খুটাখালীতে চলছে বালি বিক্রি ও পাহাড় কাটার মহোৎসব!

4

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের পাহাড়ী বাসিন্দাদের আতংকের নাম নুরুল ইসলাম। যার নাম শুনলেই পাহাড়ী গ্রামের বাসিন্দারা ভয়ে তটস্থ থাকে। প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে এলাকায় নুরুর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না। বিগত ক’বছর ধরে ইউনিয়নের বিশাল পাহাড়ী এলাকা কোনাপাড়ায় আস্তানা গড়ে তোলে নুরু বনবিভাগের জমি ও ছড়া থেকে অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন, পাহাড়ি এলাকায় ডাকাতি, পাহাড়ে বসবাসকারী স্থানীয়দের নির্যাতন, বনবিভাগের গাছ চুরি, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পসহ এমন কোন অপকর্ম নাই যা সংগঠিত করছেনা। এসবের পরও বহু অপকর্মের সর্দার একাধিক মামলার পরোয়ানাভূক্ত আসামি নুরু এখনো অধরা রয়ে গেছে। তাকে রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করছেনা পুলিশ। জানা গেছে, উপজেলার খুটাখালী ইউপির কোনাপাড়া এলাকার মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরু ডাকাতের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, হত্যা, ডাকাতি ও বন মামলাসহ অর্ধডজনের অধিক মামলা রয়েছে।
পাহাড় বেষ্টিত এলাকা হওয়ায় পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন অপরাধ কর্ম পরিচালিত করলেও ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যায় এ অপরাধী। খুটাখালী ইউপির পাগলীরবিল তথা কোনাপাড়ার অসহায় লোকজন তার অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে ওঠলেও ভয়ে মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত পায়না। সচেতন মহলও নিরবে সহ্য করে যায় তার নির্মম অত্যাচার আর নির্যাতন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডাকাত নুরু’র নেতৃত্বে শাহজালাল ও শাহেদকে নিয়ে পাহাড়ে গড়ে ওঠেছে একটি বাহিনী। তার বাহিনীর সাথে জড়িত রয়েছে খুটাখালী-ডুলাহাজারার বেশ কজন স্বীকৃত অপরাধী।
তাদের কাজ হল পাহাড়ে বসবাসকারী নিরহ লোকদের থেকে প্রথমে বসতভিটা দখল করে পরে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিক্রি করবে। নয়তো উচ্ছেদ করার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করা। ভিলিজার নামধরী নুরু এসব বনভূমি প্রতিনিয়তই প্লট আকারে বেচা-বিক্রি করছে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন চকরিয়া উপজেলার ফুলছড়ি রেঞ্জের খুটাখালী-মেদাকচ্ছপিয়া বন বিটের আওতাধীন বন বিভাগের বিপুল পরিমাণ জায়গায় সা¤প্রতিককালে নুরুর নেতৃত্বে বসতি নিার্মণের হিড়িক পড়েছে। নুরু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে বন বিভাগের সংরক্ষিত জায়গা বেচা-বিক্রি করে সরকারী জায়গা দেদারসে বেহাত করে দিচ্ছে।
গত কদিন ধরে ফুলছড়ি রেঞ্জের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারী বনভূমি থেকে বালি পাচার ও কোনাপাড়ায় প্রতিনিয়ত তৈরী করা হচ্ছে কাঁচাঘর বাড়ি। এর ফলে নিধন হচ্ছে বৃক্ষ, উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। নুরুর আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থাকা একাধিক সিন্ডিকেট বনভূমির জায়গা বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছে।
গত ১ বছরে এই দুই বনবিটের অন্তত একশ একর সংরক্ষিত বনভূমির জায়গা অবৈধ দখলে চলে গেছে। অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম নুরু’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা ও প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে সহকারী বন সংরক্ষক ফুলছড়ি (এসিএফ) দীপেন চন্দ্র দাশ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সবেমাত্র যোগদান করেছি। তবুও সংরক্ষিত বনভূমির অবৈধ জবর দখল ঠেকাতে তিনি ও তার অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক সজাগ রয়েছেন বলে জানান।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মু. জুবায়ের বলেন, তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।