নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীর খাতুনগঞ্জে ছুরিকাঘাতে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর বাকলিয়া থানার মোজাহের কলোনি থেকে মো. সোহাগ (২২) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গভীর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কাশীপুর থেকে সাইদুল হোসেন (২২) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, হত্যাকান্ডে জড়িত মূল আসামিসহ আরও পাঁচ জনকে গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার কোতোয়ালী থানায় সংবাদ সম্মেলনে ওসি জাহিদুল কবীর বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িতদের সবার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। পিকআপ ভ্যান চালানোসহ নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশায় এরা জড়িত। সবাই থাকে বাকলিয়া এলাকায় বিভিন্ন বস্তিতে। দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের আসল কারণ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। ওসি বলেন, মাসুদ ছিলেন পরিবহন থেকে পণ্য লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক। সেখানে শ্রমিকদের একটি বড় অংশের মাঝি বা সর্দার হিসেবেও ছিলেন তিনি। গত ১৭ অক্টোবর সকালে খাতুনগঞ্জের চাঁন মিয়া গলিতে পিকআপ নিয়ে ঢুকছিল রাসেল। গলির মোড়ে পিকআপ ঢোকানো নিয়ে মাসুদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় রাসেলের। এ সময় মাসুদ তাকে গালিগালাজ করে। রাসেল প্রতিবাদ না করে শুধু তোর খবর আছে, হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
সন্ধ্যার পর রাসেলসহ সাতজন চাঁন মিয়া গলিতে যায়। মাসুদ তখন সামির ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আড়তে পণ্যের বস্তা তুলছিলেন। রাসেল ও তার সহযোগীরা আড়তে ঢুকে মাসুদকে টেনে হিঁচড়ে বের করে মারধর শুরু করে। মাসুদের হাতে মালামাল টানার কাজে ব্যবহৃত একটি লোহার হুক ছিল। নিজেকে রক্ষায় তিনি হুক দিয়ে রাসেলদের আঘাতের চেষ্টা করেন। তখন সাইদুল পকেট থেকে ছোরা বের করে তাকে শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে। মাসুদ লুটিয়ে পড়লে তারা পালিয়ে যায়। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছোরাটি সাইদুলের তথ্য অনুযায়ী বাকলিয়ার হাজী আমিনুর রহমান সড়কে হিফস এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের পাশে একটি খালি জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনায় জড়িত রাসেল ও সাদ্দামসহ আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে জানিয়ে ওসি বলেন, এরা সবাই বাকলিয়ায় বস্তিতে থাকে। কেউ পিকআপ চালায়, কেউ দিনমজুর। তারা নিম্ন আয়ের শ্রমিক। রাসেল ও সোহাগ পিকআপ চালক। ঘটনার পর তারা চট্টগ্রাম ছেড়ে বিভিন্নস্থানে পালিয়ে গেছে। শুধুমাত্র সোহাগ ফিরে এলে তাকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। সাইদুল বারবার তার অবস্থান পাল্টাচ্ছিল। তাকে ধরতে আমাদের কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান করতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর কোতোয়ালী থানার খাতুনগঞ্জের চাঁন মিয়া গলিতে মো. মাসুদ নামে এক শ্রমিক ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরদিন ভোরে মারা যান। মাসুদ নিহতের জেরে খাতুনগঞ্জে সকল ধরনের পণ্য ওঠানামা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। এর ফলে দেশের অন্যতম বড় এই ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার দু’দিন ধরে অচল ছিল। নিহত মাসুদের ছেলে মো. বাবুল বাদী হয়ে মোহাম্মদ রাসেলসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন।