ক্যাসিনো

33

স¤প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে এবং প্রচুর নেশাদ্রব্য ও জুয়া খেলার সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এই ক্যাসিনোনির্ভর জুয়ার চক্করে পড়ে কলঙ্কিত হচ্ছে আমাদের দেশের ক্লাবগুলো। এখন ক্লাবগুলোতে ক্রিকেট, ফুটবল খেলা থেকে বেশি হচ্ছে জুয়া খেলার চর্চা। যা আমাদের দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য অশনি সংকেত বয়ে আনছে। মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবও জুয়ার কালো থাবা থেকে রেহাই পায় নি। মতিঝিলে অভিযান চালিয়ে মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, আরামবাগ ও দিলকুশ ক্লাব থেকে ক্যাসিনোর বিপুল পরিমাণ সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে, আশার আলো দেখায় আবাহনী ক্লাব, শেখ জামাল ধানমÐি ক্লাব, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র এবং হালের আলোড়ন তোলা চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। কারণ এই ক্লাবগুলো জুয়া – ক্যাসিনো ছাড়াই ক্রীড়াঙ্গনকে আলোকিত করছে। ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, এই অবস্থা শুধু বড় ক্লাবগুলোতেই নয়, বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠা খেলাধুলার ক্লাবগুলোতেও একই অবস্থা। ফলে, ক্লাব সংস্কৃতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠেছে।
এই ক্যাসিনোগুলো সাধারণত মাতিয়ে রাখে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী ধনীর দুলালরা। আর এই ক্যাসিনোগুলোর পরিবেশ এমন হয় যে, এখানে ঢুকলেই টাকা উড়াতে মন চায়। সোজা কথায়, আমির থেকে ফকির হওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে ক্যাসিনো ভ্রমণ। তাছাড়াও, ক্যাসিনোতে থাকে বিভিন্ন নেশা দ্রব্যের আয়োজন। ফলে, জুয়ারি ও নেশাখোরদের জন্য পরিবেশটা হয়ে উঠে সোনায় সোহাগা।
আবার বিশ্বে অর্থ পাচারের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই ক্যাসিনো বা জুয়া। ইউরোপের দেশগুলোয় এক দেশের ক্যাসিনো কয়েন সার্ভিস চার্জ দিয়ে অন্য দেশে ক্যাশ করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট সূত্র মতে, যে সকল ক্যাসিনোর কয়েন পাওয়া গেছে, সেগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক কয়েনের মিল রয়েছে। তবে, এর মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও ক্যাসিনোর মাধ্যমে টাকা অর্জনই বড় ধরনের অপরাধ, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য।
জুয়া বিষয়ে আমাদের দেশে প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭ চালু রয়েছে। তবে, এখানে ক্যাসিনো সম্পর্কে কিছু বলা নেই। এই আইন অনুসারে, কোন ঘরের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী জেনেশুনে অন্য লোককে তা জুয়ার স্থান হিসেবে ব্যবহার করতে দিলে অর্থদÐ ও কারাদন্ডের বিধান আছে। আবার, ১৯৭২ সালের সংবিধানে জুয়া বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশ দেয়া আছে। যদিও পরবর্তীতে এ বিষয়ে আর নতুন কোন আইন হয় নি। তাই, এখনো দেড়শ বছরের পুরনো আইনটিই চালু রয়ে গেছে। এই দিকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও লাইসেন্স নিয়ে মদ বিক্রি ও পানের সুযোগ আছে। কিন্তু, ক্যাসিনোর লাইসেন্স দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা বা সুযোগ বাংলাদেশের আইনে নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশের আইনে ক্যাসিনো নিষিদ্ধ।
তবে, একটু অন্যভাবে যদি দেখা যায়, সেক্ষেত্রে আমাদের দেশেও ক্যাসিনোর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, উন্নত বিশ্বের লোকেরা সাধারণত ক্যাসিনোতে যেতে পছন্দ করে। তাই বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য এর প্রয়োজন আছে। গত মঙ্গলবার বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সচিব মো. মহিবুল বলেন, বাংলাদেশে পর্যটনের বিকাশে বিদেশি পর্যটকদের প্রয়োজন আছে। সেই কারণে বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ পর্যটন এলাকাগুলোতে ক্যাসিনো ও নাইট ক্লাবের সুবিধা থাকবে।
বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের ব্যবসা চলে ক্যাসিনোনির্ভর জুয়াকে ঘিরে। চীনের মূল ভূখÐ আর কিছু মুসলিম দেশ ছাড়া পর্যটননির্ভর অর্থনীতির প্রায় সব দেশেই আছে ক্যাসিনোর রমরমা আয়োজন। বিশ্বের অনেক মুসলিম প্রধান দেশেও বৈধ ক্যাসিনো আছে। সবচেয়ে বেশি ১৭টি আছে মিশরে, ৯টি আছে তুরস্কে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, আরব আমিরাত আর এশিয়ার মালয়েশিয়াতেও ক্যাসিনোর অনুমোদন আছে। তাহলে আমাদের দেশেও স্বল্প সংখ্যক বৈধ ক্যাসিনো রাখা যেতে পারে। তবে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা ক্যাসিনোগুলো বন্ধ করতে হবে। যদি পর্যটন এলাকাগুলোতে বিদেশি পর্যটকদের জন্য আলাদা ক্যাসিনোর ব্যবস্থা রাখা হয় তবে বিদেশি পর্যটকরা আমাদের দেশ ভ্রমণে আকৃষ্ট হবে এবং সরকারও রাজস্ব নিয়ে লাভবান হতে পারবে। আর এই সকল ক্যাসিনোতে যেন সাধারণ মানুষ অবাধে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য পাসপোর্ট দিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এছাড়াও, ক্যাসিনো কয়েন দিয়ে যেন অর্থ পাচার না হয় সেই দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে করে আমাদের দেশের ক্লাবগুলোও সুরক্ষিত থাকবে আর সরকারও রাজস্ব দ্বারা লাভবান হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী