কোভিড-১৯ নতুন করে কড়া নাড়ছে ‘ওমিক্রন’

19

 

করোনা ভাইরাসের ডেল্টা কিংবা বিটা ভ্যারিয়েন্টের পর বিশ্বে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে। কোভিড-১৯ এর ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা ও ভিটার তুলনায় তিনগুণের বেশি পুনসংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন মত বিশেষজ্ঞদের। ২০২০ সালের মার্চ হতে দেশে করোনা ভাইরাস জনিত কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর ২০২১ সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখ হতে সীমিতভাবে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খুলে দেয়া হয়। এর মধ্যে গত মাসে এসএসসি পরীক্ষা ২০২১ খুবই সীমিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়। বিগত ২ ডিসেম্বর হতে এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ শুরু হয়েছে। তাও খুবই সীমিতভাবে হচ্ছে। নামেমাত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও তাতে অপরিহার্য বিষয় বাংলা ও ইংরেজি ভাষার পরীক্ষা হচ্ছে না। তাছাড়া আবশ্যিক বিষয় আইসিটিও নেই। তিন ঘণ্টার পাবলিক পরীক্ষা ১.৩০ মিনিটে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
২০২০ সাল হতে করোনা সংক্রান্ত কারণে দেশের শিক্ষায় ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট কাটিয়ে তোলার লক্ষে শিক্ষামন্ত্রী আগামী জানুয়ারি ২০২২ হতে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করার কথা বলেছিলেন। শর্ত একটাই যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা আশায় বুক বেঁধেছিল যে, আগামী বছর হতে দেশে শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিকতায় ফিরে যাবে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, বিশ্বে করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা যার নাম দিয়েছেন ‘ওমিক্রন’। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দ্বিতীয় ঢেউ ডেল্টার চেয়ে আরও মারাত্মক বলে চিকিৎসকদের ভাষ্য। এমতাবস্থায় বিশ্বের যে সকল দেশে করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে যে সকল দেশের অবস্থা খুবই সংকটজনক। উন্নত বিশ্বের যে সকল দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে তাদের সামর্থ্য আর আমাদের সামর্থ্য একরকম নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, ব্যাংকক এর মতো অর্থনৈতিক ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে উন্নত দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। সেখান হতে আমাদের দেশে তা চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে করোনা সংক্রমণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও মৃত্যুর হার বাড়েনি। তার পরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার কথা আগাম উল্লেখ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হবার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট এবং ছাত্র-ছাত্রী-অভিভাবকদের মধ্যে পুনরায় শিক্ষা ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠা বেড়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর হতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে যে স্বস্তি দেখা গিয়েছিল তা আবার কমে যাচ্ছে। দেশে এখনো ওমিক্রমন ভ্যারিয়েন্ট পৌঁছতে দেখা যায়নি। তারপরও দেশের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসমূহ এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দরে সরকার অতিমাত্রায় সতর্কাবস্থা জারি করেছে। অভিভাবকদের অভিযোগ দেশে যখনই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছিল তখনো দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, রাজনৈতিক সমাবেশ, সভা সমিতি, কলকারখানা, গার্মেন্টস ফ্যাক্টেরি সবই চালু থাকতে দেখা গেছে। এমন কি পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যন্ত করোনাকালীন সময়ে অনুষ্ঠিত হতে দেখা গেছে। সাধারণ মানুষ বলছে করোনা দেশে এসেছে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষাশূন্য করার জন্য।
বিগত সময়ে দেখা গেছে করোনার কারণে তলানিতে পৌঁছেছে শিক্ষা। অথচ অন্যসব করোনা সংক্রমন সম্ভাবনা জনিত কর্মকান্ড দেশে চলতে থাকে। যা দেশের সকলের জানা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের আগাম হুমকিকে শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার পাঁয়তারা মনে করছে দেশের সচেতন অভিভাবকরা। অতীতে দেখা গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশে তান্ডব চালিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ সব কর্মকান্ড অব্যাহত রেখে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা তথা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রধান নিয়ামক হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং জীবন যাপন অব্যাহত রাখা। মাস্ক পরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দেশের সকল কার্যক্রম চালু রাখতে পারলে দেশ সব ধরনের সংকট থেকে রক্ষা পাবে। চট্টগ্রামের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়ালেও চিকিৎসার দ্রুত প্রস্তুতির কথা বলছে। প্রয়োজনে যে সকল চিকিৎসা সুযোগ করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার কারণে কমিয়ে ফেলা হয়েছে তা পুনরায় বৃদ্ধি করা যাবে। নতুন তৃতীয় ঢেউ আসলেও আতঙ্ক না হয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক প্রস্তুতির কথা বলেছে ডবিøউএইচও। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার এমন পরামর্শ দেশের সরকার ও জনগণ মেনে চললে করোনার যে কোন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলা করা যে কোন জাতির জন্য সম্ভব।
অকালে গাছের অনেক ফল ঝরে যায়। মৃত্যু সকলের আছে। সবসময় মৃত্যুর কথা চিন্তা করলে মানবজাতি পৃথিবীতে জীবন যাপন করতে পারবে না। আগামী প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখার কথা বলে দেশের শিক্ষাকে ধ্বংস করে দেয়া হলে বিশেষভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে দেশের আগামী প্রজন্ম। কোন পঙ্গু প্রজন্ম উন্নত বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারবে না। সুতরাং শিক্ষাক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত জাতি দেশের উন্নতি, অগ্রগতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে না। আমাদের সরকার ও দেশবাসীকে বিশ্বে চলমান কোভিড-১৯ এর ব্যাপারে অতিমাত্রায় আতঙ্কিত হলে চলবে না। যা থাকে কপালে এ বিশ্বাস নিয়ে দেশের শিক্ষাসহ সকল সেক্টরকে স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমান জাতির কাজ। আমরা অতীতে দেশের করোনা সংক্রমণজনিত সংকট যেভাবে মোকাবেলা করেছি তাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের মৃত্যুর হার খুবই কম। তবে এর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ রাখাটা আমাদের সরকারের একটি বড় ধরনের বোকামী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও আমরা সম্পূর্ণরূপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে বাঁচতে পারিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ করে দিয়ে করোনার তৃতীয় ঢেউ তথা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার কোন নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধির উপর গুরুত্বারোপ করে দেশের সবকিছু সচল রাখাই হবে বুদ্ধিমান জাতির কাজ।