খালেদাকে মানবতা দেখিয়েছি

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় যা করার ছিল, তা করেছি, এখন বাকিটা ‘আইনের ব্যাপার’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতবড় অমানবিক যে, তাকে আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কত চান?
গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর এমন জবাব আসে। গøাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে দুই সপ্তাহের সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবন থেকে এ ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিশেষ কোনো পদক্ষেপ তিনি নেবেন কি না। উত্তরে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিছি, চিকিৎসা করতে দিছি, এটাই কি বেশি না? আপনাকে যদি কেউ হত্যা করার চেষ্টা করত, আপনি কি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? আপনার পরিবারকে কেউ যদি হত্যা করত, আর সেই হত্যাকারীর যদি কেউ বিচার না করে, পুরস্কৃত করে, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিত, তাদের জন্য আপনারা কী করতেন?
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় খালেদা জিয়ার স্বামী সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকেই দায়ী করেন শেখ হাসিনা। আর বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের বিচারের পথ যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়াও যে একই পথে হেঁটেছেন, সে কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিষয়ে খালেদা জিয়া সরকারের কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির ৯৬ সালের ইলেকশনে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের নেতা বসানো হলো কর্নেল রশিদকে (খন্দকার আবদুর রশিদ)। কে করেছিল? খালেদা জিয়া। খায়রুজ্জামান আসামি। তার মামলার রায় হবে। আর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই আসামিকে চাকরি দিলো ফরেন মিনিস্ট্রিতে। রাষ্ট্রদূত করে পাঠালো।
শেখ হাসিনা বলেন, ২১ অগাস্ট আমার ওপর গ্রেনেড হামলা করার পর তিনি (খালেদা জিয়া) বললেন কী? আমি ভ্যানেটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে নিজেই নিজে আত্মহত্যা করতে নিজেকে মেরেছিলাম। কোটালিপাড়ার হামলার আগে বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরের কথা, কোনোদিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, রাখে আল্লাহ মারে কে? আর মারে আল্লাহ রাখে কে? দেখেন আমার বেলা সেটা হচ্ছে যে, রাখে আল্লাহ মারে কে? তারপরও বলব, আমরা অমানুষ নই। অন্তত এক্সিকিউটিভ অথরিটি আমার হাতে যতটুকু আছে, আমি সেটুকু দিয়ে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যাপার।
ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মুশকিল হচ্ছে এখানে আমরা শুধু চেয়ারম্যান পদে প্রতীক দিচ্ছি, কিন্তু মেম্বার পদে না। আপনারা যদি ঘটনাগুলো দেখেন, মেম্বারদের মধ্যেও গোলমাল। শুধু যে চেয়ারম্যানকে প্রতীক দিচ্ছি দেখেই মারামারি তা কিন্তু না।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিভিন্ন দল দলীয়ভাবে নির্বাচন না করলেও তাদের নেতারা অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছে। আমরা আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি নাম ছাড়া করছে, অন্যান্য দলও করছে। এই যে হানাহানি মারামারি, কোথায় কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে- সেটা আপনারা দেখেন। আমাদের দলের মধ্যে যেগুলো হবে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক উন্নত দেশে আপনি যান, সেখানে খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপার মার্কেট খালি, জিনিস নাই। স্বয়ং লন্ডনের কথা বলছি। বাংলাদেশে কিন্তু সেই হাহাকারটা আপনারা দেখেননি। সেই হাহাকারটা নেই। খাদ্যের জন্য দেশের মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা তো অনেক ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছি। করোনাকালীন আমরা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিনসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষকে আমরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছি।
বাস ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, স্বাভাবিকভাবে যখন তেলের দাম বেড়েছে, তারাও একটু সুযোগ নিয়েছে দাম বাড়ানোর। আমি বিদেশে ছিলাম ঠিক, দেশ থেকে দূরে ছিলাম তা কিন্তু না। আলোচনা করে বাসের ভাড়া একটা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ/বাংলানিউজ’র