খাদ্যঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কায় এল ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’

14

নিজস্ব প্রতিবেদক

নজিরবিহীন খাদ্য ঘাটতি আসতে পারে জাতিসংঘের এমন সতর্কতার মধ্যে আজ ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’ পালন হচ্ছে। খাদ্য ঘাটতি ও খাদ্যপণ্যের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে সারাবিশ্বে। এ আশঙ্কার মধ্যে এ বছর বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়, ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন’। কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্যোগে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরতে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেছেন, প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রভাবের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তঃসংযুক্ত হয়ে উঠছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ দরিদ্র ও খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষ তাদের জীবনযাত্রার জন্য কৃষি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে মহামারি, সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বমুখিতা দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি খাদ্যপণ্য উচ্চমূল্যে বিশ্ববাজারে রপ্তানির মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেছেন, ধান, পাট, আম, পেয়ারা আলু প্রভৃতি ফসল ও ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ ৮টি দেশের মধ্যে রয়েছে। কৃষির উন্নয়নে এ সাফল্য সারা বিশ্বে বহুলভাবে প্রশংসিত ও নন্দিত হচ্ছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতসহ কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব ও আধুনিক প্যাকিং হাউজ।
এদিকে জাতিসংঘের খাদ্যসহায়তা-সংক্রান্ত শাখা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, করোনা মহামারি, সংঘর্ষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০১৯ সালের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে সাড়ে ৩৪ কোটি ছাড়িয়েছে। করোনা মহামারি শুরুর আগে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৩ কোটি। এরপর এ সংখ্যা বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘর্ষের ফলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পরিবেশগত সমস্যার প্রভাবে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা খাদ্যঘাটতি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া জলবায়ু– সংকটের ফলে আরও সংঘাত ও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির ঘটনাও ঘটতে পারে।
ডবিøউএফপির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যসহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু ডবিøউএফপির পক্ষে কেবল ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে তারা যে সহায়তা দেয়, তাতে একজন মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার অর্ধেক পূরণ করা সম্ভব। এর পেছনে তহবিলের স্বল্পতার কথা বলেছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি।
করোনা মহামারির পর জিনিসপত্রের দাম ৪৫ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দাতারাও বিশাল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইরাকের মতো তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে লাভবান হলেও খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে।