খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’

17

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও এখনো ‘ক্রিটিক্যাল’। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন তিনি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এখনো ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন তিনি (খালেদা জিয়া)। যদিও আল্লাহর রহমতে অনেক ইম্প্রুভ করেছেন। এখন তিনি রুম এয়ারে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন, অর্থাৎ রুমের মধ্যে তার অক্সিজেন লাগছে না।
তার প্রেসার, টেম্পারেচার, অক্সিজেন যেটাকে স্যাচুরেশন বলে এগুলো এখন আপাততভাবে আল্লাহর হুকুমে কিছুটা নরম্যালের দিকে চলে এসেছে। খবর বিডিনিউজের। দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত ৭৬ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধী রয়েছেন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এপ্রিল ২৮ থেকে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি রয়েছেন তিনি।
চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদন নাকচ করে দেয় সরকার।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ও দন্ডাদেশ স্থগিত করে যে শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তা শিথিল করে এখন তাকে বিদেশে যেতে দেওয়ার ‘সুযোগ নেই’।
মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, তার মূল কতগুলো বিষয় আছে যেগুলো এখনো বিপদজনক অবস্থার মধ্যে আছে। তার কিডনির সমস্যা আছে- দ্যাটস এ রিয়েল প্রবলেম, তার হার্টের সমস্যা আছে। যেটাকে ডাক্তাররা এখনো অত্যন্ত উদ্বিগ্ন আছেন, তারা চেষ্টা করছেন, তারা দোয়া করছেন।
আমরা দলের পক্ষ থেকে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে এভারকেয়ার হাসপাতাল তারা সর্বাত্মক আন্তরিকতা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করছেন। তারা কোনো কিছু বাকি রাখছেন না এবং তারা বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসছেন প্রতিনিয়ত। দেশের বাইরেও তারা যোগাযোগ রাখছেন বড় বড় চিকিৎসকদের সঙ্গে, সেভাবে তারা এখানে চিকিৎসা করার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা আপনারা জানেন, ইভেন দি প্রাইভেট হসপিটালস আর নট প্রোপারলি ইকুইপ্ট। একমাত্র এভারকেয়ার হাসপাতাল সবচেয়ে বেশি টেকনোলজিক্যাল দিক থেকে উন্নত। তারপরেও এনাফ না। ওরা নিজেরাই মনে করে যে, অনেক লিমিটেশনস আছে। সেই লিমিটেশনগুলো দেখে তখন উনার পরিবার উনাকে বাইরে নেওয়ার আবেদন করেছিল।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা ওই সময়ে খুবই সংযত ভাষায় কথা বলেছেন। উনার অবস্থা ওই সময় স্থিতিশীল ছিল।
হাসপাতালে আসার পর উনার পরিবার যখন বাইরে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলে তখন দেশনেত্রীর অবস্থা ভেরি ডিভিকাল্ট ছিল, ইট ওয়াজ ভেরি ক্রিটিক্যাল। ডাক্তাররা পর্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের আবেদনের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা (সরকার) এই আবেদন করার পরপর এমনভাবে কথা বললেন যে, সবাই আশাবাদী, জনগণসহ সকলে যে, দিয়ে দেবে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে হঠাৎ করে তাদের টোন বদলে গেল, তারা বলে দিলেন যে, আমরা দিতে পারছি না। কেন পারছেন না সে ব্যাপারে তারা যে যুক্তিগুলো দিলেন সেই যুক্তিগুলো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যুক্তি, খোঁড়া যুক্তি।
গত বছরের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়ার মুক্ত হওয়ার পর তিনি সরকারের দেয়া শর্তাবলী ভঙ্গ করেননি দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উনি যখন বাসায় কোয়ারেন্টাইন ছিলেন কিন্তু একদিনের জন্য তাদের শর্ত ভঙ্গ করেন নাই। উনি একদিনের জন্য ঘরের বাইরে যাননি, বাসার বাইরে যাননি। কোথাও কোনো বক্তব্য দেননি।
আমরা হয়ত মাঝে-মধ্যে আপনাদের বলেছি যে, উনি আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তার জন্য দোয়া করতে বলেছেন। উনি কিন্তু নিজে কোনদিন এবং কি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হাতও নাড়াননি।
খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্যকামনায় দেশবাসীর আবারো দোয়া চান মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, মহামারির এই দুঃসময়েও ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দোয়া করছি গোটা বিশ্ব ও গোটা জাতি করোনা ভাইরাসমুক্ত হতে পারে এবং ফ্যাসিস্ট যে আগ্রাসন তা থেকে মুক্ত হতে পারে।
গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থার খোঁজ-খবর নেন চিকিৎসকদের কাছ থেকে।