গরুর বাজারে ক্রেতার ঢল

44

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাত পোহালেই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানী দিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন সামর্থবান মুসলিম জনগোষ্ঠী। যারা এখনো পশু কিনতে পারেননি তারা পশুর হাটগুলোতে ভীর করছেন আজও। অনেক পশুরহাটেই দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীর। তবে ক্রেতাদের তুলনায় পশুর সংখ্যা নগন্য হওয়ায় বেশি দামে পছন্দের কোরবানীর পশুটি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। ঈদ-উল আযহার সময় একেবারে ঘনিয়ে আসায় ভিড় বেড়েছে বাজারগুলোতে। তবে, বাজারগুলোতে আগত সাধারণ মানুষদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে। মুখে মাস্ক না থাকা ছাড়াও গাদাগাদি করে বাজারে আসা-যাওয়া করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ইজারাদারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রচারের নির্দেশনা থাকলেও তা দেখা যায়নি তেমনভাবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকেও কোনো জোড়ালো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
গতকাল শুক্রবার নগরীর কয়েকটি পশুরহাট ঘুরে কেনাবেচা ও দর্শণার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বাজারগুলোতে উঠেছে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ। বেচাকেনাও জমে উঠছে।
কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পশু ছাড়াও প্রতিবারের মতো এবারও কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু আসছে নগরীর হাটগুলোতে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চল থেকেও এবার কোরবানির পশু এসেছে স্থায়ী, অস্থায়ীসহ কয়েকটি হাটে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলায় বসেছে আরও দুই শতাধিক কোরবানি পশুর হাট। অনলাইনেও পশু বেচাকেনা চলছে হরদম। আবার পশুরহাট ব্যতিত নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে ও রাস্তার ধারে বেপারিরা গরু-মহিষ ও ছাগল বেচা কেনা করছেন। অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ীকেও গরু এনে এলাকায় রেখে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নগরের মইজ্জারটেক, বিবিরহাট, নুরনগর হাউজিং সোসাইটি ও সাগরিকা গরুর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে গরু, ছাগল, মহিষ এসেছে পর্যাপ্ত। ইজারাদাররাও সার্বিক নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। পশুরহাটগুলোতে ছোট, মাঝারি ও বৃহতাকারের গরু-মহিষ দেখা গেছে। তা নিয়ে ব্যস্ত বেপারিরা। দামও অন্যান্যবারের তুলনায় কিছুটা বেশি। ক্রেতাদের মধ্যেও দাম বেশি হওয়া নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে।
দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বেপারিরা জানান, গোখাদ্য ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রভাবটা দামে গিয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে পশু কিনতে আসা ক্রেতারা বলছেন, পশুর তুলনায় দাম হাঁকা হচ্ছে ২ থেকে ৪ গুন পর্যন্ত। বেপারিদের হিসেবে গরু কিনতে গেলে প্রতিকেজি মাংসের দাম ৩ হাজার ছাড়ানোর অবস্থা। অনেক ক্রেতা পশুর দাম বাড়ানোর বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত বলেও অভিযোগ করেছেন।
নুর নগর হাউজিং সোসাইটি মাঠে অক্সিজেন নয়াহাট থেকে আসা গরু ক্রেতা নুর আহমদ ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় একটি গরু ক্রয় করেন। তিনি বলেন, এবারে প্রচুর গরু হাটে উঠেছে। হাতের নাগালের মধ্যে না পেলেও একটু বেশি দামে কিনেছি। কারণ এ বছর বিক্রেতারা একটু বেশি দাম হাঁকছেন। আরেক ক্রেতা নুরুল কবির বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারে গরুর দাম একটু বেশি।
বাজারটিতে ফরিদপুর থেকে গরু নিয়ে আসা বেপারি ওবাইদুল ইসলাম জানান, ২৫টা গরু এনেছি তা থেকে ২১টা বিক্রি হয়েছে। আর চারটি এখনো রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজকে রাতেই বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
এদিকে কোরবানির পশুরহাটগুলোতে নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরা হাট এলাকায় টহল জোরদার করেছে। আছে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক। ইজারাদারদের উদ্যোগে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহি যানবাহন না থামাতে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান নগর ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জাল টাকা শনাক্ত, অজ্ঞান ও মলম পার্টির অপতৎপরতা রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা হাটগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্রেতা আকর্ষণে পশুর হাটগুলোকে বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে, চলছে মাইকিংও।
নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাঠে গরু বেশি আসার বিষয়ে ইজারাদারের পরিচালক এস এম মোরশেদুর চৌধুরী জানান, এ পর্যন্ত এ মাঠে ১৫ হাজারেরও অধিক গরু-মহিষ এসেছে। এর মধ্যে আজ (শুক্রবার) পর্যন্ত ৮ হাজার গরু-মহিষ বিক্রি হয়েছে। এখনও অনেক গরু পথে রয়েছে। রাতের মধ্যে বেপারিরা এখানে নিয়ে আসবে। আর বর্তমানে ক্রেতা সমাগম বেশি। খুব ভালই বিক্রি হচ্ছে। সম্মিলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ ভালো।
মইজ্জারটেক পশু হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. করিম পূর্বদেশকে বলেন, এ বাজারে ১২ হাজারের মত গরু-মহিষ রাখার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। চলে এসেছে ১০ হাজারের বেশি গরু-মহিষ। তার মধ্যে এ পর্যন্ত (শুক্রবার বিকেল ৪টা) ৫ হাজারের মত বিক্রি হয়েছে। আজকে অনেকটা বিক্রি বেড়েছে। পাশাপাশি আগামিকাল (শনিবার) বিক্রি আরও বাড়বে। কারণ শেষদিন হিসেবে অনেক বেপারি গরু ছেড়ে দিবেন। আমাদের এখানে ১৫০ জন ভলান্টিয়ার রয়েছেন যারা গরু ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
মহানগরীর তিনটি স্থায়ী পশুর হাট- বিবিরহাট, সাগরিকা গরুর বাজার ও পোস্তারপাড় ছাগলের হাটের পাশাপাশি নুর নগর হাউজিং সোসাইটি মাঠ, সল্টগোলা ঈশান মিস্ত্রির হাট, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন খোলা মাঠ, পতেঙ্গা খেজুরতলার আউটার রিং রোড এলাকা, কর্ণফুলী এলাকায় বসেছে অস্থায়ী গরুর বাজার। এছাড়া মহানগরীর আশপাশ এবং উপজেলা সদরগুলোতে আরও দুই শতাধিক গরুর বাজার বসেছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন পূর্বদেশকে জানান, চট্টগ্রামে এবার কোরবানি পশুর চাহিদা আট লাখ ২১ হাজার। চাহিদার প্রায় পুরোটাই স্থানীয়ভাবে সরবরাহ দেয়া যাবে। তাছাড়া প্রতিবারের মত এবারও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেলায় প্রাণি সম্পদ বিভাগের নিবন্ধিত গরুর খামার রয়েছে আট হাজার ১৭১টি। এর মধ্যে জেলার মিরসরাই, কর্ণফুলী, পটিয়া, সীতাকুÐ, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার খামারগুলোতে কোরবানির জন্য বেশি পশু লালন-পালন করা হয়েছে।
এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলাতে বড় খামারের বাইরে ব্যক্তি উদ্যোগেও গরু, ছাগল লালন-পালন করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বাজারে চাহিদার অতিরিক্ত পশু থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। বেশ উচ্চমূল্যেই কোরবানীদাতারা পশু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।