গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ : করোনা মহামারী’তে সেবা

29

বাবুল কান্তি দাশ

মানুষের মহৎ এবং সুখী হবার প্রবণতা সেই বোধশক্তি জাগরিত হওয়া থেকে।যথার্থ শিক্ষা আর প্রশিক্ষণের অভাবে কোথাও কোথাও তা লক্ষ্যে পৌঁছুতে সক্ষম হয় না। আবার কোথাও কোথাও কুসঙ্গের ফলে বিপথগামী হয়ে উঠে। প্রয়োজন হয়ে পড়ে উন্নত আদর্শের অনুশীলন। আদর্শ অনুসরণে মানুষের চিন্তার চৈতন্য ঘটে, আলোকিত হয়।, জ্ঞানকে করে প্রসারিত। মানব প্রেমে গভীর করে দৃষ্টিকে করে বিস্তৃত। অতঃপর আধ্যাত্মিক মুক্তির লক্ষ্যে হয় সমর্পিত। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ মূলত সেদিকে দৃষ্টি রেখে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে।
হযরত বড়পীর গাউসুল আযম আব্দুল কাদের জিলানী জন্ম গ্রহণ করেন ৪৭০ হিজরীতে। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর শুভাগমনের প্রায় পাঁচশত বছর পরে। হযরত বড়পীর গাউসুল আযম আব্দুল কাদের জিলানী ইসলামের পরিচর্যায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেন। যা ছিল প্রকৃত মানুষ হয়ে ত্যাগ আর সেবায় জীবন অতিবাহিত করা। সেই মহান আদর্শকে মানুষের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের পথচলা। হযরত বড়পীর এর ইহলীলা সংবরণের পর তাঁরই ধারাবাহিকতা রক্ষায় যুক্ত হন যুগশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটী। শাহেনশাহ ছিরিকোটির ইন্তেকালের পর হতে এ দায়িত্বে আসেন তাঁরই সাহেবজাদা মাতৃগর্ভের ওলী নামে খ্যাত আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ। যিনি এই প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলেছেন এবং তাঁর দুই শাহজাদা বর্তমান সাজ্জাদানশীন আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ ও আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ এ সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ব্যাপৃত করেছেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এ মানবতার সংগঠনকে বিকশিত করেছেন। গাউসে পাকের এই কাফেলায় শামিল হয় দেশ বিদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ।দেশের আনাচে কানাচে চলতে থাকে এ মিশনের কার্যক্রম।মানুষের প্রীতি আর ভালোবাসায় সমৃদ্ধ হয় এই প্রতিষ্ঠান বিশাল কর্মীবাহিনীকে একটি সাংগঠনিক শৃঙ্খলায় নিয়ে দ্বীনের সাহায্যের কাজে নিয়োজিত করে তাদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ ১৯৮৬ সনে নির্দেশ দিলেন গাউসিয়া কমিটি প্রতিষ্ঠা করতে। যার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠিত হলো গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই প্রতিষ্ঠান পারিপার্শ্বিককে বেড়ে তুলতে, বাঁচাতে সেবায় সহযোগিতায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সমাজ সংস্কারের পূর্বশর্ত হলো ব্যক্তি সংস্কার। যারা সমাজ সংস্কারে নেতৃত্ব দিবে তাদের আগে হতে হবে আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযমে বলীয়ান।তাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে হয়ে উঠতে হবে।নিশ্চিত করতে হবে পরিশুদ্ধতায় নিখাদ তারা। ধীরে ধীরে আমিত্ব, হিংসা, লোভ-লালসা ও অহংকার মুক্ত হয়ে পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে পরিণত হতে হবে। বর্তমানে এ সমাজ, রাষ্ট্র এবং সমগ্র বিশ্বে অশান্তির যে দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলছে তার অন্যতম কারন হলো অযোগ্য, অশুদ্ধ, লোভী, হিংসুক, অহংকারী এবং দাম্ভিক ব্যক্তিদের নেতৃত্ব। আলোকিত নেতাদের বাতি থেকে হাজার হাজার বাতি প্রজ্জ্বলিত হলে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে সকল অন্ধকার দূরীভূত হবে। সেই অন্ধকার দূরীকরণে এবং সমাজে পরিশুদ্ধ নেতা সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজ শুদ্ধিকরণে নিরলস প্রচেষ্ঠারত গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ।
মানুষ মানুষের জন্য। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানুষের মৌলিক প্রয়োজনসমূহ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা যা নিশ্চিত করণের দায়িত্ব সরকারের হলেও আমাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে সহযোগিতা দিতে। মানুষ হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে।বলার মধ্যে আমরা যতটুকু পারদর্শী কাজে বা তা বাস্তবায়নে ততটুকু নই। বলা যায় তার ধারে কাছেও নেই। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত করোনাভাইরাস জনিত মহামারীর এই সময়ে। করোনা মহামারীর মহা দুর্যোগে যখন আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব একে অপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সেই মহাসংকটে এগিয়ে আসে গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ।মানব সেবায় মানবতার ডাকে বিবেকের দায়বদ্ধতায়, সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তাঁদের এগিয়ে আসা সত্যি বর্তমান সময়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ প্রশংসা পাওয়ার দাবী রাখে। মহাসংকট, মহাদুর্যোগে তাদের এই দ্বীপ্ত পদচারণা আমাদেরকে মানুষ হিসাবে গৌরবান্বিত করেছে। মানুষের যে ভালোবাসায় সিক্ত হলো,তাদের প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হলো, সাথে সাথে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের সম্মানিত করলে বা পুরুস্কৃত করলে ভবিষ্যতে এহেন উদ্যোগ গ্রহণে আরো অনেকে এগিয়ে আসবে মানবসেবায়, রাষ্ট্রের সহযোগিতায়।প্রাণিত হবে উজ্জীবিত হবে গাউছিয়া কমিটি। আলোকিত হবে সেই মহিমায় অন্যরা।কাজের স্বীকৃতি যেমন গতি সঞ্চার করে তেমনি অন্যকে পথ দেখায়, উৎসাহিত করে।
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশকে তাদের এই মহৎ কর্মযজ্ঞের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে অভিনন্দিত করতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের অনুরোধ জানাই। চট্টগ্রামের নন্দিত সংগঠন চট্টগ্রাম সাহিত্য পাঠচক্র তারাও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করতে সরকার বাহাদুরের সুদৃষ্টি কামনা করেছে। ধর্মে সবাই বাঁচে বাড়ে,স¤প্রদায়টা ধর্ম না রে। পারিপার্শ্বিককে নিয়ে বাঁচা বাড়ায় এগিয়ে যাব। মানুষকে জাগতিক সেবা দিয়ে আধ্যাত্মিক মুক্তির দিকে এগিয়ে নেওয়াই হোক প্রতিজ্ঞা। পরিশুদ্ধ মানুষ হয়ে সেবা আর ত্যাগের মাধ্যমে ভাস্বর হয়ে উঠি, শুদ্ধ বুদ্ধ মুক্তির অন্বেষায়।
লেখক: প্রাবন্ধিক