খাদ্যপণ্যে অগ্নিমূল্য

17

রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ ও তার জেরে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি পণ্যের দামবৃদ্ধি এবং খরা-অতিবৃষ্টি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চলতি ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদন হয়েছে বিগত অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। ফলে চলতি বছরের প্রায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম ছিল চড়া। তবে দরজায় কড়া নাড়তে থাকা ২০২৩ সালে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে, এমন কোনো আশ্বাস দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। কারণ বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি ২০২৩ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ধান ও গম উৎপাদনের যে নিম্নহার ছিল, আগামী বছর তাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে— এমন সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। বিশ্বের ভোজ্য তেলের বৃহৎ দুই যোগানদাতা অঞ্চল লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এবার জলবায়ু বিপর্যয়জনিত কারণে ভোজ্য তেলের উৎপাদন হয়েছে কম। আগামী বছরও তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক কৃষিপণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকন কমোডিটিসের উপদেষ্টা পরিষদের পরিচালক ওলে হউয়ে রয়টার্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘খাদ্যপণ্যের বর্তমান বৈশ্বিক বাজারে স্থিতাবস্থা আনতে হলে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে হবে। অন্তত বর্তমান সময়ের তুলনায় ২০২৩ সালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে না বাড়ালে বাজার শান্ত করা সম্ভব হবে না। কিন্তু এখন আমরা সবাই যে পরিস্থিতিতে আছি, তাতে আগামী বছর খাদ্যশস্য ও তেলবীজ উৎপাদনে উল­ম্ফণ ঘটানো খুবই কঠিন, প্রায় অসম্ভব।
এছাড়া বিভিন্ন দেশের বাজার ব্যাবস্থা ত্রæটির কারণেও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে উল্লেখ করে এই অস্ট্রেলিয় বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, চলতি বছর পাইকারি বাজারে চাল-গম-ভুট্টা এবং সয়াবিন-সূর্যমুখী ও পাম তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছিল। এসবের মধ্যে গম-ভুট্টা ও পাম তেলের দাম সম্প্রতি পাইকারি বাজারে কমেছে, কিন্তু খুচরা বাজারে এখনও এসব পণ্যের দাম বেশি। যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্যের দাম। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষজন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন, কিন্তু এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে এই সংকটের আঁচ লেগেছে ভয়াবহভাবে। এ দুই মহাদেশের অনেক দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজন আগে থেকেই ব্যাপক ক্ষুধা ও অপুষ্টির শিকার, চলতি বছর তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও কয়েক কোটি মানুষ। ২০২২ সালে বিশ্বের খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী দেশগুলো রেকর্ড ২ লাখ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, কিন্তু তারপরও খাদ্য আমদানি কমাতে বাধ্য হয়েছে দরিদ্র দেশগুলো। চলতি বছর মার্চ-এপ্রিলের দিকে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়েছে ধান-গম-ভুট্টা ও সব ধরনের ভোজ্যতেল ও তেলবীজ। কিন্তু জুন মাস থেকে জ্বালানি তেলের বাজারে মন্দাভাব শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে কমে এসেছে গম-ভুট্টা ও পাম তেলের দাম।