কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ লামায় দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ

104

বান্দরবানের লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের রেমং মেম্বার পাড়া সংলগ্ন ফারাঙ্গা খালের ওপর প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও তা জনগণের কোনো কাজেই আসছে না। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ব্রিজটি নির্মাণ করে। কিন্তু ব্রিজের উভয় পাশে মাটি ভরাট ও গাইডওয়াল না থাকায় সুবিধার পরিবর্তে এখন সেটি ৩ শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ পাঁচ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষা মৌসুমে খালের পানির স্রোতের টানে ব্রিজের উভয় পাশ থেকে মাটি সরে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে রোগী, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের যাতায়াত দূরূহ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া মোটেই সম্ভব হয় না। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। দুর্ভোগ লাঘবে দ্রæত ব্রিজের উভয় পাশে গাইডওয়াল নির্মাণসহ উঁচু করে মাটি ভরাটের জোর দাবি জানান ভুক্তভোগী পাঁচ গ্রামের বাসিন্দা।
সূত্রে জানা যায়, দূর্গম পাহাড়ি রেমং মেম্বার পাড়ার পশ্চিম পাশে রয়েছে ফারাঙ্গা নামের একটি খাল। এ খাল পাড়ি দিয়েই রেমং মেম্বার পাড়াসহ আশেপাশের পাঁচ গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যেতে হয় বিদ্যালয়ে। এছাড়া এ খাল পার হয়েই স্থানীয়দের বিভিন্ন কাজে যেতে হয় ইউনিয়ন ও উপজেলা সদর, পাশের আজিজনগর ইউনিয়নসহ চকরিয়া, লোহাগাড়া উপজেলায়। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর থাকে খালটি। তাই শুষ্ক মৌসুমে এ খাল পাড়ি দিয়ে কোনোমতে যাতায়াত করা গেলেও, বর্ষা মৌসুমে তা মোটেই সম্ভব হয় না। এলাকাবাসীর এসব দুর্ভোগ লাঘবে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ওই খালের ওপর প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়।
রেমং মেম্বার পাড়ার কারবারী মং মং মার্মা অভিযোগ করে জানান, ব্রিজটি নির্মাণের ৬ মাস পর খালের পানির স্রোতে দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেসে যায়। যার কারণে ব্রিজটি দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। গত এক বছর ধরে আমরা কষ্ট করে পায়ে হেঁটে খাল পার হচ্ছি। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয়। তিনি বলেন, গাইডওয়াল নির্মাণ না করার কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ব্রিজের উভয় পাশ দিয়ে খালের পানি চলাচলের কারণে মাটি সরে গিয়ে ব্রিজের ছাদ থেকে রাস্তা ৩-৪ ফুট নিচে নেমে যায়। ব্রিজের উভয় পাশে মাত্র ৫০ গজ রাস্তায় মাটি দিলেই ব্রিজটি জনসাধারণের যাতায়াতে ‘উপকারী ব্রিজ’ হতে পারতো।
শিক্ষার্থী এখিং মার্মা জানায়, সংযোগ সড়কে মাটি ভরাট না করার কারণে শুষ্ক মৌসুমে কোনোমতে স্কুলে যেতে পারলেও বর্ষাকালে বৃষ্টি এলে পানিতে খাল ভরপুর হয়ে যায়, তখন আর স্কুলে যেতে পারি না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় প্রæ চাইং মার্মা ও উওয়াং মার্মা জানান, ব্রিজের ওপর দিয়ে এলাকার কৃষক তাদের জমিতে কৃষি পণ্য উৎপন্ন করে বাজারজাতকরণে ও পাঁচ গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাতায়াতে রাস্তাটি ব্যবহার করে থাকেন। অথচ ব্রিজের দু’পাশে গাইডওয়াল নির্মাণ না করায় বর্ষা মৌসুমে রাস্তার মাটি সরে যায়। এতে করে এ ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারছি না। এটি আমাদের ‘উপকারী ব্রিজ’ না হয়ে ‘দুর্ভোগের ব্রিজ’ হয়ে গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
এ বিষয়ে গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা জানান, ইতোমধ্যে চল্লিশ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির মাধ্যমে রেমং মেম্বার পাড়া সংলগ্ন ব্রিজটির উভয় পাশে মাটি ভরাট করা হয়েছিল। কিন্তু বর্ষায় পানির স্রোতের টানে তা ভেসে গেছে। তাই গাইডওয়াল নির্মাণসহ মাটি ভরাটের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ করা হবে।
লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মজনুর রহমান বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ফারাঙ্গা খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। পাশাপাশি ব্রিজের উভয় পাশে মাটি দ্বারা রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত খালের পানির স্রোতের টানে মাটি সরে গেছে। ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের মাধ্যমে পূণরায় ব্রিজের উভয় পাশে মাটি ভরাট করে দেয়া হবে।