খেলারমাঠে খেলা হোক জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য

25

‘খেলার মাঠে মেলা নয়, খেলারমাঠে খেলা হোক’ সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগ চট্টগ্রামবাসীর নজর কাড়ছে। অনেকে খেলার মাঠ উদ্ধারে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানকে ত্রাতার ভ‚মিকায় দেখতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন। চট্টগ্রামবাসীর অনেক দুঃখের মধ্যে এটিও ছিল অন্যতম। নগরীর চারদিকে ব্যাঙের ছাতার মত প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ভবনের ভাড়ায় কিংবা ফ্ল্যাট কিনে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন খেলার মাঠ। এমনকি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে খেলার মাঠ দূরে থাক, ক্যাম্পাসের উপরে নিচে রয়েছে মার্কেট। সামনে সড়ক, যেখানে লেখাপড়ার পরিবেশ বলতে শূন্যের কোটায়। সরকারি ও বেসরকারি বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঠ আছে তবে তা খেলার উপযোগী নয়। সর্বোপরি চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম, পলোগ্রাউন্ডসহ বড় পরিসরে খেলাধূলা করার যেসব মাঠ রয়েছে তাও বারো মাসে তের পার্বনের দখলে থাকে। এখানে বছরের অধিকাংশ মাসজুড়ে মেলার আসর থাকে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১৮ নং বাকলিয়া ওয়ার্ড এর কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বড় পরিসরে একটি খেলার মাঠ গড়ে তুলেছিল, যেখানে খেলাধূলাসহ চসিকের জাতীয় দিবসগুলোর আয়োজন হত, কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে এ মাঠটিও পরিত্যাক্ত। চট্টগ্রামে খেলাধূলার মাঠ একেবারে সংকোচিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয়। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম নগরীর তরুণ ও ছাত্র সমাজ আবারও প্রাণ ফিরে পাবে। তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ খেলাধূলার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে যেভাবে নৈতিক অবক্ষয় ও সমাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, তা থেকে কিছুটা হলেও তরুণ সমাজকে রক্ষা করা যাবে।
নগরবাসী আশাবাদী যে, জেলা প্রশাসন মাত্র কয়েকদিন আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আউটার স্টেডিয়াম খেলার জন্য উপযুক্ত করা হবে। এখানে আর মেলা হবে না। ঘোষণার একসপ্তাহের মধ্যে তা কার্যকর করার পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রশাসক। যেমন কথা তেমন কাজ-এমনটি বাস্তবতা এখন খুব একটা দেখা না গেলেও জেলা প্রশাসন তার দায়িত্বশীল ভ‚মিকা নগরবাসীকে অনুপ্রাণিত করেছে। অবশ্যই জেলা প্রশাসক মেলা বন্ধের কথা বলেন নি, বরং মেলার জন্য একটি স্থায়ী মাঠের ব্যবস্থা তিনি করতে যাচ্ছেন, আর তা হলো সরকারের উদ্ধারকৃত জায়গা জঙ্গল সলিমপুর। আমরা মনে করি, জায়গা মূল শহর থেকে একটু দূরে হলেও একটি স্থায়ী মেলার মাঠের দাবী দীর্ঘদিনের। এ সিদ্ধান্ত সেই দাবী পূরণে ভ‚মিকা রাখবে। এছাড়া আমাদের মনে রাখতে হবে, খেলা ও মেলা দুটোই বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প পথ বের করা জরুরি। জেলা প্রশাসন সেই পথ বের করেছেন এখন দরকার নগরবাসী ও মেলার সাথে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা। গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক আউটার স্টেডিয়াম পরিদর্শন করে বলেন, খেলার মাঠে আর কোনভাবেই মেলা হবে না। মাঠগুলো উদ্ধার করে সেখানে খেলা ফিরিয়ে আনা হবে। পাশাপাশি তৈরি করা হবে নতুন মাঠ। জঙ্গল সলিমপুরে আমাদের যে জায়গা রয়েছে সেখানেই সব মেলার আয়োজন করা হবে। নগরীর অভ্যন্তরে আউটার স্টেডিয়ামের যে মাঠ রয়েছে এরইমধ্যে সেটি আমরা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ও সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করেছি। মাঠের যে অংশটুকু রয়েছে সেটি লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। আমরা সেখানে লাল খুঁটি লাগিয়ে দেব। মাঠের ভেতরে যদি কোনো স্থাপনা থাকে সেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। একটি যৌক্তিক সময় বেঁধে দেয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে স্থাপনাগুলো সরাতে হবে। অন্যথায় আমরা অ্যাকশনে যাব। মাঠের মধ্যে যেসব স্থাপনা থাকবে সবগুলোই অপসারণ করা হবে। এছাড়া তিনি জেলার ১৫ উপজেলায় ১৯১টি ইউনিয়নেও ১৯১টি খেলার মাঠ তৈরির সিদ্ধান্তের কথা জানান। সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন জেলা প্রশাসকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি বলেছেন, খেলার মাঠ থেকেই তো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় তৈরি হবে। শুধু ক্রিকেট নয়, সব ধরনের খেলায় গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। এখানকার খেলার মাঠ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পলোগ্রাউন্ড মাঠ নিয়ে কাজ করছি। সেখানে সারা বছর যাতে খেলোয়াড়রা প্রশিক্ষণ নিতে পারে। আউটার স্টেডিয়ামের সীমানা নির্ধারণ করে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হবে। এরপর সীমানা প্রাচীর করে দেয়া হবে। ওয়াকওয়ের সিস্টেম থাকবে, যাতে বয়স্করা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় মানের খেলোয়াড় তৈরি করতে হলে ক্রিকেট, ফুটবল, হকিসহ আলাদা আলাদা পাঁচটি অনুশীলন মাঠ প্রয়োজন। বিশেষায়িত মাঠ না হলে ক্রীড়াঙ্গনে প্রকৃত সুফল মিলবে না। জেলা প্রশাসক ও সিজেকেএস সভাপতি এই বিশেষায়িত মাঠের গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন। আশা করছি খুব দ্রæতই চট্টগ্রামের খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীরা ফুটবল-হকি ও নারীদের জন্য পৃথক মাঠ পাবে। আমরা জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আশাকরি শিগগিরই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। নগরীর মাঠগুলো হয়ে উঠবে একটি তরুণ-যুবকদের মানস গঠনের কেন্দ্র।