ক্ষমতায় থাকার নীলনকশা করছে সরকার : ফখরুল

14

ঢাকা প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার নীলনকশা নিয়ে আগামী নির্বাচন করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার সকালে নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭২ সালে যে সংবিধান ছিল তাকে ভেঙেচুরে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থার জন্য দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪টা আসন ডিক্লিয়ার করেছে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায়। ২০১৮ সালে আগের রাতে সমস্ত ভোট তুলে নিয়ে চলে গেছে। এখন আবার খায়েশ হয়েছে তাদের ৪১ সাল পর্যন্ত থাকতে হবে।
মির্জা ফখরুল প্রশ্ন রেখে বলেন, এই দেশটা কি তাদের জমিদারি? আমরা সব প্রজা আর সেই প্রজার মতোই আমাদের সঙ্গে ব্যবহার শুরু করেছে। আসলে এই কথায় হবে না, আমাদের কাজে নেমে পড়তে হবে। মানুষকে নামতে হবে আরো বেশি করে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে আরো কাজ করতে হবে। জনগণের উত্তাল তরঙ্গের মতো আন্দোলন সৃষ্টি করে এদের পরাজিত করতে হবে।
এই সরকার, এই ইসির অধীনে নির্বাচন নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের দুই-তিনজন মন্ত্রী আছেন যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেন। এখন আবার বলতে শুরু করেছে, বিএনপি ভয় পায়, বিএনপি নির্বাচন করবে। আমরা বলে দিতে চাই, বিএনপি এই সরকারের অধীনে, হাসিনা সরকারের অধীনে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এই আন্দোলনে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। সেখানে পরিষ্কার বলেছি, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করার পরে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের নির্বাচন করতে হবে।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সংঘর্ষে যেতে চাই না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চাই। ১০ দফা মেনে নেন, মানে মানে কেটে পড়ুন। ১০ দফা মেনে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের কাছে বিকল্প পথ নাই।
বর্তমান সরকারের আমলে ‘দুর্নীতি’র নজির হিসেবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অর্থ লুট এবং তারপর কিছু অংশ উদ্ধারের ঘটনাটি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে দুর্নীতি ভয়াবহ। এই যে, ১১ কোটি টাকা ব্যাংকের দিনে-দুপুরে হাইজ্যাক হল। কী সাজানো নাটক! সবাই মিলে ভাগ করে বলছেন, না না ৯ কোটি টাকা উদ্ধার হয়নি, তিন কোটি উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় গেল, জবাব দেবে কে?
বৃহস্পতিবার সকালে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথে জমা দিতে যাওয়ার সময় সোয়া ১১ কোটি টাকা লুট হয়। সন্ধ্যায় লুট হওয়া সেই টাকার মধ্যে ‘বেশিরভাগ’ উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
কিন্তু পরদিন জানায়, লুট হওয়া টাকার মধ্যে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, সরকার অনেক রকমের চক্রান্ত শুরু করেছে আবার। পঞ্চগড়ে একটা সাম্প্রদায়িক হামলা সৃষ্টি করার জন্য তারা অনুমতি দিয়েছে, তারা সেই নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
আর সেই ঘটনার পরে ১৮৩ জন বিএনপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা এই মুহূর্তে তাদের মুক্তি দিতে হবে।
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ নিয়ে করা চুক্তিকে দেশের ‘স্বার্থবিরোধী’ হিসেবে বর্ণনা করেন ফখরুল। তিনি বলেন, এদেশের মানুষ সোচ্চার হয়েছে, প্রতিবাদ করছে যে, ভারতের আদানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, যে চুক্তি বিদ্যুৎ ক্রয় করা। এটা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরোধী। আমরা প্রকাশ্যে বলেছি, এই চুক্তি কোনো মতেই বাংলাদেশের পক্ষে যেতে পারে না। সেটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহব্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম মজনুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বক্তব্য দেন।