খালেদার বিদেশে চিকিৎসা বিএমএ-ড্যাব পাল্টাপাল্টি

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব বলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) যে বক্তব্য দিয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ড্যাব আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে থেকে চিকিৎসক আনার যে বিষয়টি বিএমএ বলেছে, সেটি শুধুমাত্র কালক্ষেপণ ছাড়া আর কিছু না। এর মধ্যে দিয়ে তারা সরকারকে সমর্থন করছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে বিএমএ’র দফতর সম্পাদক ডা. মোহা. শেখ শহিদ উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
এতে বলা হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি নেতিবাচক বক্তব্য রাখছেন, যা এদেশের চিকিৎসা পেশায় জড়িত সকলকে হতাশ করেছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আমরা বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা আন্তর্জাতিক মানেরই হচ্ছে যা দেশের অনেক হাসপাতালে বিদ্যমান। দেশের যে কোনো নাগরিকের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি আইনগত যা আদালতের মাধ্যমে সমাধান হতে পারে।
এর আগে সোমবার রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএমএ জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ রোগের বিশ্ব মানের চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম।
এই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনাকারীদের দাবি, সরকার দলীয় মন্ত্রী এমপিরা সামান্য অসুখের চিকিৎসার জন্য বিদেশ গেলেও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিদেশ যাওয়ার বিরুদ্ধাচরণ করছে বিএমএ। অনেকেই বিএমএকে সরকার দলীয় চিকিৎসক সংগঠন বলে আখ্যায়িত করেন। এসব সমালোচনার জবাবে বিএমএ মঙ্গলবার আরেকটি বিবৃতি দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, আজকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং বিপক্ষে এই নামে একটি বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সেই ব্যক্তিটি আজকে অসুস্থ। দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করছেন। তারা বলেছেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এ দেশে সম্ভব নয়, পাশের দেশগুলোতেও সম্ভব না। এর বিপক্ষে সরকারের অবস্থান; বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের অবস্থানও একই যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চিকিৎসক সমাজ হিসেবে একটা হিপোক্রেটিক শপথ নিই যে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে কখনও আমরা মিথ্যা বলবো না, অন্যায় করবো না, রোগীর স্বার্থে সবসময় কাজ করবো। আজকে তারা সেই শপথ ভঙ্গ করেছে। অসুস্থ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে আজকে বিএমএ অবস্থান নিয়েছে।
বাইরে থেকে চিকিৎসক আনার কথা বলা হয়েছে এবং ভারতে করা যায় এমনটা বলা হচ্ছে। এই বিষয়ে আপনারা কি ভাবছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য তো বাইরে থেকে চিকিৎসক আনা হলো। তাহলে তাকে কেন বাইরে নেওয়া হলো, কারণ চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন তার সব বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে হার্টের অপারেশন হয়, এনজিওপ্ল্যাস্টি হয়, এনজিওগ্র্যাম হয়। বাংলাদেশে হার্টের কাজ হয় না এমন কোনো কিছু নেই। তারপরও ওনাকে বিদেশে নেওয়া হলো।
সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমানভাবে এগিয়ে গেলেও এখনও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। যার ফলশ্রুতিতে এ দেশের চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্তে¡ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আশানুরূপ আরোগ্য লাভের পরিবর্তে ধীরে ধীরে অন্তিম পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় চিকিৎসক হিসেবে আমাদের আকুল আহব্বান, জরুরিভিত্তিতে যৌক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক। আমরা আশা করি, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সরকার খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেবে।