ক্ষুদে রোজাদার

54

রুহুল কাদের

সময় বদলে যাবার মন্ত্র দিয়ে যায় নির্বিরাম মানুষের মুখে মুখে, যন্ত্রতন্ত্রের ধ্বনিতেও শুনি একই ডাক ভাসে। বহতা খরস্রোতের তোড়ে কোন কূল ধরে অনড় থাকা যায়?দেখি কূলও ভাঙে- বদলে যায়
মানুষের সুখবোধ বদলে গেছে
দুঃখবোধেও মিশে গেছে বহুবর্ণিল পলেস্তারা
যন্ত্রণায় ঝরা চোখের থিকথিকে রক্তে আর জলে কড়া ঘ্রাণের আতর ছিটালে পিঁপড়ার মতো কি বেদনারা মরে যায়?
উলঙ্গ ভিক্ষুকের অপুষ্ট হাতে কড়কড়ে দুয়েকটি মুদ্রা গুঁজে দিলে কি নত হয় অভাবের ফুা?
বসনের অনটন মিটে গেলে অন্যস্বপ্ন অনশনে মরে;
পেটের আহার জুটে গেলে মনের ললিত লোভ
বিকাশব্যাকুল পাপড়ির মতো ক্রমশ ভাঁজ খুলে বাড়ে-
না হয় বদলে গেলো সময়ের ঘষায় সুখবোধ, দুঃখবোধ
মানুষের হাড়মজ্জায় থেকে গেলো পিপাসা, ভালোবাসা, প্রাচীন বিরোধ।
রুমন সবে সাত বছরে পা দিয়েছে। এবারই তার প্রথম রোজা থাকা। মা-বাবা রোজা থাকতে নিষেধ করলেও সে কথা শোনেনি। প্রথম চারটি রোজা নির্বিঘ্নে একেবারে সহিভাবেই থেকেছে। কাউকে বুঝতেই দেয়নি যে, সে এবারই প্রথম রোজাদার ব্যক্তি। বরং শেষবেলার দিকে বাবা-মা আর বড়ো আপু দূর্বল হয়ে পড়লেও রুমন ছিল বেশ শক্ত। সে বিছানায় শোয়নি পর্যন্ত। খুব আনন্দেই কেটেছে তার চারটি রোজা। সেহেরির সময়ে বাবা-মা আর আপুর সাথে খুব আনন্দে সেহেরি খেয়েছে, ইফতারে মাকে সাহায্য করেছে এবং বাবার সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াসহ তারাবিও পড়েছে মসজিদে গিয়ে। মূলত আল্লাহর ভয় যার মনে, তাকে পেটের ক্ষুধা কী দূর্বল করবে? না-খেয়ে থেকে যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা যায়, তবে বান্দার না-খেয়ে থাকতে কষ্ট কিসে? মসজিদের বড়ো হুজুর রফিকউল্লাহ খান একদিন রুমনকে বলেছিলেন, ‘বাবা, দুনিয়ার সামান্য কষ্টকে ভয় কোরো না। আখেরাতের কথা ভাবো। যেদিন সবাই ইয়ানাফসি ইয়ানাফসি করবে। সেদিন তোমার ভালোকাজগুলোর জন্যই তুমি আল্লাহর অনুগ্রহ পাবে, আর খারাপকাজের জন্য রয়েছে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি। তাই আল্লাহর পথে ইমান আনো। আল্লাহকে ভয় করো আর তাকে তোমার আমলনামায় সন্তুষ্ট করো।‘
হুজুরের মুখে এত সুন্দর উপদেশ শুনে রুমন সেদিন থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে দেয়। ফজরের ওয়াক্তে মসজিদের মাইকের ‘হাইয়ার আলাস সালাহ’ (নামাজের জন্য এসো) ধ্বনি শুনে রুমন আর ঘরে থাকতে পারে না। কিন্তু সে ছোটো ছেলে। ভোরের আলোয় একা একা মসজিদে যেতে সাহস হয় না তার। তাই বাবাকে একরকম জোর করেই জাগিয়ে তোলে, তারপর