গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলনে ওয়াসার ফি আরোপ

56

এম এ হোসাইন

চট্টগ্রাম ওয়াসা পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করার পরও গভীর নলক‚পের পানি ব্যবহার করছেন শহরের অনেকে। এতে ভ‚-গর্ভস্থ পানির স্তরের উপর চাপ বাড়ছে। এ চাপ কমাতে গভীর নলক‚পে মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। মিটার রিডিং অনুযায়ী ওয়াসার পানির বিলের এক তৃতীয়াংশ বিল জারি হবে। এ ক্ষেত্রে নলকূপ থেকে পানি উঠালে আবাসিকে ইউনিট প্রতি ৬ টাকা আর অনাবাসিকে ১২.৩৪ টাকা বিল আদায় করবে ওয়াসা। গত বুধবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের ৭১তম সাধারণ সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ভূ-গর্ভস্থ’ পানি ব্যবহারে সাধারণ মানুষ নিরুৎসাহিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, পর্যাপ্ত পানি আমরা সরবরাহ করছি। তারপরও অনেকে গভীর নলক‚পের পানি ব্যবহার করছে। এতে ভ‚-গর্ভস্থ পানির উপর চাপ বাড়ছে। যেটা প্রকৃতির জন্য দিনদিন হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নলকূপে মিটার বসানোর মাধ্যমে বিল আদায় করা হলে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারে মানুষ নিরুৎসাহিত হবে। তাছাড়া নলকূপের পানি তুলতে বিদ্যুৎ খরচসহ অন্যান্য খরচও আছে। আমরা কিছুদিনের মাধ্যে যেসব এলাকায় পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করছি, সে এলাকাগুলোতে মিটার লাগানো শুরু করবো। পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রম চলবে। পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬ এর ২৪ ধারার ৩-এর ক্ষমতা বলে গভীর নলকূপে মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আগামী ১ মার্চ থেকে মিটার বসানো কার্যক্রম শুরু করবে ওয়াসা। প্রাথমিকভাবে যেসব এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে সেসব এলাকার নলকূপে মিটার বসানো শুরু হবে। অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার আওতাধীন এলাকায় অন্তত ৩০ হাজার অবৈধ গভীর নলকূপ রয়েছে। তবে ওয়াসার লাইসেন্সের আওতায় রয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৩০০টি গভীর নলক‚প। নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্স নেয়া গ্রাহকরা নিয়মিত বাৎসরিক নির্দিষ্ট ফি দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে উত্তোলন করা পানির জন্য ইউনিট প্রতি বিল পরিশোধ করতে হবে। অথচ অবৈধ নলকূপের গ্রাহকদের সেই ঝামেলাতে পড়তে হবে না।
এ বিষয়ে কথা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শহরে অবৈধ নলকূপ আছে অন্তত ৩০ হাজার। এসব গ্রাহককে মিটারের আওতায় আনার মতো সামর্থ্য এখনো ওয়াসার হয়নি। ওয়াসার কাছে এতো মিটারও নেই। মিটার আনতে আনতেই বছর শেষ হয়ে যাবে। আবার গ্রাহককে টাকা দিয়ে সে মিটার স্থাপন করাতে হবে। বাধ্য করা না হলে গ্রাহক মিটার নিবে না। সব মিলিয়ে এটা বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই বললেই চলে। কিছু কিছু গ্রাহককে হয়তো মিটার নিতে পারে।
অবশ্য ভিন্ন কথাও বলছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। নলকূপে মিটার স্থাপন করা হলে কতটুকু ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার হচ্ছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। ফলে সেটার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও সহজ হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, নলকূপে মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা এবং পানির ব্যবহারের সঠিক চিত্র পাওয়ার জন্য এটি খুবই জরুরি। তবে এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ক্রমান্বয়ে এলাকাভিত্তিক সবগুলো নলকূপে মিটার বসানো হবে। তখন ভূ-গর্ভস্থ পানি ও ভূ-উপরিভাগস্থ পানির কতটুকু ব্যবহার হচ্ছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গভীর নলকূপের পানি ব্যবহারে ফি আরোপের বিষয়টি গত বছরের প্রস্তাবনা ছিল। যা এবার বোর্ড সভায় গৃহীত হয়েছে। নলকূপে মিটার বসানোর মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসা সুয়্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সুয়্যারেজ বিলের জন্যও গভীর নলকূপে মিটার স্থাপন করা প্রয়োজন। কারণ পানির বিলের সমপরিমাণ সুয়্যারেজ বিল আদায় করবে ওয়াসা। নলকূপে মিটার স্থাপন করা না হলে সুয়্যারেজ বিল আদায়ের ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হবে ওয়াসাকে। যার কারণে সুয়্যারেজ প্রকল্প চালুর আগে সবগুলো নলকূপে মিটার স্থাপনের চেষ্টা করছে ওয়াসা।