কয়েক হাজার কোটিপতির হাতে রাষ্ট্রের রাজত্ব

29

‘আমাদের মাথাপিছু গড় জিডিপি ৬১ ডলার থেকে ১৯০৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিতে আমরা বিশ্বের উচ্চ বৈষম্যের দেশগুলোর মধ্যে একটি। তাই আমরা অনেক ক্ষেত্রে সফল হলেও মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি কতটুকু দিতে পেরেছি ও কতটুকু সফলতা এসেছে- তা মূল্যায়ন করতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইয়ং ইকোনমিক সোসাইটি (ইয়েস) আয়োজিত বাজেট অলিম্পিয়াড-২০১৯ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু যখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলেন তখন ১০ বছরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু আমাদের সেখানে ৪৩ বছর লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, যদিও বলা হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। কিন্তু রাষ্ট্রের রাজত্ব চলে গেছে কয়েক হাজার কোটিপতির হাতে। এই বৈষম্য দূরীকরণে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনীতি এবং অর্থনীতি কি দর্শন অনুসরণ করছে সেটা বাজেটের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায়। আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার এখন এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু সেই হিসেবে আমাদের বাজেট বাড়েনি। কল্যাণ রাষ্ট্রগুলোতে জিডিপির ৩৫ শতাংশ বাজেটের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আর আমাদের বাজেটের পরিমাণ মাত্র ১৮.২ শতাংশ। এছাড়া বাজেট কোন খাতে কেমন বরাদ্দ হচ্ছে সেটাই বাজেটের চরিত্র নির্ধারণ করে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বর্তমান বাজেটকে খুবই উচ্চবিলাসি বলা হলেও আমরা দেখেছি স্বাস্থ্য খাতে মাত্র ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা এই খাতে পৃথিবীর সবচেয়ে কম বরাদ্দের মধ্যে একটি। শিক্ষাখাতে আমরা বাজেটের ১১ দশনিক ৫ শতাংশ তথা জিডিপির মাত্র ২ দশমিক এক শতাংশ ব্যয় করছি। যেখানে ইউনেস্কো থেকে কমপক্ষে ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের কথা বলেছে। যার ফলে বৈষম্যমূলক শিক্ষা আজও আমরা বদলাতে পারিনি। ধনী গরিবের শিক্ষার বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে আশার দিক হল- ১৯৭১ সালে সাত কোটি মানুষ ছিল, তখন আমাদের ধান উৎপাদন ছিলো এক কোটি ১০ লাখ টন। বর্তমানে আমরা ১৭ কোটি মানুষ। আমাদের উৎপাদন এখন ৩ কোটি ৮০ লাখ টন। এছাড়া রপ্তানিতে ১৯৮১ সনে আমাদের যেখানে আয় ছিল ৭৫ কোটি ডলার। বর্তমানে তা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা ওই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ গুণেরও বেশি। প্রতিবছর প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাচ্ছি আমরা। যা আমাদের শহর এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
চবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং বিভাগের শিক্ষার্থী বর্ণিক বৈশ্য ও জাকিয়া আজিজের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদ। অতিথি হিসেবে ছিলেন- সংগঠনের উপদেষ্টা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক নঈম উদ্দিন হাছান আওরঙ্গজেব। বাজেট বিষয়ক প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম, প্রেজেন্টেশনে ছিলেন ইয়েসের সহ-সভাপতি মো. দিদারুল ইসলাম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংগঠনটির সভাপতি মিশুক রায়, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল, সাবেক সভাপতি রাশেদ রাজীব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল খসরু। এসময় বাজেট অলিম্পিয়াডের বিভাগীয় রাউন্ডের চ্যাম্পিয়ন মো. মফিজুর রহমানসহ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেয়া হয়।