বাপ-বেটা একসাথে মসজিদে গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করে। মসজিদে গেলে বড়ো হুজুরের সাথে দেখা হয়। তিনি রুমনকে অনেক উপদেশ দেন, হাদিস শোনান। এসব রুমনের খুব ভালো লাগে। রোজা শুরুর আগেরদিনও হুজুর রুমনকে বলেছিলেন, ‘রুমন, আমাদের প্রিয় নবি ইরশাদ করেছেন, মুসলমানের জন্য রোজার মাসের চেয়ে উত্তম আর কোনও মাস আসেনি। নবিজি (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনও ওজর বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজাও পরিত্যাগ করবে, একটি রোজাও খেলাপ করবে—সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে, তবু ওই এক রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না।‘
রুমন সেদিন মুগ্ধ হয়ে হুজুরের কথা শুনেছিল। আর হুজুরকে কথা দিয়েছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে কখনওই রোজার খেলাপ করবে না সে। আর অনিচ্ছাকৃতভাবেও যেন রোজার খেলাপ না-হয়, সেজন্যও সে সদা সচেষ্ট থাকবে। হুজুর খুশি হয়ে রুমনের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেছিল।
আজ পঞ্চম রোজা। রুমন ঘরে বসে কাঁদছে। কাঁদছে মানে সে এক অন্যরকম কান্না। নাকের জল আর চোখের জলে মিলেমিশে একাকার। আর কাঁদবে না-ই বা কেন? সারাটাদিন কষ্ট করে রোজা থেকে শেষে কিনা ইফতারের মাত্র দুই ঘণ্টা আগে এই অঘটনটা ঘটে গেল! এটা কী মেনে নেওয়া যায়? অঘটন বলতে কী, রুমন ভুলবশত তার মুখের ছ্যাপ(থুতু) গিলে খেয়েছে। খেয়েছে তো খেয়েছে, সেই কথাটি আবার সে ফাঁস করেছে বড়ো আপু রুমকির নিকট। ছ্যাপ গিলে খাওয়ার পরই তার মনে হয়েছে, হায় আল্লাহ! আমি তো রোজা আছি। পাশেই বসে ছিল বড়ো আপু। রুমন কান্নাজড়ানো স্বরে বলেছিল, ‘আপু, আমি ভুল করে ছ্যাপ গিলে খেয়েছি। এখন কি আমার রোজা হবে?’
রুমকিও কম যায় না, ছোটোভাইকে খেপানোর জন্য সেও জবাব দিয়েছে, ‘না, তোর রোজা ভেঙে গেছে। এখন যা ভাত খেয়ে ফেল।’
এই কথা শুনেই কান্না শুরু করেছে রুমন। রোজা না থাকা এক কথা, কিন্তু সারাদিন রোজা থেকে সামান্য থুতু গিলে খেয়ে রোজা ভাঙলে তার যে কী ভীষণ কষ্ট, তা রুমন বলে বোঝাতে পারছে না। তাছাড়াও রুমনের মনে পড়েছে হুজুরের বলা সেদিনের হাদিসটি। একটি রোজার ক্ষতিপূরণ সারাজীবনের রোজা দিয়েও হবে না। রুমন কাঁদছে আর বিরবির করে বলছে, ‘এতবড়ো ভুল আমি করলাম কী করে?’
বাবা-মা কয়েকদফায় এসে রুমনকে বুঝিয়েছে, ছ্যাপ গিলে খেলে রোজা ভেঙে যায় না। আপু তোমার সাথে মজা করেছে। কিন্তু রুমনের সটান জবাব, ‘আপনারা কি হুজুর হয়েছেন? না-হলে এমন ফতোয়া দিচ্ছেন কী করে?’
