ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত বসবাস

45

মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের ২ বছর পূর্ণ হবে আগামী ২ আগস্ট। কিন্তু সেখানে এখনও তৈরি হয়নি স্থিতিশীল পরিবেশ।
উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৩৪টি শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহন করে থাকলেও এভাবে অনিশ্চিত ও ভাসমান অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকতে চান না।
গত মঙ্গলবার কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা হলে তারা এ অভিমত প্রকাশ করেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের সেনা ছাউনিতে সেদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হামলা চালালে ‘বলির পাঁঠা’ হন রোহিঙ্গারা। ওই ঘটনার জের ধরে মিয়ানমার সরকারের নির্দেশে সেনা, বিজিপি ও উগ্রবাদী রাখাইন যুবকরা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুদের ওপর বর্বরোচিত হামলা শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা।
ভয়াবহ এ নির্মমতায় পারিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের কোন উদ্যোগ নেই বলে দাবি করেন রোহিঙ্গা নেতা ডা. ফয়সাল আনোয়ার।
বালুখালী ক্যাম্পের হামিদ উল্লাহ জানায়, মিয়ানমার সরকার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে কালক্ষেপন করছে। আদৌ রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে কি না সন্দেহ রয়েছে। আমাদের বসত-ভিটা, সহায়-সম্বল ফেলে আসার কারণে এখানে কিছুই ভাল লাগে না। আর কতদিন এখানে এভাবে অনিশ্চিয়তার মাঝে থাকতে হয় জানি না।
রাখাইন রাজ্যে মংডুর প্রত্যন্ত জনপদ চাইদাথং এলাকার বাসিন্দা আহমদ নুর (৩৮) জানান, রাখাইনে কিছুটা স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হলে আমরা চলে যাব। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করছে না। বাংলাদেশ সরকার আমাদেরকে আশ্রয় এবং খাবার দিয়ে খুবই ভাল রেখেছে।

কিন্তু আমার মনটা সারাক্ষণ নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারের দিকে। অধির অপেক্ষায় আছি, কখন ফিরতে পারব নিজ দেশে।
বলী বাজার এলাকার বাসিন্দা রুহুর আলম (৩৪) জানান, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জমি ও বাড়ি ভিটায় সেনা ক্যাম্প করা হচ্ছে। রাখাইনদের বাড়ি ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছে ভবিষ্যতে কোনদিন যদি রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যায়, তাহলে তারা বাপ-দাদার বাড়ি-ভিটার অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না। তাই দ্রæত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কামনা করছি।
কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর জানান, তাদের ক্যাম্পে নতুন-পুরাতন মিলে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। নতুন যারা এসেছে, তারা খুবই কষ্টে আছে। ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে পলিথিনের ছাউনির নিচে ছেলে-মেয়ে নিয়ে গাদাগাদি করে বসবাস অত্যন্ত কষ্টকর। তাছাড়া বর্ষায় এসব রোহিঙ্গা কোথায় গিয়ে বসবাস করবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তাই এসব রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৬৭৩ পরিবারের ৮,০৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করা হয়। মিয়ানমার ওই তালিকা যাছাই-বাছাই করে ৩৭৪জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে দিনক্ষণ ঠিক করলেও বিভিন্ন জটিলতার কারলে সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে দ্রæত প্রত্যাবাসনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।