ক্যালিফোর্নিয়ায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান

44

পূর্বদেশ অনলাইন
যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী ‘আমাদের বৈশাখ’ নামে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেছে। অনুষ্ঠানের মূলমন্ত্র ছিল ‘বাঙালির বাঙালিত্ব বিশ্বায়িত হোক’। ক্যালিফোর্নিয়া বাংলাদেশি বৌদ্ধ জনগোষ্টীর অনুষ্ঠানে ছিল দিনব্যাপী নানান আয়োজন। সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে চিরায়ত ফুল, পাখি, পুতুল, ডালা, কুলা, হরেক রকম বাদ্যবাজনা বাজিয়ে শিশুদের সাথে নিয়ে নেচে গেয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া বাংলাদেশি বৌদ্ধ পরিবারগুলো। আয়োজকরা বলেন, তাঁরা বাংলাদেশকে বাংলা সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করেন। তাঁরা তা লালন করেন বলেই তা বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছুক। কোলের ছোট্ট শিশুটিকেও সাথে নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছেন। যা দেখে ক্ষণিকের জন্য মনে হচ্ছিল দূরদেশে যেন এক ছোট্ট বাংলাদেশ। বাঙালির চিরন্তন সংস্কৃতি ধর্মনিরপেক্ষতা আর বাঙালিত্বে। তার পুরোটাই প্রকাশ পায় বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের আনন্দে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে আসছে সেই আদিকাল থেকেই। পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশিরা দেশিয় সংস্কৃতি চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যে যেভাবে পারেন বিদেশের মাটিতে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে থাকেন। সবার চেষ্টা থাকে দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার। একসময় গ্রাম-নগর নির্বিশেষে বাংলার সব মানুষ, সে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ কি খ্রিষ্টান, বাংলা নববর্ষের উৎসবে সোৎসাহে যোগ দিত। পরস্পরের বাড়িতে যাওয়া-আসা, শুভেচ্ছাবিনিময়, খাওয়া-দাওয়া, নানা রকম খেলাধুলা ও আনন্দ-উৎসব, মেলা ও প্রদর্শনী মিলে সারাবছরের অন্য দিনগুলো থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র হয়ে এইদিনটি গৌরবমণ্ডিত হয়ে উঠত। এই রীতি ৩৫০ বছরেরও বেশি আগের, যা বিখ্যাত ঐতিহাসিক আবুল ফজল তাঁর ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে বাংলা নববর্ষকে এদেশের জনগণের নওরোজ বলে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য তারও বহু শতবর্ষ আগে থেকে বাংলার মানুষ নানাভাবে এইদিনটি পালন করে আসছে। আমরা যারা দেশ ছেড়ে এসেছি তাঁদের জন্য বৈশাখ আসলেই নাড়ীতে টান পড়ে। আমাদের ‘এসো হে বৈশাখ’ গানে বাংলা নতুন বছর ১৪২৯ কে বরণ করল প্রবাসীরা। আমেরিকার অন্যন্য শহরের মতো ক্যালিফোর্নিয়ার প্রবাসী বাঙালিরা হৃদয়ে বাংলাদেশ নিয়ে বেঁচে থাকে প্রতিদিন। এমন কোনো বাঙালি পাওয়া যাবে না, যে দিনে অন্তত একবার বাংলাদেশকে মনে করে আবেগতাড়িত হয় না, হৃদয় নীল হয় না কষ্টে। ফেলে আসা জন্মভূমি, শৈশব, বেড়ে ওঠা, বাংলার মাটির সোঁদা গন্ধ, হাজারো শিকড়ে আঁকড়ানো বন্ধন ভেতরে ভেতরে কাঁদায় এদের প্রতিদিন। দূরত্ব অনেক সময় ভালোবাসাকে প্রগাঢ় করে দেয়। সেই টানেই প্রবাসের মাটিতে ব্যস্ত জীবনের মাঝেও বাঙালিরা একত্রিত হয় পহেলা বৈশাখে, বরণ করে নিতে নতুন বছরকে, মেতে ওঠে বিভিন্ন বাঙালি উৎসব-আয়োজনে। এখানেও বাজে তাকডুম তাকডুম বাংলাদেশের ঢোল। বাংলাদেশের গ্রাম-শহর-পাড়া-মহল্লা, চট্টগ্রামের ডিসি হিল থেকে ঢাকার রমনার বটমূল হয়ে পহেলা বৈশাখের উৎসব চলে এসেছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রতিটি প্রবাসী বাঙালির ঘরে, এসেছে ডন ক্যানাবি কমিউনিটি রিজিওনাল পার্কে। চেরিটোস ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্যানাবি পার্কে সকাল থেকেই নেমেছে বাঙালির ঢল। উৎসবে রঙিন হয়েছে চারিদিক, পারিবারিক আবহে বাঙালিরা মেতে উঠেছে আড্ডায় আর গানে। শাড়ি আর পাঞ্জাবি জায়গা করে নিয়েছে এদেশের ওয়েস্টার্ন জীবনে। দিনব্যাপী চলে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, প্রীতিভোজসহ নানান আয়োজন। আমাদের বৈশাখ নামে বিশেষ এই আয়োজনের উদযাপন কমিটির পরিকল্পনার ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার পলাশ বডুয়াসহ আরও অনেকেই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হারমোনিয়াম বাজিয়ে সহযোগিতা করেছেন কাকলী বড়ুয়া, তবলায় ছিলেন শিপন বড়ুয়া আর এদেশে বেড়ে উঠা একদল শিশুশিল্পী। আয়োজকেরা বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালি জীবনের অসাম্প্রদায়িক, সার্বজনীন একটি উৎসব, বর্ষবরণের দিন। অতীত বছরের দুঃখ-গ্লানিকে ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় সবাই। এদিনটি বাংলাদেশের মতো এদেশেও প্রতিটি বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে উৎসব আমেজ আর ফুরফুরে বাতাসে ভেসে যাওয়া আনন্দের ঢেউ। আলপনা আঁকা শাড়ি আর পাঞ্জাবি ছাড়া যেন এদিনটি পালন করাই যায় না। সাথে লাল-সবুজ আর সাদার মিশেলে হাতে, গালে ফুলকি আঁকা এখন হালফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছরই ক্রমশ বাড়ছে বর্ষবরণের আমেজ। পান্তা-ইলিশ, বাঁশি, ঢাক-ঢোলের বাজনায় পূর্ণতা পাচ্ছে বাঙালির এ উৎসবমুখরতা।