এক কথায় বাবা-মা চুপ। ঠিকই তো, ইসলাম নিয়ে, কোরআন-হাদিস-কিতাব নিয়ে যাদের জানাশোনা নেই, তারা কী করে ইসলামের ফতোয়া দেবে? আর এভাবে সবাই যদি ধর্মের ফতোয়া দিতে শুরু করে, তবে আলেম-ওলামা, হাফেজ-হুজুরগণের কী দরকার? ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ মুসল্লীদের জানানোর জন্যই, বিধিনিষেধ সম্পর্কে অবগত করানোর জন্যই তো তারা অনেক অনেক পড়াশোনা করে হাফেজ, আলেম, হাকিম, ক্বারি প্রভৃতি হয়েছেন। তবে আর তাদের বাদ দিয়ে বাবা-মায়ের ফতোয়ায় বিশ্বাস করা কেন? রুমনও তাই বাবা-মায়ের ফতোয়া মানবে না। এদিকে বাবা-মায়ের বকুনির চোটে বাধ্য হয়ে রুমকিও একবার এসেছিল ভাইয়ের কান্না থামাতে। কিন্তু কাজ হয়নি। রুমন সোজা বলে দিয়েছে, ‘আমি বড়ো হুজুর ছাড়া আর কারও কথাই শুনব না। বড়ো হুজুর যদি বলেন, রোজা ভাঙেনি, তাহলেও মানব; যদি বলেন ভেঙেছে, তাহলেও মানব।’
বাবাও জানেন, রুমন খুব জিদ্দি ছেলে। সে যা বলে, তা করেই ছাড়বে। অতএব, ছেলের কথামতো বাবা দৌড়ে গেছেন বড়ো হুজুরের বাড়িতে। বেশি দূরে নয়। মিনিট পাঁচেকের পথ। তবে রোজা থেকে এটুকু পথ পাড়ি দেওয়াও যেন ভীষণ কষ্টের। কিন্তু ছেলের কষ্টের কথা ভেবে বাবার মোটেও কষ্ট হলো না। বাবারা চিরকাল সন্তানের কষ্ট কমানোর জন্য এমনই করেই নিজে কষ্ট সয়ে যান। তবুও তারা কষ্ট পান না। কারণ বাবারা সবসময় তার সন্তানের হাসিমুখে সুখে দেখতে চান। এজন্য যত কষ্টই হোক, তারা হাসিমুখে বরণ করে নেন। তিনি দ্রুতপায়ে হুজুরের বাড়ি গিয়ে দেখেন হুজুর বসে কোরআন পড়ছেন। রুমনের কথা সবিস্তারে শুনে, হুজুর আর এক মুহূর্তও দেরি করেননি। কোরআন শরিফটিও রাখেননি। সেটি হাতে নিয়েই অতি দ্রুতপায়ে রুমনদের বাড়ি চলে এসেছেন। হুজুরকে দেখে রুমন আরও জোড়ে কেঁদে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতেই হুজুরকে সালাম দেয়। হুজুর বুকে জড়িয়ে ধরে রুমনকে। রুমন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। হুজুর আলতো করে পিঠ চাপড়িয়ে সান্ত¡না দেয় এই ক্ষুদে আল্লাহ্ ভক্তকে। এমন আল্লাহভক্ত-শিশু হুজুর আর দ্বিতীয়টি দেখেননি। রুমনের আল্লাহর প্রতি ভক্তি, ভয় আর ইমানের দৃঢ়তা দেখে হুজুরের চোখও ভিজে যায় নোনাজলে। টপটপ করে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে মাটির পরে। এ জল পরম পবিত্র জল। এ জল একজন সাচ্চা ইমানদার বান্দাকে বুকে জড়িয়ে ধরার আনন্দের জল। আপন সন্তান আর হুজুরের এই অনিন্দ সুন্দর দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায় রুমনের বাবা-মাও। তাদের পদতলও ভিজে গেছে চোখের জলে। ইমানের এমনই শক্তি। ইমানদারের ভক্তি পাষাণকেও কাঁদাতে পারে। হজরত মুসা (আ.) ইমানের বলে সাগরের মাঝেও পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। আর ফেরাউন ইমানহীনতায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সদলবলে। হুজুর অনেকক্ষণ পর বুক থেকে আলগা করেন রুমনকে। ডান হাতে মুছে দেয় রুমনের অশ্রুস্নাত মুখমণ্ডল। কী নিষ্পাপ সেই মুখ! সারাদিনের অনাহারও সেই মুখে মলিনতার কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি। দরদমাখা কণ্ঠে হুজুর জিজ্ঞাসা করে, ‘কী হয়েছে বাছা? আমাকে বলো।‘
হুজুরের স্নেহপরশ পেয়ে রুমনের কান্না কিছুটা থেমেছিল। কিন্তু হুজুরের প্রশ্নে সে আবার ডুকরে উঠল। মিনিটখানেক কান্নার পর ভাঙা ভাঙা স্বরে বলল, ‘হুজুর গো, আমি ভুল করেই ছ্যাপ গিলে ফেলেছি। এখন আমার কী হবে? আমি তো সারাজীবনেও আজকের এই রোজার ক্ষতিপূরণ করতে পারব না।‘ বলেই আবার কান্না শুরু করে দেয় রুমন।
হুজুর এবার মুখে নূরানী একটি হাসি হেসে রুমনের পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে বলে, ‘পাগল। তোমাকে কে বলেছে ছ্যাপ গিলে খেলে রোজা ভেঙে যায়?’
