খোলা ম্যানহোল ও খাল-নালা নিয়েই যত বিবাদ

28

এম এ হোসাইন

খোলা ম্যানহোল মৃত্যুকূপ হয়ে আছে নগরজুড়ে। একইভাবে অরক্ষিত খালও মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে খোলা ড্রেন ও অরক্ষিত খালে। দোষারোপ চলছে এক সংস্থার বিরুদ্ধে অন্য সংস্থার। দায় চাপিয়ে দায়মুক্তির চেষ্টা করা হলেও অংরক্ষিত ও উন্মুক্ত এসব মৃত্যুকূপ সরানোর কোনো পদক্ষেপ নেই কারো।
নালার ওপর স্ল্যাব না থাকা, খাল-নালা নিয়মিত পরিষ্কার না করাসহ পর্যাপ্ত সড়কবাতির অভাবে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। তবে এসব কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর বিষয়টি নিয়ে নেই কোনো মাথাব্যথা। সংস্থাগুলো শুধু একে অন্যকে দোষারোপে ব্যস্ত। ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য যে পদক্ষেপ জরুরি সেগুলোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বারবার একই ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নালা-খালে ডুবে মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দায়ী করছে। আবার রাস্তাঘাট খুঁড়ে বেহাল করা ও গর্তের জন্য ওয়াসার কাটাকাটিকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক নালা ও খালে পড়ে নিহত দুই ব্যক্তির দায় সিডিএ’র বলে দাবি করেছে চসিক। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় সিডিএকে দায়ী করা হলেও এসব নালা সংস্কার চসিকের কাজ বলে জানায় সিডিএ। দায় এড়ানোর এমন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য মানতে রাজি নয় নগরবাসী। দোষারোপ বাদ নিয়ে ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটার জন্য কোন সংস্থা কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেটা জানতে চায় নগরবাসী।
চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। এটার ম্যানটেনেন্সের দায়িত্ব সিডিএ’র। যে নালাতে পড়ে ছাত্রী মারা গেল, আমাদের প্রশস্ত নালাটা দেড়ফুট হয়ে গেল। আমি মনে করি এটা চরম অবহেলা, অবহেলার জন্য এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে নিচে আমাদের নেট ছিল, সেটাও চলে গেছে। এ ঘটনায় আমি মর্মাহত। যারা কাজ করছে, ওদের উচিত ছিল এখানে সেফটি দেয়া।
ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ খালে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার পরও সিডিএ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল চসিক। উন্মুক্ত খালের পাশে প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল তখন। একমাসে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি খোলা ম্যানহোলে কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেয়নি। সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ না থাকায় ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে।
প্রকল্পের কাজের সাথে আগ্রাবাদে সংঘটিত দুর্ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের তদারক সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, খালের উপর কোনো স্ল্যাব বা প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে না। আমরা চাক্তাই খালে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা রাখছি। কিছু জায়গায় প্রতিরোধ দেয়াল থাকবে।
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৯৪৬ কিলোমিটার নালা রয়েছে। এছাড়া নগরীর আওতাধীন ৫৭টি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬১টি কিলোমিটার। এসবের মধ্যে কি পরিমাণ স্ল্যাববিহীন নালা বা ম্যানহোল খোলা আছে বা কতটুকু খাল অরক্ষিত অবস্থায় আছে তার কোনো তথ্য নেই চসিকের কাছে। তবে নগরীর বিরাট একটি অংশের নালায় স্ল্যাব নেই, খোলা অবস্থায় আছে ম্যানহোল। অনেক জায়গায় স্ল্যাবগুলো আছে খুবই নাজুক অবস্থায়। নালার উপর স্ল্যাব না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে গেলে ফুটপাত, নালা আর খাল সবই একাকার হয়ে যায়। রাস্তা আর খাল বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে যাওয়া অবস্থায় গত ২৫ আগস্ট সকালে মুরাদপুর এলাকায় খালে পড়ে তলিয়ে যান সালেহ আহমদ নামে এক সবজি ব্যবসায়ী। এখনো পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি। সর্বশেষ সোমবার রাত ১০টায় নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় নালায় পড়ে মারা যান আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহেরিন মাহবুব সাদিয়া। নালায় পড়ে যাওয়ার ৫ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থল থেকে ৩০ গজ দূর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। নালা এবং খালে পড়ে গত তিনমাসের ব্যবধানে প্রাণ গেছে ৫ জনের। এতো প্রাণহানির পরও সেবাসংস্থাগুলোর টনক নড়েনি। অরক্ষিত মৃত্যুফাঁদ নিয়ে কোনো সংস্থা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। নগরবাসীর দাবি, দায় চাপানোর সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে সিডিএ চসিকের নিরাপদ ফুটপাত নিশ্চিত করাই হোক প্রধান কাজ।