খাজা আব্দুল গণি (১৮১৩-১৮৯৬)

26

ঢাকার নওয়াব, দাতা ও সমাজসেবী। তিনি ১৮১৩ সালের ৩০ জুলাই (১৫ শ্রাবণ, ১২২০ বাংলা) ঢাকার বেগম বাজারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খাজা আলীমুল­াহ ছিলেন একাধারে ব্যবসায়ী ও ভ‚স্বামী। খাজা আব্দুল গণি কৈশোরে নিজগৃহে আরবি-ফারসি শিক্ষা লাভ করেন। উর্দু ছিল তাঁর প্রথম ভাষা। তবে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়ও তার ব্যুৎপত্তি ছিল।
আব্দুল গণির মেধা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে তাঁর পিতা ১৮৪৬ সালে ওয়াকফনামা করে তাঁকে নিজের ও খাজা পরিবারের অন্যান্যদের সমুদয় সম্পত্তির মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত করেন। পরিবারের অন্যদেরকে অংশমতো ভাতা দানের ব্যবস্থা করা হয়। আব্দুল গণি পিতার ধন-সম্পদ ও জমিদারি আরও বৃদ্ধি করেন। তিনি ছিলেন উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পূর্ববাংলার একজন অত্যন্ত ধনী, প্রভাবশালী ও সম্মানিত জমিদার।
১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লব এর সময় অন্যান্য ভূস্বামীর ন্যায় খাজা আব্দুল গণিও ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগিতা করেন। তিনি ওই সময় হাতি, ঘোড়া ও নৌযান দিয়ে সরকারকে সহায়তা করেন। অবশ্য তিনি ঢাকার বিদ্রোহী সিপাহিদের বিচারকালে তাদের দন্ড হ্রাসের চেষ্টা করেন। ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করে। তখন থেকে আব্দুল গণির সালিশি রায়কে সরকারের আদালতের সমান মর্যাদা দেওয়া হতো। সালিশের মাধ্যমে বিবাদ মীমাংসায় তিনি ছিলেন অসাধারণ দক্ষ। ১৮৬৬ সালে খাজা আব্দুল গণিকে বাংলার ব্যবস্থাপক সভা এবং ১৮৬৭ সালে বড়লাটের আইন সভার সদস্য মনোনীত করা হয়। ১৮৬৯ সালে ঢাকায় উদ্ভূত এক মারাত্মক শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা আব্দুল গণি সালিশির মাধ্যমে মীমাংসা করেন। আব্দুল গণি ঢাকার পঞ্চায়েত প্রথার ব্যাপক উন্নয়ন করেন। পঞ্চায়েত সভাপতি হিসেবে তিনি প্রত্যেক মহল­ার পঞ্চায়েত সর্দারকে স্বীকৃতি পাগড়ি দিতেন এবং তাঁদের মাধ্যমে নগরীর স্থানীয় প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন। খাজা আব্দুল গণিকে ১৮৭১ সালে সি.আই. ই এবং ১৮৭৫ সালে নওয়াব উপাধি দেওয়া হয়। ১৮৭৬ সালে সরকার তাঁকে সাতজন তুর্কি সওয়ার (অশ্বারোহী গার্ড) রাখার অনুমতি দেন। ১৮৭৭ সালে খাজা আব্দুল গণিকে দেওয়া নওয়াব উপাধিটিকে বংশগত করা হয়। ১৮৮৬ সালে তাঁকে কে.সি.এস.আই এবং ১৮৯২ সালে নওয়াব বাহাদুর উপাধি দেওয়া হয়। সূত্র: বাংলাপিডিয়া