খাবার নিয়ে হাত বাড়ালেই ছুটে আসে বানর

22

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাঁশখালীর বৈচিত্র্যময় দর্শনীয় স্থান ইকোপার্ক। বিনোদনপ্রেমিদের জন্য ইকোপার্কে একটি মিনি চিড়িয়াখানা ছিল। যে চিড়িয়াখানায় হরিণ, বানর, অজগরের মতো প্রাণি ছিল। সেই চিড়িয়াখানা এখন আর নেই। চিড়িয়াখানা বন্ধ হলেও মাঝেমধ্যে অভয়ারণ্যে ঘোরাঘুরি করতো বন্যপ্রাণি। কিন্তু বেশ ক’বছর ধরে ইকোপার্কে বন্যপ্রাণির দেখা মিলছিল না। যে কারণে জরাজীর্ণ ইকোপার্কটিতে পর্যটকের সংখ্যা কমে যায়। এখন ইকেপার্কে নিয়মিত দেখা মিলছে বানরের। পার্কের প্রবেশ গেটেই নিয়মিত বসতি গেড়েছে বানরের দল। পার্কে যাওয়া পর্যটকরা খাবার নিয়ে হাত বাড়ালেই তা গ্রহণ করছে বানর।
বাঁশখালী ইকোপার্কের রেঞ্জার আনিসুজ্জামান শেখ পূর্বদেশকে বলেন, শুধু বানর নয়, গভীর জঙ্গলে নিয়মিত হাতির দেখাও মিলে। মায়া হরিণ, বন্যশুকর, বন মোরগ, সাপ, খরগোশ, মথুরা, গুইসাপ দেখা যায়। বানরতো একদম পার্কের গেটেই চলে আসে। সেখানে পর্যটকরা বানরকে খাবার দিচ্ছে। যদিও বানরকে খাবার খাওয়ানোকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। বন্যপ্রাণিকে বাইরের খাবার খাওয়ালে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
পার্কে বেড়াতে যাওয়া পর্যটক কল্যাণ বড়ূয়া বলেন,‘পার্কের গেটের সামনে যেসব খাবারের দোকান আছে সেগুলোর আশপাশেই বানরের দল চলে আসছে। একসময় প্রতিনিয়ত বানরের দেখা মিললেও বহুদিন দেখা যায়নি। এখন আবার বানরের দলের দেখা মিলেছে। বানরকে পর্যটকরা খাবার দিলেই তা গ্রহণ করছে। বানরগুলোর সাথে পার্কে আসা মানুষের একপ্রকার বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
জানা যায়, বন্যপ্রাণি ও বনজসম্পদ রক্ষার্থে ১৯৮৬ সালে প্রায় ৭ হাজার ৭৬৪ হেক্টর বনভূমি নিয়ে ‘চুনতি অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে বামেরছড়া ও ডানেরছড়া প্রকল্প দুটিও চুনতি অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই অভয়ারণ্যে ছোট-বড় অনেক পাহাড়, খাল ও ছড়া রয়েছে। ১৯৯৩ সালে এলজিইডি, প্রকৌশল বিভাগ কৃষি জমিতে সেচ প্রকল্পের জন্য পাহাড়ের ঢালুতে বাঁধ নির্মাণ করে ডানের ও বামেরছড়ায় ৮০ হেক্টর নিম্নাঞ্চলের ধানি জমি চাষ উপযোগী করে। বিনোদনপ্রেমিদের কথা চিন্তা করে ২০০৩ সালে এ ইকোপার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৭ সালের উদ্ভিদ জরিপ মতে, ইকোপার্কে আরোও পাওয়া যাবে ৩১০ প্রজাতির উদ্ভিদ। এর মধ্যে ১৮ প্রজাতির দীর্ঘ বৃক্ষ, ১২ প্রজাতির মাঝারি বৃক্ষ, ১৬ প্রজাতির বেতসহ অসংখ্য অর্কিড, ইপিফাইট ও ঘাস জাতীয় গাছ। এই এলাকা গর্জন, গুটগুটিয়া, বৈলাম, সিভিট, চম্পাফুল এবং বিবিধ লতাগুল্ম সমৃদ্ধ চিরসবুজ বনাঞ্চলে ভরপুর ছিল। পার্ক এলাকার ৬৭৪ হেক্টর বনভূমিতে বিভিন্ন ধরনের মনোমুগ্ধকর বাগান তৈরি করা হয়েছে।
শীলকূপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কায়েশ সরোয়ার সুমন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ইকোপার্কটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। একসময় এটিকে ঘিরে বড় ধরনের পরিকল্পনা ছিল বন বিভাগের। এখন তেমন বরাদ্দ নেই। যে অবস্থায় আছে সেখানেই অনেক পর্যটক আসে। মাঝখানে বন্যপ্রাণির দেখা মিলতো কম। এখন প্রতিনিয়ত বন্যপ্রাণি পার্কে চলে আসে। বিশেষ করে বানর, হরিণের দেখা মিলছে। যা দেখে পর্যটকরা আনন্দিত হচ্ছেন।’