কয়েকজন মিলে বললেই করতে হবে, তা নয়

8

 

কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে গড়ে তোলা প্ল্যাটফর্ম ‘নাগরিক সমাজ’ ২৬ মার্চের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের যে দাবি জানিয়েছে, তাতে গুরুত্ব দিতে রাজি নন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বহু নাগরিক আছে, শুধু কয়েকজন মিলে দাঁড়িয়ে বললে সেটিই করতে হবে- তা কিন্তু নয়’।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রীর এ জবাব আসে। কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বুধবার নাগরিক সমাজের ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে বলা হয়, ২৬ মার্চের মধ্যে ওই ‘নিবর্তনমূলক’ আইন বাতিল করা না হলে তারা ‘কঠোর আন্দোলন’ গড়ে তুলবেন।সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নাগরিক বলতে শুধু কয়েকজন যারা বক্তৃতা করেছেন, যারা সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন- তাদেরকে বোঝায় না। বাংলাদেশে আর বহু সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আছেন- হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ, আরও বহু নাগরিক আছেন’।
সরকারের আগের অবস্থানই তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। যখন এই ডিজিটাল বিষয়টা ছিল না, তখন আইনের প্রয়োগও ছিল না। যখন ডিজিটাল বিষয়টা এসেছে, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টাও এসেছে।
এ ধরনের আইন ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা হাছান বলেন, ‘এ আইনের বলে সেখানেও শাস্তি হচ্ছে এবং গ্রেপ্তার হচ্ছে। তবে এই আইনের যাতে অপপ্রয়োগ না হয়, সেজন্য আমরা সতর্ক আছি এবং থাকব’।
করোনা ভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গত বছরের ৬ মে মুশতাককে তার লালমাটিয়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে অভিযোগপত্র দেওয়া হলে সেখানেও তাকে আসামি করা হয়। গত দশ মাসে কয়েকবার আবেদন করেও জামিন পাননি মুশতাক।
গত ২৫ ফেব্রæয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে মৃত্যু হয় ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের। তবে কীভাবে তার মৃত্যু হল, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না আসায় সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকে। খবর বিডিনিউজের
পেশায় ব্যবসায়ী মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তা সংগঠনের দিদারুল ভূইয়াও এ মামলার আসামি। মুশতাকের মৃত্যুর পর থেকেই প্রতিবাদ হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি নতুন করে জোরালো হয়ে উঠেছে।
কারাগারে বন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো আইনের বলে যদি কেউ গ্রেপ্তার হয় এবং তিনি যদি কারাগারে কোনো কারণে মৃত্যুবরণ করেন, তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয় বা কোনো কারণে মৃত্যু হয়। সেই আইন যদি তাহলে বাতিল করতে হয়, তাহলে তো বাংলাদেশে সব আইন বাতিল করার কথা আসে। কারণ অন্যান্য আইনেও মানুষ গ্রেপ্তার হয় এবং কারাগারে নানা কারণে মৃত্যু হয়। তাহলে সেসমস্ত আইনও বাতিল করে দিতে হবে?’