গরু চুরির বিরুদ্ধে মানববন্ধন

4

রামু প্রতিনিধি

কক্সবাজারের রামুতে প্রতিরাতে ঘটছে গরু চুরির ঘটনা। কয়েক বছর ধরে একাধিক অস্ত্রধারী চোরচক্র নির্বিঘেœ গরু চুরি করে যাচ্ছে। কিন্তু তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। গরু চুরির কারণে বর্তমানে অনেক গরুর খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
এমনকি প্রান্তিক জনপদের মানুষ গরু লালন-পালন করতে পারছে না। আবার যারা গরু লালন-পালন করছেন, তাদের অনেকেই রাত জেগে গরুর গোয়াল পাহারা দিচ্ছেন। এরপরও সাম্প্রতিক গরু চুরি আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি পেয়েছে। গরু চুরিকালে অনেক সময় গরুর মালিককে হত্যা এবং কুপিয়ে-মারধর করে আহত করার ঘটনাও ঘটছে।
রামু উপজেলা ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক আকতার কামাল আজাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা ‘উদ্যোগী ও কর্মমুখি হোন’ এ ¯েøাগানকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো রামুর অনেক প্রতিষ্ঠিত ও প্রান্তিক জনপদের ব্যক্তি এবং গ্রামের কৃষকরা গরু লালন-পালনে এগিয়ে এসেছে। এ কারণে রামু উপজেলায় ডেইরি শিল্পের প্রসার লাভ করে। দারিদ্র্য দূরীকরণের পাশাপাশি দেশের মাংস ও দুধের চাহিদা পূরণে রামুর ডেইরি খামার ও গরু লালন-পালনকারিরা অনন্য অবদান রাখছে। কিন্তু প্রতিরাতে গরু চুরির কারণে উপজেলার ডেইরি শিল্পে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্যক্তি পর্যায়ে গরু লালন-পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যা দেশের কৃষকদের জীবন-জীবিকায় বড় ধরনের সংকট তৈরি করছে।
এদিকে রামুতে অব্যাহত গরু চুরি-ডাকাতি বন্ধের দাবিতে খামারি এবং প্রান্তিক চাষিদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রবিবার বেলা ১২ টায় উপজেলা পরিষদ ভবন চত্বরে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) উপজেলা সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম, উপজেলা ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আকতার কামাল আজাদ, সদস্য মো. দিদারুল আলম, জাহাঙ্গীর হোসেন কোম্পানি, প্রান্তিক চাষি শিরিন আকতার ও জয়নাব বেগম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গত ১০ জানুয়ারি উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের অফিসেরচর চরপাড়ায় কৃষক মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে অস্ত্রধারীরা মোহাম্মদ আলীর ভাতিজা যুবক মীর কাশেমকে নির্মমভাবে হত্যা করে দুটি বড় গরু লুট করে নিয়ে থানার সামনের সড়ক দিয়ে চলে যায়। রামু থানা থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ডাকাতি প্রতিরোধে কোন ভুমিকা পালন করেনি। এমনকি ঘটনার পরও পুলিশের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। যা খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের বেশি হতাশ করেছে।
বক্তারা আরও বলেন- গত বছর ২০ নভেম্বর ভোরে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মধ্যম মেরংলোয়ায় মোবাশ্বর আহমদের বাড়ি থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তিনটি গরু লুট করে নিয়ে যায়। একই দিন রাতে চাকমারকুল ইউনিয়নের নূর আহমদের বাড়ি থেকে বড় দুইটি গরু নিয়ে যায় ডাকাত। এছাড়া ৮ জানুয়ারি রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার নুরুল হকের বাড়িতে অস্ত্রধারী ডাকাতদল ৪টি গরু লুট করে নিয়ে যায়। গরুগুলোর আনুমানিক মূল্য চার লাখ টাকা।
রামু উপজেলায় গরু চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধিতে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেবল গরু চুরি নয়, সাম্প্রতিক রামু উপজেলায় বসত বাড়ি, মসজিদ, মন্দির ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও চুরি-ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলায় গরু চুরিতে স্থানীয়দের পাশাপাশি পাশর্^বর্তী চকরিয়া উপজেলার একাধিক চক্র জড়িত থাকতে পারে। গরু চুরি ব্যাপক বাড়লেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা দেখা যায় না।
মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে গরু চুরি বন্ধের দাবিতে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন ডেইরি ফার্ম মালিক ও প্রান্তিক কৃষকরা।