গণমাধ্যম নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ অনাকাক্সিক্ষত

26

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী


উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন অগ্রগতির বিশ্বস্বীকৃত অর্জন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে কতিপয় রাষ্ট্র-সংস্থা-গণমাধ্যম-ব্যক্তিবিশেষের প্রচÐ গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসৎ-অযোগ্য-অদক্ষ এবং দেশের স্বার্থ বিসর্জনে সিদ্ধহস্ত পদলেহনে বশীভূত গোষ্ঠীসমূহের মনোরঞ্জনে বা তাদের দিয়ে অনৈতিক আধিপত্য-ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারে ফ্যাসিস্টদের আগ্রাসী আক্রমণ গভীর উদ্বেগের সাথে দেশবাসী অবলোকন করছে। একদিকে রাজনৈতিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে সামগ্রিক বাজারব্যবস্থায় অশুভ অপকৌশল বাস্তবায়নে তৎপর রাষ্ট্রসমূহ নানা উপায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টের কুৎসিত পন্থা অবলম্বন করে চলছে। তাদেরই কদর্য ইচ্ছাপূরণে দু একটি অর্থলিপ্সু গণমাধ্যম বিভ্রান্তমূলক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এধরনের হস্তক্ষেপ বা যাচাই-বাছাই না করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির হীন উদ্দেশ্যে এসব কুচক্রীর চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র সচেতন মহল যথার্থ অনুধাবন করলেও প্রত্যাখ্যাত সাম্প্রদায়িক-সামরিক শক্তির প্ররোচনায় স্বল্প-অর্ধ-কুশিক্ষিত জনগণের মধ্যে এধরনের অপপ্রচার অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক।
এটি সর্বজনবিদিত যে, যে কোন জাতিরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনে কল্যাণ-অকল্যাণকর নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার পদ্ধতি পরিচালিত হয়। সমগ্র জনগোষ্ঠীর সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে রাষ্ট্রব্যবস্থা সমৃদ্ধ হয়। উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত দেশসমূহে জাতির প্রত্যাশিত আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলনে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের সফলতা-সার্থকতার মাঙ্গলিক বৈশিষ্ট্য উন্মোচিত হয়। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির নিরন্তর পরিক্রমায় সরকারি ও বিরোধী দলের অবস্থান সকল সময়ে পারস্পরিক সহমর্মীতা-সৌহার্দ-সম্প্রীতি ও আস্থার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির সমীকরণ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। সভ্যতার মৌলিক অনুষঙ্গ নীতি নৈতিকতা-মানবতা-অসাম্প্রদায়িকতা-জাতীয় আদর্শের স্খলন সমৃদ্ধ রাজনীতির পরিবর্তে অপসংস্কৃতির মোড়কে পুরো রাজনৈতিক পরিবেশকে করে কলুষিত। প্রত্যেক দায়িত্বশীল সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরাজিত-বিভাজিত বিপক্ষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য পরামর্শকে প্রাধান্য দেওয়া। তবে কোন সরকারই নূন্যতম এটুকু আশা পোষণ করে না; শুধুমাত্র বিরোধীতার কারণে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার কূটকৌশল অবলম্বন ও দেশবিরোধী প্রচার-প্রচারণায় জনগণকে বিভ্রান্ত করে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক উন্নয়নের গতিধারা রুদ্ধ হোক।
মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে পাকিস্তানি সামরিক হায়েনাদের অন্ধ অনুসারী নরপশুতুল্য মানুষরূপী দানবদের অশুভ তৎপরতা জাতির ঘৃণার সাথে অবলোকন অব্যাহত রয়েছে। হত্যা-গণহত্যা-ধর্ষণ-লুট-অগ্নিসংযোগ ও সমগ্র বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার নষ্ট পরিকল্পনা কার্যকারিতায় ব্যর্থ অন্ধকারের পরাজিত শক্তিরা অতিশয় বেপরোয়া। ছদ্মবেশী-বর্ণচোরা-নাগ নাগিনীরা মিথ্যাচার-জালিয়াতি-প্রতারণা-অভিনয়শৈলী-ঘৃণ্য লেনদেনে লবিং-তদবিরের মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে প্রায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান-সংস্থার ঊর্ধ্বতন পদ-পদবী-পদক দখলে নিয়েছে বলে প্রবল জনশ্রæতি রয়েছে। গোপন যোগসাজসের মাধ্যমে এরাই সরকারের বিরুদ্ধে সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের পিছনে গভীরভাবে জড়িত কিনা; চৌকস তদন্ত দলের মাধ্যমে সত্য-বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণে এদের চিহ্নিত করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
