গরু চুরির হিড়িক স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে

20

 

আর মাত্র একমাসের কিছু বেশি সময়ের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল আজহা তথা কুরবানি। পশু জবেহ-এর মাধ্যমে এ উৎসব উদযাপন করা হয়। আর কোরবানিকে কেন্দ্র করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের এ দেশে ব্যাপক আকারে গরু ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। গ্রামীন জনপদে কৃষককুলে লালন পালন করা হয় দেশীয় জাতের গরু। ঈদুল ফিতরের পর থেকে এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা যখন গরু মোটা তাজাকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন গরু চোরের তৎপরতাও বেড়ে যায়। সম্প্রতি চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী গরু চুরির যে হিড়িক পড়েছে তাতে সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে খামারিরা পর্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের দুটি ঘটনা এ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাকে আরো বাড়িয়ে দিেেয়ছে। প্রথমটি গরু চুরি করার সময় দেখে ফেলায় চোরের দল এক কৃষককে গুলি করে হত্যার ঘটনা, দ্বিতীয়টি গরু চুরি করে গরুসহ কার-এ করে পালানোর ঘটনা। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে রাঙ্গুনীয়ায়, দ্বিতীয়টি সীতাকুÐেয়। এছাড়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত একমাসে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় সাড়ে পাঁচশতাধিক গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। রবিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১ মাসে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে কমপক্ষে ৩ শতাধিক গরু চুরি হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা ভুক্তভোগিরা। সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের মো. সালাউদ্দিনের একরাতে ৪টি গরু গোয়ালঘর থেকে চুরি হয়েছিল। এ নিয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পাননি বলে পূর্বদেশ প্রতিনিধিকে জানিযেছেন। ভূমিহীন পল্লীর সভাপতি মো. জসিম জানান, চোরের দল সুলতান আহমদের ২টি গরু নিয়ে যায়। তারা ভূমিহীন পল্লীর ভেতরের দিকে পাহাড়ি পথে রাউজান কদলপুর দিয়ে পালিয়ে যায়। গরু দুটির বাজার মূল্য আনুমানিক ৭০ হাজার টাকা। রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিলকী জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাদীপক্ষের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সংঘবদ্ধ গরু চোর সিন্ডিকেট রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে এরকম প্রতিদিন কোন না কোনভাবে গরু চুরি করেই চলছে। আবার চুরি ঠেকাতে অনেকে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে গোয়ালঘর। অনেকে গোয়াল ঘরে মশারি টাঙ্গিয়ে গরুর সাথে রাতযাপন করছে। গত এপ্রিলে জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ফরিদপুরে একটি উপজেলায় একরাতে ৭০টি গরু মহিষ চুরি হয়েছে। চট্টগ্রামে সাতকানিয়া ও বাঁশখালীতেও প্রতিরাতে অসংখ্য গরু চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। অপরদিকে সীতাকুÐ, মিরসরাই এলাকায়ও থেমে নেই। এধরনের গরু চুরির ঘটনা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যসায়ীদের জন্য হতাশার। এটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ চুরি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর অবস্থান ও নজরদারি বাড়াতে হবে। আমরা জানি দেশে এ খাতটি দিনের পর দিন সমৃদ্ধ লাভ করছে। একসময় কুরবানির ঈদের পশুর জন্য আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের উপর নির্ভর করতে হত। এখন সেই অবস্থা নেই। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কুরবানির ঈদে দেশীয়জাতের গরুর নব্বই ভাগই এ দেশের খামারি বা কৃষকরা যোগান দিয়ে আসছেন। সুতরাং খামারি ও কৃষকদের এ কাজে উৎসাহ যোগাতে হলে তাদের ব্যবসায়িক নিরাপত্তা প্রয়োজন। আর এটি করতে হবে আইন-শৃঙ্খরা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। এছাড়া নিজেদের সচেতন থাকতে হবে।
রাঙ্গুনিয়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় দেখে ফেলায় এক কৃষককে গুলি করা হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পোমরা ইউনিয়নের বুড়ির দোকানের ভূমিহীন পল্লীতে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ কৃষকের নাম মাহবুবুল আলম (৪৫)। তিনি ওই এলাকার কবির আহমদের ছেলে। এসময় তার প্রতিবেশী সুলতান আহমদের পরিবারের দুটি গরু চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল।