গণমিছিল ও সমাবেশে কক্সবাজারে বিএনপির শোডাউন

13

রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, ভোলায় দলীয় নেতা হত্যা ইস্যুতে দীর্ঘদিন পরে কক্সবাজারের রাজপথে শক্তির জানান দিয়েছে বিএনপি। কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে গতকাল এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শহীদ সরণী ও প্রধান সড়ক হয়ে গণমিছিল হাশেমিয়া মাদ্রাসা এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’, ‘ভোট চোর ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর’, ‘শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে’, ‘রাজপথের কাজল ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে কক্সবাজার শহর। গতকাল বুধবার বেলা দুইটা থেকে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জমায়েত হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, লুৎফুর রহমান কাজলসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে যায় সমাবেশস্থল।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজলের ডাকে গণমিছিল ও সমাবেশে যোগ দেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয় ঈদগাহ ময়দান। কক্সবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক সাবেক এমপি মোহাম্মদ শাহজাহান।
সমাবেশে মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, হয়তো অল্প সময়ে খবর আসবে, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু জনগণ তাকে পালানোর সুযোগ দিবে না। দুর্নীতি ও লুটপাটের কড়ায়-গন্ডায় হিসাব দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানিয়ে শাহজাহান বলেন, দেশের অবস্থা দেখুন। মানুষের প্রতিবাদের ভাষা শুনুন। এই মুহূর্তে এক মিনিটও দেশের ক্ষমতায় থাকার যোগ্যতা আপনার নাই।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আমরা অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষার শিকার হয়েছি। আর চুপ থাকব না। কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগরে ঢেউয়ের চেয়ে বিএনপির আওয়াজ আরও অনেক শক্তিশালী উদ্দীপ্ত। মানুষের হৃদয়ে বিএনপি। আমরাই দেশে বেঁচে থাকব।
সমাবেশে উপস্থিতির চিত্র তুলে ধরে প্রধান অতিথি বলেন, এটি কোন বিভাগীয় সমাবেশ না। কক্সবাজার অঞ্চলের একটি সমাবেশ মাত্র। এখানে উপস্থিতি প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের অবস্থা কোন পর্যায়ে চলে গেছে। বিএনপির কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। সবাই শেখ হাসিনার পতন চায়।
নিস্ক্রিয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় হওয়ার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, গণমানুষের প্রিয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজলের নেতৃত্বে আগামীর আন্দোলনে শরিক হন। ঘরে বসে থাকার সময় আর নাই। অল্পদিনের মধ্যে পরিবর্তন আসবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল। তিনি বলেন, আপনারা অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সমাবেশে যোগদান করেছেন। শুকরিয়া। যারা বলেছিলেন বিএনপি শেষ। আপনারা দেখে যান, বিএনপি আছে কিনা? সিংহের মতো গর্জন কক্সবাজারে। বিএনপি মানে আগামীর বাংলাদেশ।
লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, সাধারণ মানুষের দাবি আদায়ের জন্য আমরা সমবেত হয়েছি। রাতের অন্ধকারে ডিজেল পেট্রোলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেট। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সবকিছু। দেশে চরম দুর্যোগ চলছে। সরকারের হাতে কোন কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেই। সাধারণ মানুষ চাহিদামতো খেতে পারছে না।
বিএনপিকে দেশপ্রেমিক ও ভদ্র মানুষের দল আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ব্যবহারে বংশের পরিচয়। আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকে কবর থেকে তুলে আনব না। আমরা ভদ্রতা জানি। আওয়ামী লীগ যেভাবে আমাদের নেতাদের গালিগালাজ করে, সেরকম গালিগালাজ, অশালীন বক্তব্য আমরা দিব না। বিএনপি মানে শৃঙ্খলাবাহিনীর আন্দোলনের নাম। সাবেক এমপি কাজল বলেন, সারাদেশে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতে প্রচুর জনসমর্থন রয়েছে। কর্মসূচিগুলোতে সাধারণ মানুষ যোগদান করেছে। সফল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। বিএনপি এবং আন্দোলনের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সরওয়ার রোমনের সঞ্চালনায় মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম কাউন্সিলর, কক্সবাজার পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবু ছিদ্দিক ওসমানী, জেলা কৃষকদলের আহবায়ক পৌর কমিশনার আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আকতার বকুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউনুছ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জিসান উদ্দিন জিসান, ঈদগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম চেয়ারম্যান, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, কক্সবাজার শহর যুবদলের সভাপতি আজিজুল হক সোহেল, রামু বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর বাবু, বিএনপি নেতা ছুরত আলম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহাদাত হোসেন রিপন, সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুর রহমান নয়ন, সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক মিজানুল আলম, শহর ছাত্রদলের সদস্যসচিব ইনজামামুল হক, ঈদগাঁও উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুল হুদা নকশা প্রমুখ।
কক্সবাজার পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাড়াও ঈদগাঁও, রামু, সদরের প্রত্যেক ইউনিয়নের তৃণমূল নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন সরকারে মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করে।