গল্পকার ও প্রাবন্ধিক মেয়ের নাম রেখেছেন- সুকন্যা

10

রুমানা নাওয়ার

মেয়ের নাম রেখেছেন- সুকন্যা। মিনিং টা দারুণ সুন্দর। আমাদের সবারই জানা। ভালো মেয়ে। মা বাবাও নিশ্চয় অনেক ভেবেচিন্তে বুঝেশুনে সুকন্যা নামটা রেখেছেন। নামের অর্থ টা সুন্দর এ ভেবে ভেবে মনে মনে পুলক অনুভব করেছেন। আরও কত কি ভেবেছেন।মেয়ে পড়ালেখা করে বিদ্যান হবেন। পরিবারের দেশ ও দশের কল্যাণ করবেন। কিন্তু না সুকন্যা নামের অর্থ টাই সে বদলে দিয়েছে। তার আচার আচরণ কথাবার্তায় তার মা বাবার বুক ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। গেল কদিন যা দেখলো তাতে সহজেই অনুমেয় মেয়েটি মানসিক সমস্যার মধ্যে আছে। যে মা কে সে দুষছে তিনি তার গর্ভধারিণী। চোখের জলে যিনি গতদুমাস ভেসেছেন। মেয়েকে খুঁজেছেন। দ্বারস্থ হয়েছেন দ্বারে দ্বারে। প্রশাসন সহ সর্বস্হরের সাহায্য চেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন করেছেন। দিনরাত এক করে কেঁদেছেন। আল্লাহ র কাছে ফরিয়াদ করেছেন। তার সোনার পুতলা একমাত্র মেয়েটি যেন ফিরে আসে।তাকে মা মা বলে বুকে জড়িয়ে ধরে।নিরাপদ আশ্রয়ে মুখ লুকিয়ে কাঁদে। সবাই যখন সুকন্যা র মিসিং এ চিন্তিত, শংকাগ্রস্ত। তখন সুকন্যার আজব কর্মকাÐ বেকুব কথাবার্তা ভাবিয়ে তুলেছে, শংকিত করেছে একটা প্রজন্ম কে। সবাই নড়েচড়ে বসে সুকন্যার ফিরে আসায় হাততালি না দিয়ে দুঃখিত হয়েছে। এ কেমন মেয়ে। গণমাধ্যমে এসে মা কে দুষছে। এ কেমন মেয়ে মাকে নানা, অপবাদ দিচ্ছে। এ কোন সুকন্যা র জন্ম দিলো মা -মাকে নিয়ো এত নেগেটিভ কথা বলতে পারে কোন সন্তান?
আমরা আশ্চর্য হই। বিষয়টা ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। বিশেষ করে বাবা মায়েরা।না জানি আর কতো শতশত সুকন্যা ঘরে ঘরে আছে। বসে আছে ঘাপটি মেরে। মিসিং হয়ে ফেরত, আসবে দুমাস পর।আর গণমাধ্যমকে জানাবে- আমার মা আমাকে, তিনলাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে চেয়েছে।আমাকে বাথরুমে আটকে রেখেছে। পানি দেয়নি খাবার দেয়নি।আঘাতপ্রাপ্ত শরীরে মলম লাগিয়ে দেয়নি। অচিরেই বেড়িয়ে আসবে হয়তো এরকম বাবা মায়ের আদরের সুকন্যারা।সুকন্যা র মা মেয়েকে প্রটেক্ট করতে যা যা করা দরকার তাই করেছে। বিপথে যাওয়া মেয়েকে শাসন করেছে মায়ের অধিকারে।আমার মেয়ের ভালোমন্দ আমি ভালো বুঝি। মেয়ে কাদের সাথে মিশছে কোথায় যাচ্ছে সব জানার অধিকার মায়েদের নিশ্চয় আছে। শাসন করার এক্তিয়ার ও আছে। এসব করার কারণে সুকন্যা আবোলতাবোল বকছে।
প্রকাশ্যে মা কে হেনস্তা, অপদস্থ করা। যা মুখে আসছে তাই বলা।মেয়ে কি পরিমাণ উচ্ছনে গেলে বিপথগামী হলে একজন দায়িত্ব শীল মাকে এরকম বলতে পারে তা সবার সহজেই অনুমেয়। মেয়ের সাথে দেখা করতে এসে বুকে জড়িয়ে কান্না এটাই মায়েদের সহজাত। আর সুকন্যা মার পিট চাপড়ে সান্তনা দেয় অশ্রæহীন চোখে। বিস্মিত হই আমি।আদালতের বারান্দায় বসে অসহায় মায়ের কান্না আমাদের বুক আদ্র করে, চোখ জ্বালা করে। আদালত রায় দিয়েছে- সুকন্যা এডাল্ট। ওর নিজের স্বাধীনতা নিয়ে চলার অধিকার এখন ওর আছে। কোন রকম সংকোচ দ্বিধা না রেখে- বলতে শোনা গেল- আমি আসবো, অবশ্যই আসবো আম্মু। আমার হাজবেন্ড কে নিয়ে মিষ্টি নিয়েই বাসায় আসবো। আঠারো বছর ধরে পাখির ছানার মতো আগলে রাখা সুকন্যা কি নির্বিকার ভাবে কতোটা অসংকোচে মাকে ছেড়ে গেলো তা সত্যিই ভাবার বিষয়। সুকন্যার বাবা দীর্ঘদিন বিদেশে। আর তার মা একাই এ মেয়েকে দেখভাল করেছেন। খাইয়েছেন, ঘুম পাড়িয়েছেন। রোজ দুবার স্কুল কলেজ থেক আনা নেওয়া করেছেন। আদর দিয়েছেন স্নেহ ভালোবাসা সবই দিয়েছেন। শাসনও করেছেন সাথে। যা প্রতিটা বাবা মা ই করে- করা উচিত। আর তা না হলে আদরের সন্তান উচ্ছন্নে যেতে পারে। বরবাদ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বিপথে যাওয়া সন্তানকে শাসন করলে হীতে বিপরীত হয় তার প্রমাণ আজকের সুকন্যা। তার অবাধ চলাফেরায় প্রেমে বাধা দেয়ায়। মোবাইল ফোন ব্যবহারে কড়া নজর আরোপ করায়। মা কে রাতারাতি ভিলেন করে দেয়।নিজে আত্মগোপনে থেকে। মাকে কাঁদায়, কাঁদিয়ে শান্তি পায়। মুখ লুকিয়ে হাসে তার তথাকথিত প্রেমিককে নিয়ে। আর দুমাসের আত্মগোপণের সময়ের কান্না টা সারাজীবনের কান্না হয়ে থেকে গেলো মায়ের। বেরিয়ে আসার পর যে দুঃখ দিলো মাকে তা বর্ণনাতীত। প্রকাশ অযোগ্য। ধিক এসব সুকন্যা দের। ধিক তাদের বিকলাঙ্গ মনোজগৎ কে। দশমাস দশদিন গর্ভে ধারণ আঠারো বছর লালনপালন এর সবটুকুই কি সুকন্যার মায়ের টাকার বিনিময়ে করেছে। এসব সন্তানদের আঁতুড়ঘরে মেরে ফেললে কি এমন ক্ষতি হতো। এমন সুকন্যা না থেকে নিঃসন্তান থাকা ঢের ভালো। ধিক্ ধিক্ ধিক্- শতমুখে ধিক্।