গরুচুরি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নজরদারি বাড়াতে হবে

15

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানাযায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে গুরুচুরির ঘটনা বেড়েছে। গরু পালনকারি ও খামারীদের উৎকন্ঠা বেড়ে গেছে। সাধারণত কোরবান আসলে গরুচুরির ঘটনা বেগে যায়। কোরবানের ঈদ আসতে অনেক দেরী, তারপরও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় যে ভাবে গৃহস্থ এবং গরু মোটাতাজা করণ ব্যবসায়ীরা গরুচোরের দৌরাত্ম্য অতিষ্ঠ। প্রবাদ আছে কলা চোরের ফাঁসি নেই। অন্যদিকে বিচার বিবেচনা করলে দেখা যায় গরুচোরের মামলা নেই। যার কারণে গরুচুরি বেড়ে গেছে। কলাচুরি বলেন আর গরুচুরি বলেন তাতে কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গরুদ্বারা চাষ কিংবা ধান মাড়াইয়ের কাজ বর্তমান সময়ে হয় না। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির কৃপায় গরুর শ্রম নেই। বর্তমানে গরু যারা লালন পালন করে তারা ব্যবসায়ীক কারণে করছে। দুধ ও মাংসের চাহিদার উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবসায়ীক ভিত্তিতে গরুর খামার গড়ে ওঠেছে। দেশে মাংসের দাম যে ভাবে বেড়েছে তাতে গরু চোরের সংঘবদ্ধ দলও বেড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে গরু চোরদের পরিবহন সুযোগও বেড়েছে। কারো খামার কিংবা গোয়ালঘর থেকে গরু বের করে ট্রাকে করে দুরে কোথাও নিয়ে গিয়ে জীবিত কিংবা জবেহ করে গরু বিক্রি করে চোররা সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে। দেশে গরুর মাংসের চাহিদা বেশি। বাঙালি মুসলমানরা গরুর মাংসের জন্য পাগল প্রায়, অথচ গরুর মাংস মানব শরীরে রোগব্যাধি বাড়ায় বলে চিকিৎসকরা বলে থাকেন। তার পরও বাঙালি মুসলমানের গরুর মাংস না খেলে যেন মুসলমানি রক্ষা হয় না এমন ভাব। চট্টগ্রামের মেজবানী ঐতিহ্য, ওরশ এবং বিয়ে শাদীতে গরুর মাংস না হলে চলে না। এমন অবস্থাতে দেশে গরুর মাংসের মূল্য সাত / আটশ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। যাদের অধিক সচ্ছলতা আছে তাদের অধিকাংশের খাবার টেবিলে গরুর মাংস একটা অপরিহার্য খাদ্য সামগ্রী। তাইতো প্রবাদ আছে আমরা গরুর গোস্ত খাওয়া মুসলমান। বর্তমান সময়ে দেশের সাধারণ মানুষ হতে ব্যবসায়ী সমাজ পর্যন্ত সবাই গরু পালন করছে। আর এতে চোরের পোয়াবার।
গরু চুরিতে চোর হাতে নাতে ধরা না পড়লে কিছুই করা যায় না। প্রমান নিয়ে জটিলতার কারণে গরু চোরের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেয়া যায় না। যানবাহনে করে দেশের এক অঞ্চল হতে অন্য অঞ্চলে চোররা গরু নিয়ে গিয়ে জীবিত অথবা জবেহ করে বিক্রি করে দেয়। গরুর মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও থানায় গিয়ে সরাসরি মামলা করতে পারে না। কেউ কেউ থানা অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তার কোন প্রতিকার পায় না। এক্ষেত্রে গরু পালনকারীরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। সম্প্রতি পূর্বদেশের এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় বিগত তিনমাসে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা ২৯টি গরু চুরি হয়েছে। আনোয়ারায় জানুয়ারি মাসে ২০ হতে ২৫টি গরু চুরির খবর পাওয়া যায় পত্রিকার প্রতিবেদন হতে। সিতাকুÐ উপজেলায় গাড়িতে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে গরু চুরির ঘটনায় দুই চোর ধরা পড়েছে। তা ছাড়া রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বিগত তিনমাসে ১৬টিরও বেশি গরু চুরি হয়েছে। সাতকানিয়া. বাঁশখালী, রাউজান ইত্যাদি উপজেলায়ও গরু চুরি থেমে নেই। গরু চুরির কারণে গৃহস্থ ও খামারীরা লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি গুনছে। গরু চোর নিয়ন্ত্রণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারি জরুরি। দেশের গরু চুরি বন্ধে কিছু পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। তৎমধ্যে (১) গরু জবেহর জন্য প্রশাসনের নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়া। (২) জবেহ করার পূর্বে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা। (৩) বাজারে গরুর মাংস বিক্রেতাদের জবাব দিহিতার আওতায় আনা। (৪) কার গরু জবেহ করছে তার লিখিত প্রমাণপত্র ছাড়া গরু জবেহ নিষিদ্ধ করা। (৫) আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক হারে বাড়ানো। (৬) রাতের বেলা গ্রাম পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। (৭) গরু লালন পালন কারীদের মধ্যে গরু চুরি রোধে সচেতন থাকা ইত্যাদি। বেশিরভাগ গরু চুরি হয় রাতে। রাতের বেলা গরু পরিবহনে ট্রাক ড্রাইভাদের জবাব দিহিতার আওতায় আনতে হবে। রশিদ বা প্রমাণপত্র ছাড়া কোনগরু দিনে কিংবা রাতে পরিবহণ নিষিদ্ধ করাও যেতে পারে। চোরকে পাহারা দিয়ে চুরি বন্ধ করা যায় না। কারণ চোরের বুদ্ধির কমতি নেই। সুতরাং রাস্তায় গরু হাঁটিয়ে কিংবা পরিবহনের মাধ্যমে যে বা যারাই নিয়ে যাক না কেন তাদেরকে এলাকার সর্বস্তরের জনতাকে উপযুক্ত কিংবা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে। শুধু গবাধি পশু নয়, সব ধরনের চুরি বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা খুবই জরুরি। প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে চট্টগ্রামসহ দেশে গরুচুরি বন্ধ হবে। গরু চুরির শাস্তির বিধান আছে কি না আমাদের জানা নেই। গরু চুরি রোধকল্পে প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রণয়ণ করা যেতে পারে। গরু জবেহ ও বেচা-কেনা, পালন ইত্যাদির পরিচ্ছন্ন পরিসংখ্যান সরকার ও প্রশাসনের কাছে সংরক্ষণ করা হলে চুরি করে গরু বিক্রি কিংবা জবেহ করে গরুর মাংস বিক্রির সুযোগ পাবে না। গরু পালন কিংবা গরুর খামার একটি লাবজনক ব্যবসা। যা দেশের অর্থনীতিকে ভূমিকা রাখে। এব্যবসায় চুরি বন্ধে সরকার ও প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো খুবই জরুরি।