অতিসম্প্রতি কথিত সাংবাদিকতার আড়ালে অপসাংবাদিকতায় জঘন্য বিশ্বাসীরা সংবাদপত্র-টেলিভিশন চ্যানেল-ফেইসবুক-অনলাইনভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্ভট গুজব-সন্ত্রাসের আশ্রয়ে দেশে-বিদেশে জাতির ভাবমূর্তি ভূলুন্ঠিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। দেশের প্রায় প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহে সরকার বিরোধী পক্ষের শক্ত অবস্থান সর্বত্রই অনুভূত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যসূত্রে জানা যায়, বিরোধী পক্ষের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক দিনকাল পত্রিকার প্রকাশক কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করা, ফৌজদারী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত অফিসের ঠিকানা ও ছাপাখানা পরিবর্তন করায় ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিলের আদেশ জারি করা হয়। পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ গত ২৯ ডিসেম্বর প্রেস কাউন্সিল বোর্ড বরাবর আপীল করার পাশাপাশি পত্রিকার প্রকাশনাও চালিয়ে যায়। আপীল আবেদনের কয়েক দফা শুনানির পর ১৯ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধের বিরুদ্ধে করা আপীলটি বাতিল করে দেয়। সরকারের সামন্যতম প্রভাব ব্যতিরেকে পরিপূর্ণ আইনি পন্থায় প্রতিষ্ঠিত আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহল বিশেষ বিষয়টিকে বিরোধী শক্তির কন্ঠস্বর স্তব্ধ করার অপকৌশল হিসেবে সরকারকে অভিযুক্ত করছে।
বিশ্বখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকা, জাতিসংঘসহ কতিপয় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এতদ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করা হচ্ছে যা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি অবান্তর ইস্যুতে পর্যবসিত। রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বাংলাদেশের উদ্ভূত নানা সংকট সমাধানে কোনরূপ দৃশ্যমান ভূমিকা পালন না করে অহেতুক উল্লেখ্য নেতিবাচক প্রচারণা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। স্ব স্ব দেশে অস্ত্র-জ্বালানি-খাদ্য সরবরাহে ইচ্ছাকৃত নির্দয় প্রাচীর তৈরি ও অনুন্নত-উন্নয়নশীল বিশ্বের হতদরিদ্র মানুষদের বুভুক্ষু রাখার হিং¯্র কৌশলের দায় না নিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতার অপব্যবহারে নানা দেশে অস্বস্তিকর রাজনৈতিক পরিবেশ নির্মাণ মানবতা বা মনুষ্যত্বের পরিচায়ক নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মুসলিম দেশসমূহে শিশু-কিশোর-নারী-পুরুষ নির্বিচারে হত্যা-ভয়ঙ্কর অপরাধীদের কাছ থেকে গণতন্ত্র-মানবাধিকারের সবক সভ্য মানুষের কাছে পরিত্যাজ্য। একপেশে কোন দল-গোষ্ঠী-অপসাংবাদিকতায় পারদর্শী গণমাধ্যমের পক্ষে সাফাই গাওয়া কতটুকু মর্যাদাপূর্ণ তা ভেবে দেখার বিষয়। মহান ¯্রষ্টার অপার কৃপায় লালসবুজ পতাকার স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করার যেকোন অপপ্রয়াস বুমেরাং হয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা নিরন্তর অভিশপ্ত থাকবেই – এটিই ইতিহাসের শিক্ষা।