আপুর দিকে তাকিয়ে রুমন বলে, ‘রুমকি আপু।‘
‘হুম।‘ হুজুর বললেন, ‘বুঝেছি। কিন্তু তোমার রুমকি আপু তোমার সাথে মজা করেছে। আর তোমার আপু তো হাদিস-কিতাব পড়েনি, তাই সে জানে না কিছুই। তুমি শোনো, রমজান মাস সংযমের মাস। এই মাসে খাবার-দাবারের প্রতি সংযম পালন করতে হয়। এটিই আল্লাহ-তা-আলার নির্দেশ। ইমানদারের জন্য পরীক্ষা। এসব শুনে তুমি মনে করতে পারো ইসলাম বুঝি অনেক কঠিন। কিন্তু না। ইসলাম যেমন অনেক কঠিন, তেমনি অনেক সহজও। আল্লাহ তার বান্দাদের কথা চিন্তা করে সকল সমস্যারই সহজ সমাধান দিয়েছেন। আর আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) তার উন্মতের জন্য কষ্টগুলোকে করেছেন নমনীয়। সকল সমস্যার জন্য তিনি দিয়ে গেছেন সহজ সমাধান। এই যেমন, তোমার সমস্যার কথাটি চিন্তা করেই রাসুল(সা.) বোখারি শরিফে বলেছেন, রোজা থেকে কেউ যদি ভুল করে কিছু (যে-কোনও খাবার, পানি বা থুতুও) খেয়ে ফেলে, তবে তার রোজার কোনও সমস্যা হবে না। শুধু রোজার কথা মনে হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তা তুমি কি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছ?’
হুজুরের জিজ্ঞাসায় চেতনা ফিরে পায় রুমন। এতক্ষণ সে মুগ্ধ হয়ে হুজুরের কথাগুলো গিলছিল। কী মধুর করেই না হুজুর কথা বলেন। শুধু শুনতেই ইচ্ছে করে। রুমন চোখগুলোতে আবার ঝরণাধারা ছেড়ে দিয়ে বলে, ‘না, আমি তো আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইনি।‘
হুজুর একটু মুচকি হেসে বলেন, ‘তবে এটি তোমার একটি ভুল হয়েছে বটে। তাই এক্ষুনি তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো। আল্লাহ-পাক পরম করুণাময়, পরম দয়ালু। তিনি তার বান্দাদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তিনি নিশ্চয়ই তোমাকেও ক্ষমা করবেন।‘
হুজুরের কথা শুনেই রুমন হাঁটু গেড়ে বসেন। দিগবিদিক জ্ঞান নেই তার। দুহাত তুলে মোনাজাত করার মতো করে জোরে জোরে কান্নাজড়ানো ভাঙা ভাঙা স্বরে বলতে শুরু করল, ‘হে আল্লাহ, হে রাহমানির রাহিম, হে দয়াময় প্রভু, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আর কক্ষনও এমন ভুল করব না।‘ এভাবে বেশ কয়েকবার কেঁদে কেঁদে আল্লাহর দরবারে ক্ষমাপ্রার্থনা করে মাথা নুইয়ে মহান রবের সমিপে সেজদা দেয় রুমন। মিনিটখানেক সেজদায় পড়ে থাকে অনড় হয়ে। উপস্থিত সকলেই দারুণ বিস্ময়ে দেখছে আল্লাহভক্ত এক শিশুকে।
কান্নামাখা মুখে সেজদা দিয়েছিল রুমন। সেজদা থেকে উঠল মুখে একরাশ হাসি নিয়ে। এই হাসিমাখা শিশুটিকে দেখে মনে হয়, যেন বেহশত থেকে নেমে এসেছে সে। তার সেই ভুবনভোলানো হাসি দেখে সকলেই আনন্দিত হলো। সেজদার এমনই মহিমা। সেজদা সকল অহংকার, সকল পাপ-তাপ-দুঃখ-শোক নাশ করে দেয়। রবের প্রতি যে মাথা নোয়াতে পারে, সংসারে তার আর কোনও দুঃখ-জ্বালা থাকে না।
