কোন কোন দেশে বিমান চলাচল বিপজ্জনক?

67

বিমানে কোথাও যাওয়াকে মনে করা হয় সবচেয়ে নিরাপদ ভ্রমণ, কিন্তু কিছু দেশ আছে যেখানে বিমানে চলাচল করা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এরকম একটি দেশ হচ্ছে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র বা ডিআরসি। সম্প্রতি এই দেশটিতে দুটো দুর্ঘটনার পর বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে বড় রকমের প্রশ্ন উঠেছে। সবশেষ দুর্ঘটনাটি হয়েছে নভেম্বরে, পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমায়। বিমানটি একটি বাড়ির উপরে আছড়ে পড়লে ২৭ জন প্রাণ হারান।
এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক সারা বিশ্বে বিমান চলাচলের উপর নজর রাখে এবং এবিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। তাদের তথ্য উপাত্তে দেখা যায়, ১৯৪৫ সালের পর আফ্রিকা মহাদেশের এই দেশটিতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনায় পড়েছে।
নর্থ ড্যাকোটা ইউনিভার্সিটির ড্যানিয়েল কাওয়াসি আদজেকুম বলছেন, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে প্রচুর দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে নানা কারণ – ভৌগলিক ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দুর্বলতা।
একই সাথে এই দেশটিতে বিমানে চলাচল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রাজধানী কিনশাসা থেকে দেশটির ২৫টি বড় বড় শহরের মাত্র চারটি ছাড়া আর কোনটিতেই সড়ক পথে যাওয়া যায় না।
দেশটির বিমান বন্দরের অবকাঠামো খুবই সেকেলে ও ভগ্নপ্রায়, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্যে যে ট্রাফিক ব্যবস্থা ও যন্ত্রপাতি আছে- সেসবও কোন রকমে কাজ চালানোর মতো। এছাড়াও যেসব বিমান ব্যবহার করা হয় সেগুলোও বাতিল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায়, কিম্বা বহু বছরের পুরনো।
ফ্লাইট ক্রু এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে যারা কাজ করেন- তাদের নিয়েও সমস্যা আছে। তাদের ওপর নজরদারি করার মতো তেমন শক্ত কোন ব্যবস্থা নেই। আর কিছু কিছু দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী খারাপ আবহাওয়া- প্রবল বৃষ্টিপাত, ঝড়-বাদল। বর্ষাকালে বিমান চলাচলের জন্যে এসবও বড়ো হুমকি হয়ে ওঠে।
২০১০ সালের পর থেকে সবচেয়ে বেশি বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। তার পরেই রাশিয়া, ক্যানাডা, মেক্সিকো এবং ইন্দোনেশিয়া। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিকভাবে যেসব রুট ব্যবহৃত হয়, বিশ্বের মধ্যে সেগুলোই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত। এই পথে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিমান চলাচল করে আর একারণে সেখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে বেশি।
এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে রাশিয়াতে, ৫৩২। তারপরেই ইন্দোনেশিয়া, যেখানে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫২০ জন। এই দুটো দেশে বিমান যাত্রীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের সংখ্যাও।
গত ১০ বছরে রাশিয়াতে বিমান-যাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে আর ইন্দোনেশিয়াতে বেড়েছে চার গুণ। এই একই সময়ে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে দুর্ঘটনায় যতো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, একই সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে নেপালেও। এই দুটো দেশেই এই ১০ বছরে ১৮০ জনের মতো নিহত হয়েছে।
নেপালেও বিমান দুর্ঘটনার জন্যে এর ভূ-প্রাকৃতিক কারণকে দায়ী করা হয়। বিমানবন্দর এমন একটি জায়গায় যেখানে পাহাড় কাটিয়ে রানওয়েতে অবতরণ করা অনেক সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও দুর্বলতা আছে নেপালে। এসব স্বত্বেও দেশটিতে বিমান-যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
যাত্রীর সংখ্যা গত কয়েক বছরে হু হু করে বেড়েছে। ডিআরসির চাইতেও নেপালে যাত্রীবাহী বিমানের সংখ্যা তিনগুণ বেশি। সারাবিশ্বে যতো বিমান চলাচল করে তার মাত্র শূন্য দশমিক এক শতাংশ বিমান চলে ডিআরসিতে। অর্থাৎ বিশ্বে এক হাজার বিমান থাকলে এই দেশে বিমান আছে মাত্র একটি। কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে মোট বিমান দুর্ঘটনার চার শতাংশই ঘটেছে এই দেশে। একারণে এই দেশটির বিমান ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশেই আসা নিষিদ্ধ কিম্বা সীমিত।
আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলোতেও বিমান চলাচল খুব একটা নিরাপদ নয়। আফ্রিকার আরো ১৩টি দেশ ছাড়াও এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার কিছু দেশের বিমানও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওঠা-নামার ব্যাপারে কঠোর বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়।
ডিআরসির জন্যে সবচেয়ে খারাপ বছর ছিল ২০০৭। ওই এক বছরেই আটটি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সেসময় একটি বিমান রাজধানী কিনশাসায় রানওয়ে থেকে বাইরে ছুটে গিয়ে একটি বাজারের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় ২৩৭ জন নিহত হয়।