‘গণতন্ত্র সূচকে’ বাংলাদেশের ৪ ধাপ উন্নতি

45

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ‘কারারুদ্ধ’ হয়ে পড়েছে বলে বিরোধী দল অভিযোগ করে এলেও আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ‘গণতন্ত্র সূচক’। পাঁচটি মানদন্ডে ২০১৮ সালের পরিস্থিতি বিচার করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গতকাল বুধবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থানের চার ধাপ উন্নতি হয়েছে। ৫.৫৭ স্কোর নিয়ে এই সূচকে বাংলাদেশ এবার রয়েছে ১৬৫ টি দেশ ও দু’টি অঞ্চলের মধ্যে ৮৮তম অবস্থানে।
গতবছর এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫.৪৩; এক ধাক্কায় আট ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ নেমে গিয়েছিল ৯২তম অবস্থানে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০০৬ সালে এই সূচক প্রকাশ শুরু করার পর সেটাই ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে অবস্থান। এবারের সূচক বলছে, গণতন্ত্রের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ভারত ৭.২৩ স্কোর নিয়ে তালিকার ৪১তম এবং শ্রীলঙ্কা ৬.১৯ স্কোর নিয়ে ৭১তম অবস্থানে রয়েছে। ভারতের এক ধাপ উন্নতি হলেও শ্রীলঙ্কা পিছিয়েছে ৯ ধাপ।
এছাড়া ৫.৩০ স্কোর নিয়ে ভুটান ৯৪তম; ৫.১৮ স্কোর নিয়ে নেপাল ৯৭তম; ৪.১৭ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ১১২তম; ৩.৮৩ স্কোর নিয়ে মিয়ানমার ১১৮তম এবং ২.৯৭ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান ১৪৩তম অবস্থানে রয়েছে। খবর বিডিনিউজের
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, তাদের সমীক্ষায় ২০১৮ সালে বৈশ্বিক স্কোর হয়েছে আগের বছরের মতই ৫.৪৮। অর্থাৎ মোটা দাগে বিশ্বে গণতন্ত্রের দশায় বড় কোনো নড়চড় হয়নি। এবারের সূচকে যেখানে ৪২ টি দেশের অবস্থানের অবনতি ঘটেছে, সেখানে ৪৮ টি দেশ নিজেদের রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে পেরেছে। উন্নতির ছাপ পড়েছে এশিয়ার দেশগুলোতেই বেশি।
তবে ২০১৭ সালের চেয়ে কম মানুষ গতবছর গণতন্ত্রের সুফল পেয়েছে। কোনো না কোনো ধরনের গণতন্ত্র বিরাজ করছে এমন দেশে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ২০১৮ ছিল বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৭.৭ শতাংশ। আগের বছর এই হার ৪৯.৩ শতাংশ ছিল।
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার- এই পাঁচ মানদন্ডে একটি দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১০ ভিত্তিক এই সূচক তৈরি করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। সব সূচক মিলিয়ে কোনো দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে সেই দেশে ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
স্কোর ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে হলে সেখানে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’, ৪ থেকে ৬ এর মধ্যে হলে ‘মিশ্র শাসন’ এবং ৪ এর নিচে হলে সে দেশে ‘স্বৈরশাসন’ চলছে বলে ধরতে হবে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এবারের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালে তাদের ভাষায় ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ ছিল মাত্র ২০ টি দেশে, যেখানে বিশ্বের মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ মানুষের বসবাস। ৯.৮৭ স্কোর নিয়ে গতবারের মতই এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। শীর্ষ দশে আরও আছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ড। যুক্তরাজ্য ও জার্মানি পূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় থাকলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের স্থান হয়েছে গতবারের মতই ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের’ দেশের তালিকায়।
এই ভাগের ৫৫ দেশের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কা। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৩.২ শতাশের বসবাস এসব ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের’ দেশে। বাংলাদেশকে এই প্রতিবেদনে রাখা হয়েছে মিশ্র শাসনের দেশের তালিকায়, যেখানে ভুটান, নেপাল, পাকিস্তানসহ ৩৯ টি দেশ রয়েছে। এসব দেশে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৬.৭ শতাশের বসবাস।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিবেচনায় বিশ্বের ৩৫.৬ শতাংশ মানুষ এখন স্বৈরশাসনে জীবন কাাঁচ্ছে। তালিকার তলানিতে আছে উত্তর কোরিয়া। এছাড়া মিয়ানমার, চীন, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, ইরান ও সৌদি আরবকেও একই কাতারে রাখা হয়েছে।