হুজুরকে আবার জড়িয়ে ধরে রুমন মুচকি হেসে বলে, ‘হুজুর, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করেছি। আমার মন এখন ফুরফুরে হয়েছে। আর কোনও পাপবোধ হচ্ছে না আমার।’
হুজুর রুমনের মাথায় সস্নেহে আবার হাত বুলিয়ে দেয়। বলেন, ‘সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ তোমার প্রার্থনা কবুল করুন। আমীন। হুজুর আরও বলেন, ‘আর শোনো, এরপর থেকে থুতু গিলে ফেললেও ঘাবড়ানোর কোনও দরকার নেই। থুতু তোমার শরীরের ভিতরের জিনিস। স্বাভাবিকভাবে তাই থুতু গিললে রোজার কোনও সমস্যা হবে না।‘ এছাড়াও হুজুর রোজার বিভিন্ন বিধিনিষেধ সম্পর্কে রুমনকে অনেক কিছু বলে দিলেন। তারপর তার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা কোরআন শরিফটি রুমনের হাতে দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহর পরমপবিত্র-বাণীসমৃদ্ধ এই মহাপবিত্র কিতাবটি আমি তোমাকে উপহার দিলাম রুমন। তোমার আল্লাহর প্রতি ভক্তি, নিষ্ঠা, ভয় আর ইমানের জোর দেখে আমি খুবই খুশি হয়েছি। তাই এটি উপহার হিসেবে দিলাম। তুমি তো মক্তবে গিয়ে আরবি শিখতেছ। যখন আরবিতে পারদর্শী হবে, তখন এই পবিত্র কিতাবটি হৃদয়ে ধারণ করবে দোয়া করি তুমি আরও অনেক বড়ো হও। আল্লাহর রহমত তোমার উপর বর্ষিত হোউক। আমিন।‘
রুমন পবিত্র কোরআন উপহার পেয়ে মহাখুশি। পবিত্র কোরআনে নিষ্পাপ মুখে চুমু দিয়ে দুই চক্ষু স্পর্শ করে নেয় সে। বাবা-মায়ের দেখে দেখে এই কৌশল শিখে নিয়েছে সে। কথা বলতে বলতে ইফতারের সময় প্রায় হয়ে এলো। রুমনকে কাঁদানোর শাস্তিস্বরূপ আজ রুমকি ইফতার তৈরি করছে। রুমন হুজুরকে বলে, ‘হুজুর, আজ আমাদের বাসায় ইফতারের দাওয়াত গ্রহণ করুন। আমরা একসাথে আজ ইফতার করব।‘
হুজুরের রাজি না-হয়েও উপায় ছিল না। কারণ সময় বেশি নেই। অতঃপর সকলেই গোল হয়ে বসে ইফতারের খাবার সামনে রেখে অপেক্ষা করতে থাকে আল্লাহর হুকুমের জন্য। হুজুর বললেন, ‘আল্লাহ-তা-আলা, খাবার সামনে নিয়ে এভাবে বসে থাকাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। কারণ এ সময় অনাহারী মানুষের সামনে প্রচুর খাবার থাকার পরেও কেহ খেতে পারে না। অপেক্ষা করে আল্লাহর হুকুমের জন্য। এভাবেই আল্লাহ তার বান্দার ধৈর্য্য ও ইমানের পরীক্ষা নেন।‘ এমন সময় দূর মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসে ইফতারি করার যান্ত্রিক সংকেত। সকলে আল্লাহর নাম জপ করে, পানি মুখে দিয়ে ইফতার শুরু করে।