গণমানুষের জন্য উন্মুক্ত গণপরিবহন স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সতর্ক থাকতে হবে

15

বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাংলাদেশসহ বিশে^র অনেক দেশে বলা যায় স্থিতি অবস্থা বিরাজ করছে। ভারতসহ ইউরোপিয়ান অনেকগুলো দেশে করোনা পরিস্থিতি নতুন মোড় নিচ্ছে। কিন্তু তাই বলে জীবনজীবিকা থেমে থাকবে-তা হতে পারেনা। বিশে^ও কোন উন্নত রাষ্ট্রই যেটা পারেনি, বাংলাদেশ তা পারবে-অসম্ভব বিষয়তো বটে। ফলে করোনার থাবা যতই নির্মম হোক মানুষ এখন ভয়কে জয় করেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাও কম নয়। তবে ভয়কে জয় করতে গিয়ে করোনাকে একেবারে আলিঙ্গন করে ফেলার মত পরিবেশ এখনও সুদূরপরাহত। তাই, জীবিকার সন্ধান করতে গিয়ে যাতে জীবন বিপন্ন না হয়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা লক্ষ করছি, সরকার স্বাস্থ্যঝুঁকি আশঙ্কার মধ্যেই গত মঙ্গলবার থেকে গণপরিবহন আগের অবস্থায় ফিরেছে। ‘নতুন স্বাভাবিক’ ব্যবস্থায় গণপরিবহন থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সচেতন যাত্রীদের মধ্যেও একই আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। এর যথাযথ কারণও রয়েছে। এমনিতেই আমাদের গণপরিবহনের অবস্থা খারাপ। সংক্রমণের শুরুর দিকে কিছুটা নিয়ম মেনে চলছিল। কিন্তু ক্রমান্বয়ে সুরক্ষা শর্তের যে নিয়ম মেনে চলার তাগিদ ছিল তা ভেঙে পড়তে শুরু করে। প্রথম দিনের গণপরিবহন চলাচল পর্যবেক্ষণ করে গণমাধ্যমে যেসব খবর এসেছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ বাসগুলোয় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে না।
সরকারের পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার থেকে আগের ভাড়ায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আসনসংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। গণপরিবহনে যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার, কন্টাক্টর, হেলপার ও টিকিট বিক্রিতে নিয়োজিতদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক। তাঁদের হাত ধোয়ার জন্য সাবান, পানি ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাত্রা শুরু ও শেষে বাস ও মিনিবাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। যাত্রীর হাতব্যাগ ও মালপত্র জীবাণুনাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাসের চালক ও হেলপারের মুখে মাস্ক ছিল না। নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও বাসে ওঠার সময় গেটে নেই স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। যাত্রীদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীন। বাসে বা গণপরিবহনে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না বলা হলেও তা মানা হচ্ছে না। অন্যদিকে কাগজে-কলমে গণপরিবহন আগের ভাড়ায় ফিরলেও করোনাকালের আগে যে কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায় হতো, এখনো সে রকমই চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দৈনিক পূর্বদেশসহ সহযোগী বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, যেসব শর্ত দিয়ে গণপরিবহনকে আগের ভাড়ায় ফেরানো হয়েছে, শর্তগুলো মানা হয়নি। বিআরটিএর পক্ষ থেকে জোরালো তদারকির কথা বলা হলেও তা দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রকাশিত খবরে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও করেছেন যাত্রীরা। নগরীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের চিত্রও দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহন এভাবে চলাচল করলে তাতে অতিরিক্ত সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। তাঁদের মতে, সামান্যতম উপেক্ষা নিজের ও আশপাশের মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে বিপদ আছে। মাস্ক পরা, যেখানে-সেখানে থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, পরস্পর নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটা মেনে চলা তাই জরুরি, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের ‘নতুন স্বাভাবিক’ ব্যবস্থায় ফিরতে হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার যে নিয়ম-তা মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারসহ সকলকে সচেতনভাবে গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে।