খোলা থাকবে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার দাবি রাখে

31

 

দেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি বেশ আগে থেকে বলে আসছিলেন শিখন ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে এবার রমজানেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখার কথা ঘোষণা করেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি সাংবাদিকদের জানান, অন্য বছর রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এবার ক্লাস হবে। ঈদের যে স্বাভাবিক ছুটি সেগুলো বহাল থাকবে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অধ্যুষিত দেশ হিসেবে স্বাধীনতাত্তোর থেকে পবিত্র রমজানে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। এর কিছু যৌক্তিক কারণও আছে। প্রথমত মুসলিম শিক্ষক, ও অভিভাবকরাতো রোজা রাখেনই এরসাথে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ রোজা রাখেন। এ রোজা শরীর, মন ও নৈতিক শিক্ষার জন্য বড় উপায় বিধায় সরকার সুবিবেচনাপ্রসূত রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করে আসছে। তবে মাঝেমধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি ও কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে রমজানের প্রথম সপ্তাহ বা দশদিন খোলা রাখা হলেও এবারই প্রথম রমজানে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে সংশয় ও সন্দেহ দূর করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোভিড ’১৯ ভাইরাসজনিত কারণে প্রায় দুইবছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। এতে শিখন ফলের ঘাটতি হয়। শিখন কার্যক্রমের ঘাটতি পূরণে রমজান মাসে অর্থাৎ এপ্রিলের ২৬ তারিখ পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে। প্রজ্ঞাপনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়। প্রাথমিকের ক্ষেত্রেও প্রায় অনুরূপ কথা বলা হয়েছে। তবে প্রাথমিকে প্রজ্ঞাপন প্রকাশের সাথে সাথে রমজানে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে রাজধানী ঢাকার উচ্চ আদালতে। রিটে ২০ রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ এ রিট করেন। শিক্ষাসচিব ও প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে। রিটে পবিত্র মাহে রমজান মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার সরকারের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং রমজান মাসে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।রিট আবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এখন ভয়াবহ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সীমাহীন গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা অবৈধ এবং এর আগে সবসময় পবিত্র মাহে রমজান মাসে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তাই এ অবস্থায় স্কুল খোলা না রাখার নির্দেশনা চাইছি। রিটের বক্তব্য যৌক্তিকতা দাবি রাখে। একদিকে চৈত্রের প্রচন্ড গরম অপরদিকে রমজানের রোজা, অপরদিকে রাতের চেয়ে দিন অনেক বড়। এ অবস্থায় রোজা রেখে শিক্ষক ও শিক্ষাথীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ দিতে বা নিতে যাওয়া বড় কথা নয়, বরং এ পাঠ দেয়া-নেয়ার মধ্যে আন্তরিকতা ও মনোযোগ কতটুকু থাকবে, তা বিবেচনার বিষয়। সরকার বলেছেন দুই বছরের শিখন ঘাটতি কমাতে রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছ্। বাস্তবে ২০ তারিখ পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও পহেলা বৈশাখের বন্ধ বাদ দিলে দেখা যাবে মাত্র ষোল দিন। এ ষোলদিনে কি দু বছরের ঘাটতি পূরণ হবে? এছাড়া রমজানের খোলা রাখা এবং পাঠদান নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যে রুটিন দিয়েছে, তা নিয়েও শিক্ষক ও অভিভাকদের আপত্তি রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে পাঠদানে কতটুকু অগ্রসর বা সুফল অর্জন হবে-তা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে কোনরকম অর্জনই না থাকে তবে বন্ধ রাখাই শ্রেয়। আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করবেন।