কোদালা বনবিট থেকে কোটি টাকার গাছ পাচার

4

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের কোদালা বিটের সংরক্ষিত বনে সপ্তাহ ধরে প্রভাবশালী কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে দিনের বেরায় গাছ কাটার আধুনিক যন্ত্র দিয়ে শতাধিক মূল্যবান সেগুন গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এসব গাছের আনুমানিক মূল্য প্রায় কোটি টাকা। এই বনবিটের বাকী সেগুন গাছগুলোও যে কোনো সময় কেটে পাচার করে দিতে পারে সিন্ডিকেটটি।
গত সপ্তাহব্যাপী গভীর সংরক্ষিত বাগান থেকে ৫-৬ জনের একটি কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট এসব মহামূল্যবান সেগুন গাছ কেটে নিলেও সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ ছিল রহস্যাবৃত অন্ধকারে। তবে কোটি টাকার শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার পর বনবিভাগের সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভেঙেছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শীতল পালের নেতৃত্বে উই বনবিটের কেটে নেয়া গাছের স্থান পরিদর্শন করেন। এসময় শতাধিক বড় আকারের সেগুন গাছ কাটার মোথা (অবশিষ্টাংশ) তারা দেখতে পান। সংরক্ষিত বাগান থেকে এভাবে গাছ কাটার কারণ ও দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করতে কোদালা বনবিটের দায়িত্বে থাকা নবীন কুমারকে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেটটি বন বিভাগের কতিপয় কর্তাদের ম্যানেজ করেই বাগান থেকে কোটি টাকার সেগুন গাছগুলো কাটে।
বন বিভাগ ও এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের কোদালা বিটের ফুইট্টাগোধা গভীর সংরক্ষিত বনে গত ১ সপ্তাহ ধরে হোছনাবাদ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তাপুর এলাকার প্রভাবশালী কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট গাছ কাটার কাজটি করে। গাছগুলো গভীর জঙ্গলে হওয়ায় স্থানীয়রাও টের পাননি। পরে এলাকার মানুুষ জানার পর স্থানীয় বন বিভাগের টনক নড়ে। তবে খোদ কোদালা বনবিটের কর্তাদের আগে গাছ কাটার তথ্যটি জানতে পারে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এভাবে শত বছরের অধিক বয়সী সেগুন গাছগুলো কাটার ক্ষেত্রে পাচারকারী সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করেছে বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা- এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের।
কোদালা বন বিট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের কোদালা বিটের ৩৩৩ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ৫৫০ টির বেশি শতাধিক বছরের প্রাচীন বনায়নকৃত সেগুন বাগান এখন প্রতিনিয়ত বন খেকোদের পেটে চলে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানান, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে বন বিভাগকে ম্যানেজ করেই বিশাল বিশাল সেগুন গাছ কেটে পাচার করছে কয়েকটি গাছ পাচারকারী প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। কোদালা বন বিটের একশ গজ দূরত্বের সেগুন বাগান থেকে এসব মূল্যবান গাছ কেটে নিলেও বন বিভাগ না জানার ভান করছে। তাদের সহায়তা ছাড়া কেউ গাছে হাত দেয় না। গত মাসেও কোদালা বনবিটের পাশ থেকে ৫টি বিশাল সেগুন গাছ কেটে পাচারের জন্য রদ্দায় পরিণত করে। সকালে এসব কাঠ নিয়ে যাওয়ার সময় জানাজানি হলে বন বিভাগ এগুলো জব্দ করতে বাধ্য হয় এবং বন আইনে মামলা করে।
রাতে বৃষ্টি হলে বাগানের কোনো না কোনো এলাকা থেকে সেগুন গাছ কর্তন করে কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট। গাছ কাটার পর গাছের অবশিষ্টাংশ কেউ যাতে খুঁজে না পায় তা নীচ থেকে শিকড় পর্যন্ত উপড়ে ফেলা হয়। ফলে বন বিভাগ দায়সারা ভাবে কোনো গাছ কাটা হচ্ছে না বলে প্রতিবেদন দেয়।
কোদালা বন বিট কর্মকর্তা নবীন কুমার ধর জানান, জনবল সংকটের কারণে গাছ কাটা যাচ্ছে। বিশাল বন রক্ষায় আমিসহ মাত্র ২ জন (এফজি) বন প্রহরি রয়েছে এ বিটে।
কাঠ পাচারকারীদের সাথে সখ্যতার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি গ্রæপ ষড়যন্ত্র করছে। আমি কেমন আমার বন বিভাগ জানে। আমি গত মাসে বদলী হয়েছি এ বিট থেকে। আমাকে বদলীকৃত স্টেশনে যেতে দিচ্ছে না।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শীতল পাল সংরক্ষিত বাগান থেকে গাছ কাটার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা গাছ কাটা এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০টি সেগুন গাছের মোথা দেখতে পেয়েছি। আমরা এগুলোর সিজার লিষ্ট করেছি। কিভাবে এতোগুলো গাছ কাটা গেছে এবং কেটে ফেলা এসব কাছ উদ্ধারে বিট কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিন বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) শফিকুল ইসলাম জানান, বাগান থেকে কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট কর্তৃক কর্তনকৃত সেগুন গাছগুলো উদ্ধারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গাছ কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ সকল প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন সংরক্ষক (সিএফ) বিপুল কৃষ্ণ দাশ জানান, আমরা কোদালা বন বিটের প্রাচীনতম সেগুন গাছ আর যাতে কাটতে না পারে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।