খালি পড়ে আছে কেজিডিসিএল এর হাজার কোটি টাকার জায়গা

36

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিইসি এলাকায় অবস্থিত ২৭ কাঠা পরিমাণের জমিটি ২০১৭ সালে ১০০ কোটি টাকায় ক্রয় করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। গত ৬ বছর ধরে খালি পড়ে আছে জায়গাটি। দিনে যেমন তেমন রাত হলেই মাদকের আখড়ায় পরিণত হয় এটি।
গতকাল রবিবার জিইসি এলাকা ও কেজিডিসিএল গেলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
জানা গেছে, কোম্পানির স্বার্থে ২০১৭ সালে জমিটি ১০০ কোটি টাকায় কিনে কেজিডিসিএল। কিন্তু ৬ বছরেও কোনো স্থাপনা নির্মাণ করেনি কর্তৃপক্ষ। খালি পড়ে থাকায় এখন রাতে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে জায়গাটি। ৩৭তলা পর্যন্ত অনুমোদন থাকা জায়গাটিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে কোম্পানির ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় হতো। এতে কোম্পানির পাশাপাশি লাভবান হতো কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
কেজিডিসিএল সূত্র মতে, কোম্পানির ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করে শ্রমিক কর্মচারী সংসদ (সিবিএ) এবং কর্ণফুলী গ্যাস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন জমি ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে দাবি তুলে আসছিল। তারই প্রেক্ষাপটে কেজিডিসিএল জমি ক্রয়ে একাধিকবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যাচাই-বাছাই করার পর কোম্পানির সব মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপকদের সমন্বয়ে গঠিত ২১ জন কর্মকর্তার টিম জমিটি ক্রয় করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়। পরে ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর জিইসি কনভেনশন সেন্টার ও ইউনেস্কো সেন্টারের মাঝামাঝি জায়গাটি ক্রয় করে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী বলেন, ‘শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের স্বার্থে জমিটি ক্রয় করা হলেও কোনো এমডি এ নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। কারণ, উনাদের ভাবনা হচ্ছে, এখান থেকে যা আয় হবে তা তো কর্মচারী বা কর্মকর্তারা পাবেন, এতে এমডি বা সিনিয়র অফিসারের কি লাভ? এ ভ্রান্ত ধারণা থেকেই অযতেœ অবহেলায় পড়ে রয়েছে জায়গাটি।’
সরেজমিনে জায়গাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, জিইসি মোড়ের প্রধান সড়কের পাশেই জমিটির অবস্থান। এর উত্তর পাশে রয়েছে জিইসি কনভেনশন সেন্টার ও দক্ষিণ পাশে ইউনেস্কো সিটি সেন্টার। গত ছয় বছর ধরে খালি পড়ে থাকায় রাত হলেই মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় জায়গাটি। এছাড়া চোর, ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে এখন।
জায়গাটির পাশে ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা জাফর উদ্দিন বলেন, ‘এখানে রাত হলে মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ নানা মাদকসেবীর আনাগোনা দেখা যায়। এতে পরিবেশটা এক ধরনের ভয়ংকর হয়ে উঠে। যেকোনো সময় হতে পারে চুরি, ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের মত ঘটনা।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জমিটি ক্রয় করা হয় হাজী ইউনুস নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে। রেজিস্ট্রেশন ব্যতিত এই জায়গার দাম ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। জমিটিতে ৩৭ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর, বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক)-এর কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্রও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জমিটির উপর বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য প্রতিটি ১২ ফ্লোর হাজার বর্গফুটের স্পেস সম্পন্ন। ৩৭তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবনের পাশাপাশি পার্কিংয়ের সুবিধাও রয়েছে। সাতটি ফ্লোর বাদে অবশিষ্ট ৩০টি ফ্লোর বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। এই জমির চেয়ে নি¤œমানের জমিতে নির্মিত বাণিজ্যিক সেন্টার যেমন- আফমি প্লাজা, ফিনলে টাওয়ার, ইউনেসকো সিটি সেন্টারে প্রতি বর্গফুটের বর্তমান বাজার দর ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
জমিটি ক্রয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত চারজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তন হয়েছেন। কিন্তু কেউ জায়গাটির উন্নয়নের কথা ভাবেননি বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেজিডিসিএল’র একজন কর্মকর্তা জানান, এই জায়গাটির উপর ৩৭তলা ভবন নির্মাণ অনুমোদন রয়েছে।
জিইসি মোড়ের বাণিজ্যিক ভবন ইক্যুইটি প্লাজার বর্তমান বাজার দর প্রতি বর্গফুট ৮০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে এই জায়গার উপরে ভবন নির্মাণ করা হলে সরকারের ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হতো।
সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আসলাম বলেন, কোম্পানির কল্যাণে জায়গাটি কেনা হয়। কেনার পরপরই বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হলে এতদিনে সুন্দর একটি ভবন নির্মাণ হয়ে যেত। এতে কোম্পানির পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাভবান হতে পারতেন।
সম্প্রতি দায়িত্ব নেওয়া কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল ইসলাম অবশ্য এই জায়গাটিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘এতো কোটি টাকার সম্পদ আমরা ব্যবহার করতে পারছি না, বিষয়টি দুঃখজনক। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। আমার সময়ের মধ্যে জায়গাটিতে বাণিজ্যিক ভবন হোক বা অন্যকিছু হোক, যেকোনো একটা করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’