খালে আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স

30

চট্টগ্রাম নগরীর ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা গতকাল বিকালে সিডিএ’র সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সভাপতিত্বে এতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি প্রধান অতিথি এবং সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বিশেষ অতিথি ছিলেন।
সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন- শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম শহরে স্থিত ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি খাল এবং প্রায় ১৬০০ কি.মি. ড্রেনের মধ্যে ৩০০ কি.মি. ড্রেন নিয়ে সিডিএ কাজ করছে। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে অবশিষ্ট খাল ও ড্রেনসমূহের কাজ সিটি কর্পোরেশনকে করতে হবে।
মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে গত কয়েক বছরব্যাপী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শহরে পূর্বে ৭২টি খাল ছিল। বর্তমানে ৫৭টি খাল বিদ্যমান রয়েছে, এর মধ্যে চউক কর্তৃক ৩৬টি খাল নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বারইপাড়া নামক ১টি নতুন খাল নির্মাণের কাজ করছে। শহরের ড্রেনসমূহের পাশাপাশি খালসমূহ ভরাট হয়ে আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক খালে কাজ করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করার কারণে খাল ও ড্রেনসমূহে পানি চলাচল সাময়িক বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। খালের ময়লা-আবর্জনা অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং জনসাধারণকে খালে ময়লা না ফেলার জন্য সর্তক ও সচেতন করতে হবে।
প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, খালের পাশের ঘরবাড়ির বাথরুম/টয়লেটসমূহের বর্জ্য সরাসরি খালে পতিত হওয়ার কারণে ময়লাসমূহ পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চ মাসের মধ্যে খালে কোন প্রকার বাঁধ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মাটি থাকবে না এবং পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হবে।
প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনসাধারণ যাতে ময়লা, আবর্জনা খালে না ফেলে সে বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনকে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। তিনি ঢাকা রমনা পার্কের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, মানুষের অভ্যাসকে পরিবর্তন করতে পারলে মানুষ আর খালে আবর্জনা ফেলবে না।
সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, প্রকল্পভুক্ত খাল ও ড্রেনের বাঁধ, ময়লা ও মাটি অপসারণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এবং বর্ষার পূর্বে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’র প্রধান প্রকৌশলী বলেন, চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়সমূহ থেকে বালি নেমে এসে খালসমূহ ভরাট হচ্ছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন নির্মাণ কাজের আবর্জনাও খালে পতিত হয়।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়সমূহ বিভিন্নভাবে বেদখল করে কাটা হচ্ছে। প্রয়োজনে বন বিভাগের সাথে সমন্বয় করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪০টি রেগুলেটর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৩টি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ১৭টি চউক নির্মাণ করছে। সিটি কর্পোরেশনকে চউকের ১৭টি রেগুলেটরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলে অভিজ্ঞ জনবল না থাকায় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে রেগুলেটরসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে ৪০টি রেগুলেটরই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’র প্রধান প্রকৌশলী জানান, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে রেগুলেটরসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব বেশি কঠিন বিষয় নয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড যতদিন প্রয়োজন, ততদিন প্রয়োজনীয় কারিগরী সহযোগিতা প্রদান করবে।
বাংলাদেশ সেনাবহিনীর প্রকল্প পরিচালক প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৩৬টি খালের মধ্যে ইতিমধ্যে ২০টি খালের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান এবং সমাপ্তকৃত খালসমূহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তরের বিষয়ে সভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রকল্প পরিচালক জানান, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক খালসমূহ বুঝে নেওয়া হলে আগামী ১ বছর সেনাবাহিনী কর্তৃক খালসমূহ পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সিটি মেয়রকে খালসমূহের দায়িত্ব গ্রহণের আহŸান জানালে মেয়র ২০টি খালের দায়িত্ব গ্রহণে সম্মতি প্রকাশ করেন।
সভায় সিডিএ’র ভারপ্রাপ্ত সচিব অমল গুহ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর প্রধান প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সিডিএ’র তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী এএএম হাবিবুর রহমান, ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন বিগ্রেডের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র সচিব খালেদ মাহমুদ, সিডিএ’র স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরীসহ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি