খাতুনগঞ্জে চিনি-এলাচের দাম কারসাজিতে ৩ প্রতিষ্ঠান

11

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনি ও এলাচের দামে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ কারণে চট্টগ্রামের অন্যতম বড় পাইকারি চিনি বিক্রয়কারী দুটি প্রতিষ্ঠান আরএম এন্টারপ্রাইজ ও নাবিল গ্রুপকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া বেশি মূল্যে এলাচ বিক্রির কারণে চট্টগ্রামের এলাচের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক এবি ট্রেডার্সকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গতকাল রবিবার দুপুর একটার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘এস আলমের চিনির গুদামে আগুন লাগার পর খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি দাম দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। পাইকারি পর্যায়েও চিনির বাজার কিছুটা অস্থিতিশীল হয়েছিল। আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে পাইকারি পর্যায়ে কিছু কারসাজির তথ্য পাই। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি চিনি যারা পাইকারিতে সরবরাহ করেন, তাদের মধ্যে আরএম এন্টারপ্রাইজ ও নাবিল গ্রুপ সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের কাছে চিনির ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্য যাচাইয়ের জন্য এসেছিলাম। কিন্তু দুটি প্রতিষ্ঠানই আমাদের কেনা-বেচার কোন রশিদ দেখাতে পারেননি। তারা ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ করেন না। ফলে কত টাকায় উনারা কিনছেন এবং কত টাকায় বিক্রি করছেন সেটার সঠিক কোন তথ্য ভোক্তাপর্যায়ে পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ সুযোগটা তো কেউ না কেউ নিচ্ছেই। এ কারণে আরএম এন্টারপ্রাইজকে ৩০ হাজার টাকা এবং নাবিল গ্রুপকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এলাচের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, ‘এবি ট্রেডার্স চট্টগ্রামে এলাচের সর্ববৃহৎ আমদানিকারক। নিয়ম হচ্ছে, তারা আমদানি মূল্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ লাভ করতে পারবেন। সে হিসেবে তাদের আমদানি মূল্য, ভ্যাট, পরিবহন খরচ, খালাসসহ সর্বোচ্চ এক কেজি এলাচ আনতে খরচ হয় দেড় হাজার টাকার মতো। সেক্ষেত্রে তারা যদি ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে এক কেজি এলাচ বিক্রি করতে পারেন, তাহলে দামটা যৌক্তিক হয়। তারা বিক্রি করছেন ১২০০ টাকা থেকে ৩১০০ টাকার মধ্যে। এ দামে এলাচ বিক্রির কোন যুক্তি নেই। আমরা জরিমানা করার পর মালিক অঙ্গীকার করেছেন, তিনি ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করবেন।’
আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাাধিকারী আলমগীর পারভেজ বলেন, ‘ক্রয় রশিদ দেখাতে না পারায় আমাদের জরিমানা করা হলো। অথচ আমরা বারবার বলে আসছি, আমাদের কোন ফার্স্ট পার্টি অর্থাৎ কোন মিল মালিক বিক্রয় রশিদ দেয় না। আমরা তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে দিই, তারা আমাদের মাল দিয়ে দেয়। বিশ্বাসের ওপর আমরা তাদের টাকা দিই, তারা মাল দেয়। শুধু চট্টগ্রাম নয়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের কোন মিল মালিক বিক্রয় রশিদ দেয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম চেম্বার ও এফবিসিসিআইকে লিখিত চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, মিল মালিকরা বিক্রয় রশিদ না দেওয়ার কারণে আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। রবিবার আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। তাদের কাছ থেকে ক্রয় রশিদ না পেলেও আমরা কিন্তু যাদের কাছে মাল বিক্রি করি, তাদের রশিদ দিই। আমার দোকানের সামনে বোর্ডে লেখা আছে, কেউ আমার থেকে মাল কিনলে অবশ্যই যেন বিক্রয় রশিদ নেন’।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, ‘এটা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সমস্যা। আমি সরকারের উচ্চপর্যায়ে আবেদন করব, যারা উৎপাদনকারী, তারা বিপনণকারীদের বিক্রয় রশিদ যেন দেন। আর সেজন্য সরকার যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। ছোটো-খাটো, মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন, এটা খুব দুঃখজনক। যারা প্রোডাকশন করে, তারা কোন বিক্রয় রশিদ দিচ্ছে না, তাহলে আমরা কিভাবে দেবো? উৎপাদনকারীরা যেন বিক্রয় রশিদ দেয় সেই পদক্ষেপ সরকারের নিতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, এখনও বলছি যে, আমাদের হয়রানি থেকে বাঁচানোর জন্য সরকারই যেন মনিটরিং করে আমাদের ক্রয় রশিদ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।’
এলাচ আমদানিকারক অমর কান্তি দাশ বলেন, ‘আমরা যেখানে থেকে আমদানি করি, সেখানে এবার ৩৮ শতাংশ শস্য প্রাকৃতিক কারণে নষ্ট হয়েছে। এখন চাইলেও আমি এলসি করে মাল আনতে পারছি না। সুতরাং ইন্ডিয়ার মার্কেটে যদি এলাচের দাম তিন হাজার টাকা হয়, এখানে চার হাজার হওয়া স্বাভাবিক। আবার এখানে অনেকে শুধু স্লিপ বিক্রি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। না হলে দুই হাজার টাকার ওপরে দাম হতো না।’
অভিযানে কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোর্শেদ কাদের এবং কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি টিম অভিযানে অংশ নেন।