করেনি? আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের বহু উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ উদ্্গত করেছি। নিশ্চয় এতে আছে নির্দশন : কিন্তু (মহান আল্লাহ এত কুদরতের নির্দশন দেখার পরও) তাদের অধিকাংশই ঈমান আনে না।’ (সূরা : তারা, আয়াত : ৭৮)। মহান আল্লাহ প্রতিটি উদ্ভিদকেও ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন উদ্ভিদে মানুষের রিজিক ও রোগ নিরাময়ের প্রতিষেধক রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন স্থানে চাষাবাদের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে ‘তিনিই (আল্লাহ) আকাশ থেকে পানি বর্ষন করেন, অত:পরতা দিয়ে আমি সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি: তারপর তা থেকে সবুজ ফসল নির্গত করি, যা থেকে ঘন শস্যদানা উৎপাদন করি এবং খেজুর বৃক্ষের মাথি থেকে ঝুলন্ত কাঁদি বের করি আর আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি এবং জয়তুন ও আমারও। এরা একে অন্যের সদৃশ ও বিসদৃশ। লক্ষ করো তার ফলের প্রতি, যখন তা ফলবান হয় এবং তার পরিপক্ষতার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করো। ইমানদারদের জন্য এগুলোয় অবশ্যই নির্দশন আছে (সূরা : আনআম, আয়াত : ৯১)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে ‘তোমরা কি ওই বীজগুলো দেখো না, যা তোমরা মাটিতে ফেলে দাও? এগুলো থেকে তোমরা ফসল উৎপাদন করো, না আমি করি?’ (সূরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৬৩-৬৪)। পবিত্র কোরআনের অলৌকিকতা হলো, কোরআন চাষবাদের কথা বলছে, অথচ সেখানে ঐশী চেতনা জাগ্রত করতে চেয়েছে। কোরআনে কথা দেখুন : ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমিই প্রচুর বারিবর্ষণ করি। পরে আমি ভূমি উৎকৃষ্টরূপে বিদারিত করি এবং আমি তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, জয়তুন, খেজুর, বহুবৃক্ষ বিশিষ্ট বাগান, ফলও গবাদি খাদ্য। এটা তোমাদের ও তোমাদের জীবনজন্তুর ভোগের জন্য’ – (সূরা : আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)। আল্লাহ তায়ালার পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির কিছু দৃশ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে এর বিচিত্র প্রকার, বর্ণ, গন্ধ ও সৌন্দর্য দেখে মানুষ পুলকিত হয়, অভিভূত হয়। যেন সব কিছুর উন্নতি, অগ্রগতি ও সক্রিয়তা দেখে মানুষ আল্লাহর কুদরতের কথা স্মরণ করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাহ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য তা ( পানি) দিয়ে জন্মান শস্য, জয়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর ও সবধরনের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নির্দশন (সূরা : নাহল, আয়াত : ১১)। চাষাবাদের উপযোগী করে মহান আল্লাহ এ জমিনকে বহু আগেই সাজিয়ে রেখেছেন। পবিত্র কোরআন বলছে, ‘তুমি ভূমিকে দেখবে শুষ্ক। পরে আমি তাতে বারি (বৃষ্টি) বর্ষণ করলে তা শস্য শ্যামল হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এব তা উদ্গত করে সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ’ (সূরা : হজ, আয়াত : ৫)। মৃত ভূমিকে জীবিত করার জন্য মহান আল্লাহ সুদুর আকাশ থেকে পানিবর্ষ করেন। সেই পানি জমিনকে জীবিত করে তোলে। এই পুনজীবন পুনুরুত্থানের প্রতীক। কোরআন বলছে, ‘আকাশ থেকে আমি বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি। তা দিয়ে আমি সৃষ্টি করি বাগান ও পরিপক্ষ শস্যরাজি ও সমুন্নত খেজুরগাছ, যার মধ্যে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর। এগুলো আমার বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ। বৃষ্টি দিয়ে আমি সঞ্জীবিত করি মৃতভূমিকে। এভাবেই পুনরুত্থান ঘটবে’ (সূরা : কাফ, আয়াত ৯-১১) আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের আলোকে বুঝা যায়, গাছ-উদ্ভিদ মানুষের পরমবন্ধু। পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য গাছ-উদ্ভিদ লাগানোর জন্য তাৎপর্য অনস্বীকার্য। বর্তমান বিশ্বেের সমাজজীবনে এবং বিশ্বের পরিবেশগত ও ভারসাম্যের জন্য গাছ উদ্ভিদ লাগানো জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিরূপ পরিবেশের কারণে সাগরের তলদেশ উপরের দিক উঠছে, ঝড়-ঝঞ্ঝা, দুর্ভোগ-দুর্বিপাক, জলোচ্ছ্বাস, বৈরি হাওয়া, ভূমিকম্প ইত্যাদি দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। ধনী দেশগুলোর অত্যাচারে পৃথিবী বৈরিরূপ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশের বিপর্যয়ে বহুমান হবে বাস্তুচ্যুত, সম্পদ হবে প্রতিনিয়ত ধ্বংস। আমাদের বাংলাদেশ ব-দ্বীপ অঞ্চলে থাকার কারণে পরিবেশগত ঝুঁকিতে বেশি। বন্যা, পাহাড়, ধস, বরফ গলে পানিবৃদ্ধি এবং অতিবৃষ্টির কারণে উপর থেকে আসা পানিতে ডুবে যায় বাংলাদেশ। বিশ্বে পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য গাছ-উদ্ভিদ লাগানো জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। গাছ না থাকলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ত – যা আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। গাছ উদ্ভিদ মানুষের পরম উপকারী বন্ধু। সে আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং সৌন্দর্যে হৃদয় মন ভরে ওঠে। গাছাপালা জীবন বাঁচায় দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। গাছ উদ্ভিদ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
বাতাসে জলীয় বাষ্পধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে আবহাওয়াকে শীতল করে ও প্রচুর বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে। উদ্ভিদাদি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে অধিক উৎপাদনে সাহায্য করে। অঞ্চলভেদে গাছপালা উদ্ভিদ আদি প্রবাহকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করে, গাছপালা-উদ্ভিদ ভূমিকে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। গাছ মূল ভূ-ভাগ ও নতুন সৃষ্ট চরাঞ্চলকে নদীর ভাঙ্গন, বৃষ্টিপাত ও পানিস্ফীতির হাত থেকে রক্ষা করে। গাছ মাটির স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। পানি সংরক্ষণ, বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও বিতরণ গাছপালা নিয়ন্ত্রণ করে। বৃক্ষাদি ঝড়-ঝঞ্ঝা ও সকল ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে মানুষের ঘরবাড়ি সহায় সম্পদ রক্ষা করে। গাছের বৃক্ষরাজির উদ্ভিদের এতসব উপকারী দিক থাকা সত্বেও মানুষ নামের কিছু অমানুষ সচেতনতার অভাবে বা নিজ নিজ সামান্য স্বার্থের জন্য নির্দ্বিধায় গাছপালা বৃক্ষরাজি উদ্ভিদের ক্ষতি করে। গাছ কেটে রান্না-বান্নার কাজে ব্যবহার করে, নানা আসবাবপত্র তৈরি করে, ইটভাটা সহ শিল্প কারখানায় ব্যবহার করে। গাছ কেটে বনাঞ্চল নিঃশেষ করে দেয়। গাছ নিধনের ফলে বাংলাদেশ নয় বিশ্ব পরিবেশে গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আল্লাহর পবিত্র কোরআনের নির্দেশ এবং গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া থেকে জীবন বাঁচাতে, দেশ ও বিশ্ব বাচাতে বর্ষার এদিনে আসুন, আমরা সবাই গাছ লাগাই-পরিচর্যা করি জীবন বাঁচাই, দেশ বাঁচাই, বিশ্ব বাচাই, পৃথিবী বাচাই। আসুন, আমরা বৃক্ষরাজি ধ্বংস না করে প্রতিদিনই গাছ লাগাই। গাছ বৃক্ষরাজি উদ্ভিদ যে আমাদের বন্ধু আমরা এ বন্ধুদের পরিচর্যা করি – তাদের জীবন বাঁচাই – নিজে বাঁচি।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা স্মৃতি পরিষদ