খালেদার ছোট একটা বায়োপসি প্রয়োজন

11

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে একটি অস্ত্রোপচারের পর আইসিইউতে রাখা হয়েছে। গতকাল সোমবার এভারকেয়ার হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ ও বিপদমুক্ত বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ডা. জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়ার একটি মাইনর অপারেশন করা হয়েছে। এখন তিনি আইসিইউতে আছেন। তিনি বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ছোট একটি বায়োপসি করা হয়েছে। অপারেশনের পরে তার সঙ্গে ছেলে তারেক রহমান কথা বলেছেন। ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারও কথা বলেছেন। ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিথি কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এখন তিনি (খালেদা জিয়া) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে তিনি ভালো আছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার বায়োপসি হলেও তিনি ‘বিপদমুক্ত’ বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে থাকা ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে নানা খবর প্রকাশের মধ্যে গতকাল সোমবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে একথা জানান ফখরুল। তিনি বলেন, বেগম জিয়া বিপদমুক্ত। কোনো রকম বিপদের সম্ভাবনা নেই বলে তারা (চিকিৎসকরা) মনে করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নিশ্চিত থাকুন যে, দেশনেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একদম সুস্থ আছেন। তার সঙ্গে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কথা বলেছেন, তার ভাই (শামীম এস্কান্দার) কথা বলেছেন। ডাক্তার সাহেব যে দুজন ছিলেন, তারা আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি ভালো আছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন ফখরুল।
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এত দায়িত্বজ্ঞানহীন মিডিয়া কেন হবে ভাই? জিজ্ঞেস করতে হবে যারা কাজ করছেন তাদেরকে, আমাকে অথবা ডাক্তার সাহেবদেরকে। তা না করে একটা বলে দিলে হয়ে গেল? এটা ঠিক না। এই ধরনের হাইপার জার্নালিজম!
এই সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, উনার শরীরের এক জায়গায় ছোট একটা লাম্প আছে। যেহেতু পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এই লাম্পের নেচার অব অরিজিন জানতে হলে বায়োপসি করা প্রয়োজন। সেজন্য আজকে ছোট একটা বায়োপসি করতে উনাকে ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) নিয়ে সেটি করা হয়েছে।
‘লাম্পের’ ব্যাখ্যায় অধ্যাপক জাহিদ বলেন, লাম্প শব্দের অর্থ হচ্ছে ছোট টাকা। ইট ইজ নিয়ারলি ১.২ সেন্টিমিটার ইন সাইজ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের দেহের কোথায় এটা হয়েছে- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি ‘রোগীর প্রাইভেসি’র বিষয়টি উল্লেখ করে সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
বায়োপসি পরবর্তীতে উনার প্যারামিটারগুলো এই মুহূর্তে স্টেবল আছে। উনি সার্জিক্যাল আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন, বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে এই চিকিৎসক বলেন, বায়োপসি মানে চিকিৎসা না। বায়োপসি মানে হচ্ছে একটা ডায়োগনস্টিক প্রসেসের পার্ট। পরবর্তী চিকিৎসা কী হবে, এ পরীক্ষার উপর বেইস করে সেটা নির্ধারিত হবে।
বায়োপসির প্রতিবেদন কবে নাগাদ হাতে আসে- জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, বায়োপসির রেজাল্ট পেতে সায়েন্টিফিক্যালি ৭২ ঘণ্টা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ দিন থেকে ২১ দিন সময় লাগে। কাজেই এর রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত¡াবধানে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন।
দুর্নীতির মামলায় দÐিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি কারাগারে যেতে হয়।
দেশে করোনা ভাইরাসের মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনে গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ তাকে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার।
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়েছিল তার পরিবার। তবে সরকার বলেছে, সাময়িক মুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাকে দেশে রেখেই চিকিৎসা দিতে হবে।
খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থানের সময় গত এপ্রিলে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন।
কোভিডোত্তর জটিলতায় ২৭ এপ্রিল খালেদাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। প্রায় দুই মাস সিসিইউতে ছিলেন। পরে ১৯ জুন মেডিকেল বোর্ড বাসায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে ছাড়পত্র দেয়। তার চার মাসের মাথায় ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডাক্তার সাহেবরা বার বার বলে আসছেন, তার মেডিক্যাল বোর্ড বলে আসছেন, তার পরিপূর্ণ চিকিৎসা এখানে করানোর কোনো এডভান্সড সেন্টার নাই। এজন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল।
দুর্ভাগ্য আমাদের যে আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যে একটা সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার সাধারণ মানুষের মতো চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। তার এই অধিকারটুকু সরকার স্বীকার করে নাই। তাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেওয়ার উপর জোর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা খুব প্রয়োজন। তার জন্য আইনগত কোনো বাধা আছে বলে আমরা মনে করি না। কারণ সি ইজ এনটাইটেল টু বেইল। কেন বেইল পাবেন না? এটা তার অধিকার, এটা কোনো দয়া নয়। এই ধরনের একটা মিথ্যা মামলা, তারপরেও এই মামলায় তার জামিন পাওয়া তার অধিকার। সরকারের উচিৎ অবিলম্বে তাকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার।
খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা যদি না পায়, তার জন্য সরকারকেই ‘একশভাগ দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে’ বলে হুঁশিয়ারিও দেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক মো. আল মামুনও উপস্থিত ছিলেন।