ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি পুলিশের

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফটিকছড়ির ভূজপুর থানাধীন বাগানবাজার এলাকার দুই পল্লী চিকিৎসকসহ তিন নিরীহ যুবককে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায়’ গ্রেপ্তার ও পুলিশের মুক্তিপণ দাবির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগীদের পরিবার।
গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভূজপুর থানার ওসি হেলালসহ দুই উপ-পুলিশ পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগীর ভাই ওমর ফারুক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২৯ জুলাই রাতে উপজেলার হেয়াকোঁ বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে পল্লী চিকিৎসক (পশু) শাহীন আলম, নুরুল আলম এবং সিএনজি অটোরিকশা লাইনম্যান মো. সুমনকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর তিন যুবকের পরিবারের কাছে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তাদের পরিবার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে তিন দিন ধরে থানা হেফাজতে আটকে রেখে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ তাদেরকে থানা হেফাজতে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে ও হাতের আঙ্গুলের নখে সুঁই ঢুকিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। পরে ডাকাত হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। ওসি হেলালের নির্দেশে এসআই মাহফুজ এবং এসআই আমিনুল ইসলাম ভূইয়া তিন দিন ধরে থানা হেফাজতে তিন যুবকের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর পর অবশেষে তাদেরকে ডাকাতি ও অস্ত্র মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেয়।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওসি হেলালসহ তিন পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী তিন যুবকের পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার সাথে জড়িত তিন পুলিশের বিরুদ্ধে আইনগত বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ গ্রেপ্তার হওয়া তিন যুবকের মুক্তির দাবি জানানো হয়। এসময় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে আবদুল অদুদ, আবদুল হক, আফিয়া খাতুন, জুলেখা বেগমসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার সুমনের ভাই ওমর ফারুক বলেন, উপজেলার বাগান বাজার হেয়াকোঁ এলাকায় পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন অজুহাতে প্রায়ই এলাকার নিরীহ লোকজনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যাহত রেখেছে।
তাদের কোন ধরনের অপরাধ না থাকার পরেও ওসি হেলালের নির্দেশে তাদেরকে সেখান থেকে ভুজপুর থানায় নিয়ে এসআই মাহফুজ আমার ভাইসহ অপর দুই যুবক বৈদ্যুতিক শর্ট দেয়, আঙ্গুলের নখের নীচে সুঁই দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে ডাকাত হিসেবে স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা করে। তিনদিন ধরে তাদেরকে ভূজপুর থানায় এভাবে অমানবিক নির্যাতন শেষে ডাকাত হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে কোর্টে চালান দেয়। এর আগে এসআই মাহফুজুর রহমান (০১৮৬৮-২৭৯৯৪১) মোবাইলে ফোন করে বলেন এ তিনজনকে ছাড়াতে হলে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে নিরপরাধ এ তিন যুবককে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করবে বলে হুমকি প্রদান করে।
মামলার এজাহার এবং এফআইআর এ তিন যুবককে হেয়াকোঁ সেলফি রোড এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র মামলা দেয়া হয়। অথচ যে সময় এবং স্থানে ডাকাতির প্রস্তুতির কথা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে সে সময় এ তিনজন হেয়াকোঁ বাজারের প্রাইম ব্যাংকের সামনে রাস্তার উপর গাড়ির জন্য অপেক্ষমান ছিল। যার সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সেটা আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। আমরাও তা সংরক্ষণ করে রেখেছি। এছাড়া পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করার সময় কোন ধরনের অস্ত্র না পাওয়ার পরও তাদেরকে হেফাজত থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে মর্মে মামলার এজাহারে উল্লেখ করে।
পুলিশের এ ধরনের আচরণের কারণে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পুলিশ সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার বদলে নিরীহ মানুৃষকে হয়রানি করছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।