২০১৪ সাল ১০ নভেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আল জাজিরা গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক -স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে আসছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের ধারাবাহিক নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত সংবাদ উপস্থাপনের মাধ্যমে এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই ছিল তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধীদের পক্ষ অবলম্বন করে আল জাজিরার প্রচারিত দৃষ্টিভঙ্গি মূলত: এই বিচার কার্যক্রমকে স্তব্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে প্রভাবিত এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে অভিহিত করার দূরভিসন্ধি এজেন্ডায় নিষিক্ত হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন ঘটনাবলী নিয়েও আল জাজিরা নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সুস্পষ্ট বিগর্হণ অস্থিরতা তৈরিতে পরিবেশিত কথিত বিচ্যুত সংবাদ পরিবেশন বা ২০১১ সালের জানুয়ারিতে র‌্যাব কর্তৃক সাভারের একটি ইটভাটা থেকে শিশু ও নারীসহ শেকলবন্দী ৩০ জনকে উদ্ধার, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে গুম ও অপহরণের অসত্য সংবাদ, যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদÐের রায়ের পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা এবং কামারুজ্জামানের মৃত্যুদÐের রায়ের পর ‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে প্রচারিত সংবাদে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা যায় মর্মে বিকৃত সংবাদ পরিবেশন, ২০১৩ সালে ৫ মে হেফাজত ইসলাম’র শাপলা চত্বরের ঘটনায় সাধারণ করবস্থানের ভিডিও ও বাক প্রতিবন্ধী শ্রমিকের ছবি ব্যবহার করে হাজার হাজার লাশ দাফনের দাবি, রোহিঙ্গা ইস্যু-নিরাপদ সড়ক ও কোটা আন্দোলন নিয়ে লাগাতার মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন উল্লেখযোগ্য।
দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে ও পরেও দেশীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যম দেশ-সরকার বিরোধী প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয় ছিল। ১৯৭১ সালে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও সামাজিক বিপর্যস্ততায় দেশের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রার মান নি¤œগামী হয়ে সাধারণ অর্থনৈতিক কর্মকাÐ পিছিয়ে পড়ে। এ চরম অবস্থার শিকার হয়েছিল শিল্প শ্রমিক, ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষি শ্রমিক এবং নি¤œ বেতনভুক্ত মানুষ। ১৯৭৩ সালে তেল সঙ্কটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে সরকারের পক্ষে খাদ্য আমদানি দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। অধিকন্তু পরাজিত শক্তির দেশীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্তে যথাসময়ে খাদ্যশস্যের সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করে বাজারে চালের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য, স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণে সমস্যা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী বিশ্ব সম্প্রদায়ের অসহযোগিতা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা আরও জটিল করে তোলে। বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে শক্তিশালী একটি অশুভচক্র সেই কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল। মানবসৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ ছোবল সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছিল উত্তরবঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যর্থ করতে সচেষ্ট ছিল তৎকালীন সর্বাধিক প্রচারিত একটি দৈনিক। পত্রিকাটির ফটোগ্রাফার রংপুরের কুড়িগ্রামে এক হতদরিদ্র পরিবারের অনাহারী মেয়ে বাসন্তীকে ৫০ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ছেঁড়া জাল পরিহিত ছবি তোলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পত্রিকার প্রথম পাতায় ছেপেছিল। ছবিটি দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধুকে একজন ব্যর্থ শাসক প্রমান করে বঙ্গবন্ধুকে উৎখাত বা হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিল বলে দেশের আপামর জনগণের বদ্ধমূল ধারণা।
আমাদের সকলের জানা, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাংলাদেশে পত্রিকাগুলো ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তি-দলের পৃষ্ঠপোষক। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশকিছু সংবাদপত্রের প্রকাশ বন্ধ থাকে এবং অনেক পত্রিকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তত্ত¡াবধানে চলে যায়। পাকিস্তানের কথিত অখন্ডিত সুরক্ষায় সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে পত্রিকার কন্ঠরোধের অপচেষ্টায় ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬১ সালে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ১৮ থেকে নেমে এসে ১২টিতে অবস্থান নেয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে ছয়জন সংবাদকর্মীকে হত্যা করে দৈনিক দি পিপলস পত্রিকা ও পালাক্রমে ২৬শে মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক অফিস পাকিস্তান হায়ানাদের আক্রমণে লÐভÐ হয়ে পড়ে। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত সংবাদপত্রগুলো ছিল স্বৈর শাসকের নিয়ন্ত্রণে। সে সময় স্বৈরশাসকের সমালোচনামূলক সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে প্রায় ৫০টি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালের স্বৈরশাসনের পতনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬, ১৭ এবং ১৮ নং ধারা অবলুপ্ত এবং সেন্সরশিপ ও প্রকাশনা নিষিদ্ধ সংক্রান্ত কালো আইন বিলুপ্ত করে। ঐ সময় প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্ট সংশোধন হওয়ায় রেকর্ড সংখ্যক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও প্রকাশনার পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি)’র তথ্যানুসারে আক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত দেশের মোট পত্র-পত্রিকার সংখ্যা ৩১৭৬টি। এর মধ্যে দৈনিক পত্রিকার ১২৭৯টি, সাপ্তাহিক ১১৯৯ টি, পাক্ষিক ২১২ টি, মাসিক ৪৩৭ টি, দ্বিমাসিক ৯টি, ত্রৈমাসিক ৩২টি, চতুর্থমাসিক ১টি, ষান্নাষিক ২টি এবং বার্ষিক ২টি।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে; বৈশ্বিক ও জাতীয় প্রেক্ষাপটে অতিস্বল্পসংখ্যক গণমাধ্যম এবং গুটিকয়েক ব্যক্তি সাংবাদিক মুখোশধারী অপসাংবাদিকতায় লিপ্ত থেকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চরিত্রহনন, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নানাবিধ অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিহিংসা-বিদ্বেষমূলক-প্রতিশোধপরায়ণ হয়রানির নিকৃষ্টপন্থার আবরণে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে ব্যতিব্যস্ত থাকে। এসব কথিত কবি-সাংবাদিক-কলামিস্ট-প্রাবন্ধিকগোষ্ঠী প্রণোদিত এবং প্রণমিত সহায়তাপ্রাপ্ত হয়ে তাদেরই কৌশলপত্র বাস্তবায়নে পবিত্র সাংবাদিকতা-গণমাধ্যম জগতকে বিশ্বব্যাপী করছে নিদারুণ অপবিত্র ও কলুষিত। সময়ের জোরালো দাবি- গণমাধ্যমের সত্যনিষ্ট লেখনি, প্রতিবেদন, সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, মনন-সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ তারুণ্যের অদম্য সক্ষমতার অবগাহনে এক আধুনিক যুগের ব্যাবর্তন সংস্কৃতির উৎসমূলে থাকবে এবং প্রতিটি সভ্য জাতিগোষ্ঠীতে সুশাসনের সংসর্গ প্রতিস্থাপন করবে। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক অদম্য উন্নয়ন অগ্রগতির বিশ্বস্বীকৃত আকাশচুম্বী অবস্থান, বৈশ্বিক দুঃসময়েও মেধা-প্রজ্ঞা-দেশপ্রেমের আচ্ছাদনে গণমুখী সরকারের সকল কর্মযজ্ঞ সর্বক্ষেত্রে উচ্চকীত-প্রশংসিত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চলমান ঊর্ধ্বগতি-পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ সরকারের সফলতার ধাপকে ক্রমান্বয়ে উন্নীত করে চলছে। সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা জঘন্য প্রকৃতির মুখোশধারী নষ্টচরিত্রের ছদ্মবেশী ঈর্ষান্বিত বর্ণচোরাদের কালক্ষেপণ না করে অচিরেই এদের বিতাড়নে ব্যর্থ হলে সরকার বিরোধী প্রচার-প্রচারণার দুরূহ দৃশ্যপট অধিকমাত্রায় বিস্তৃত হবে – নিঃসন্দেহে তা বলা যায়।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চ.বি