গণকমিশন গঠনের প্রতিক্রিয়া

13

পূর্বদেশ ডেস্ক

জঙ্গি অর্থায়ন ও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে কাজ করছে এমন অভিযোগ এনে ১১৬ ওয়ায়েজিনের (ধর্মীয় বক্তা) একটি তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে ‘গণকমিশন’। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি কঠিন হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, সরকার যদি এখনই শক্ত হাতে এই ভুঁইফোঁড় সংগঠনকে দমন না করে তাহলে ইসলাম প্রিয় আপামর তৌহিদী জনতা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত গণকমিশনের করা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই ভুঁইফোঁড় সংগঠনটি বরাবরের মতোই নিজেদের ইসলাম বিদ্বেষী চেহারা জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। তাদের এই শ্বেতপত্র যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং মিথ্যা তথ্যে ভরপুর, এটি সমগ্র দেশবাসীর সামনে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার।
হেফাজত আমির বলেন, শাহবাগী এই সংগঠন প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নানাভাবে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চালিয়ে আসছে। সর্বশেষ তারা দেশবরেণ্য ওলামা-মাশায়েখ এবং ইসলামী আলোচকগণের এ তালিকা প্রকাশ করে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে। তাছাড়া দেশবরেণ্য ইসলামী আলোচকদের নামে অমূলক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ করে তথাকথিত গণকমিশনের দায়িত্বশীলরা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতাই হারিয়েছে। এসব বানোয়াট বক্তব্যের কারণে দেশে চরম অশান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতএব, যারা এসব উস্কানীমূলক কর্মকান্ড করছে, সরকার যেন তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করে।
হেফাজত আমির আরও বলেন, আজ দেশ ও জাতির জন্য পরম কল্যাণকর এ কাজটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে তথাকথিত গণকমিশন। দুদকে এই মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে তারা দেশ-জাতি, সমাজ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তারা আলেম উলামাদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চক্রান্ত করছে।
অপরদিকে ‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের’ তালিকা নিয়ে হেফাজতে ইসলাম যে বিবৃতি দিয়েছে, তা হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছে মৌলবাদী ও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার গণকমিশনের সদস্য সচিব তুরিন আফরোজ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হেফাজত আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী স্বাক্ষরিত বিবৃতি আমাদের নজরে এসেছে। দীর্ঘ এক বছর মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সাংবাদিক, মানবাধিকার নেতা এবং হেফাজত নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বক্তব্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আমাদের শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধান ও অভিযোগ সত্য কি না, সেটা প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।’
অভিযোগ প্রমাণ হোক বা না হোক, আগেই হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের মে মাসের মতো যে ‘ভয়ংকর’ ভাষায় হুমকি দিয়েছে, তা বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের অংশ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘হেফাজতে ইসলাম আমাদের হুমকি দিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
গত বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ধর্মীয় উন্মাদনার তদন্তে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’ গঠিত হয়। সম্প্রতি তারা ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে।
গণকমিশনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল ওই শ্বেতপত্র এবং ১০০ সন্দেহভাজন ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ ব্যক্তির তালিকা দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর হাতে তুলে দিয়েছেন। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়েছে তারা। গতকাল দুদক থেকে বেরিয়ে তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘একহাজার মাদ্রাসার তথ্য-উপাত্তের ওপর তদন্ত করে এই ১০০ ধর্ম ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়েছে। তারা মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধ করেছেন। তাদের অর্থনৈতিক জবাবদিহির আওতায় আনা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’
হেফাজত আমিরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গণকমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশের নামে হেফাজতে ইসলাম যে তান্ডব ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে দেশবাসী অবগত আছেন। সেদিন তারা মহাখালীতে নির্মূল কমিটির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সংগঠনের বহু নেতা-কর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গুরুতর আহত করেছে। সেই অপরাধের মামলা এখনো বিচারাধীন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করার ঘোষণাসহ গত বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন বানচালের জন্য সারা দেশে হেফাজতিদের তান্ডবে জড়িত হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাসী শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যা আমাদের এবারের শ্বেতপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এসব সন্ত্রাসের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।